81 বার দেখা হয়েছে
"বাংলা গল্প" বিভাগে করেছেন

গল্পঃ- 

 ভয় 

১.

 ইদানীং রাতের বেলা খুব ভয় পাই! ভূতের ভয়! রাত যত গভীর হতে থাকে, রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এই ভয়ও। দুরুদুরু কাঁপতে থাকে বুক। এক সময় এমন মনে হয়, যেন হৃদপিণ্ডের সাথে কাঁপতে থাকে শরীরটাও। কেন এমন হয়- কিংবা কেনই বা এত ভূতের ভয় পাই রাতের বেলায়- কিছুই বুঝে উঠতে পারি  না। খুঁজে পাই না তার কোনো কারণ।

  প্রত্যেক মানুষই ভয় পায়। ভূতের ভয়। তবে তা ছোটবেলায়। মানুষের বয়স বাড়তে থাকে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে ভয়। বাড়তে থাকে সাহস। একটা সময় মানুষ সমস্ত ভয় কাটিয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে দুঃসাহসী। বড় হয়ে গেলে বা বয়স হয়ে গেলে ভূতের ভয় তো একটা সময় নিজের কাছে হাস্যকর হয়ে ওঠে। কাল্পনিক মনে হয়। আমারও এমনই হওয়ার কথা। এমনটা তো হয়েছিলও। ভূতের ভয় ছিটেফোঁটাও ছিলো না মনের ভেতর। একদমই ভয় পেতাম না। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন এমন হচ্ছে ইদানীং! দৃশ্যপট পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছে। রাত হলেই ভয় পাই। ভূতের ভয়। কি আশ্চর্য! আমি কি ছোট মানুষ! নাকি দিনদিন ছোট হয়ে যাচ্ছি ভেতরে ভেতরে! 

 চোখটা বন্ধ করলেই মনে হয়, আমার ঠিক পাশেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আমার উপর মাথা এনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হয় যেন আমার মুখের ঠিক উপরে তার মাথাটা! দুই হাত গ্যাপ মাত্র। ইচ্ছে করলেই আমি তাঁকে ছুঁয়ে দিতে পারবো। ঠিক আমার মুখের উপরে তার মাথাটা থাকায় ডিম লাইটের আলো এসে পড়ছে না আমার মুখের উপর। বরং ছায়া পড়ছে। তার মাথার ছায়া!  হঠাৎ প্রচণ্ড ভয়ে আত্মাটা শুকিয়ে যায় যেনো। তড়াক করে চোখ খুলে ফেলি আমি। কিন্তু না! কেউই নেই আমার পাশে। যেনো মুহুর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কোথায়ও কিছু নেই। কেউ নেই! চতুর্দিকে কেবল নিঃশব্দ রাতের সুনসান নীরবতা! 

  কেন এমন হয় আমার? কেন এতো ভয় পাই আমি রাতের বেলায়! আসলে প্রত্যেক মানুষই ছোট বেলায় ভয় পায়। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ভয়ও দূর হয়ে যায়। ভয় দূর হয়ে যায় ঠিক- তবে  একেবারে দূর হয় না। মানুষের অবচেতন মনে এই ভয়টা এক চিলতে পরিমাণ থেকেই যায়! মাঝেমাঝেই এই ভয়টা বের হয়ে আসে! প্রাচীন আগ্নেয়গিরির সুপ্ত লাভার মতো- ধীরে, খুব ধীরে ধীরে এই ভয়টা বেরিয়ে আসে। কারও কারও বেলায় এটা খুব অল্প সময় থাকে - হঠাৎ করে আসে আবার হঠাৎ করেই চলে যায়! কিন্তু কারও কারও বেলায় এই ভয়টা হঠাৎ করে এলেও হঠাৎ করেই আবার চলে যায় না! অনেকটা সময় থাকে এবং নানান সমস্যা তৈরী করে! আমার বেলায় কোনটা হচ্ছে! নির্ঘাত দ্বিতীয়টাই হচ্ছে! তা না হলে প্রতিরাতেই একই ভয় কেন মনের ভেতর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসবে! 

২.

  আমার শোবার ঘরটি আমাদের ফ্ল্যাটের অন্যান্য ঘরগুলো থেকে বলতে গেলে একেবারেই ছোট। দক্ষিণ-পূর্ব কর্ণারে।  উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে জানালা আছে। উত্তর দিকের জানালা সব সময় খোলা থাকলেও তার পর্দাটা সব সময় ছড়ানোই থাকে। কারণ উত্তর দিকে নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ হচ্ছে। ওখানে সব সময় শ্রমিকদের আনাগোনা। পর্দা গুটানো থাকলে আমাদের ঘরের সবকিছুই দেখা যায়। তাই পর্দা কোনো সময় গুটানো হয় না। বাতাস আসা যাওয়ার জন্য জানালা চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকলেও তার পর্দাটা সব সময় গুটানো থাকে। আর দক্ষিণের জানালাটা সব সময় খোলাই থাকে। এখানে প্রচুর মশা। তাই মশা যাতে আসতে না পারে সেজন্যে জানালার উল্টোদিকে দেয়ালের এপাশ থেকে ওপাশে নেট লাগিয়ে দিয়েছি স্কস্টেপ দিয়ে। দক্ষিণ দিকে একটি বারান্দাও আছে। বারান্দার ওপাশে কোনো বিল্ডিং নেই। পুরাতন একটা টিনের স্কুলঘর আছে। জায়গাটা একেবারে ফাঁকা না। বেশ গাছগাছালি আছে। সবগুলো গাছই বেশ বয়সী। দুটো বড় কদমফুল গাছও আছে। বারান্দার বাঁ পাশটা নানানজাতের গুল্মলতায় বেশ ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। রাতের বেলায় খুব বেশী না হলেও অনেকটা ভূতুড়ে পরিবেশ মনে হয়। 

  আমার শোয়ার খাটটা উত্তর দক্ষিণ করে বিছানো। দক্ষিণ দিকের জানালাটা খাটের সাথেই। জানালার ওপাশে বারান্দা। শোয়ার সময় উত্তর দিকে মাথা দেই। সে হিসেবে বারান্দাটা থাকে পায়ের দিকে। নিস্তব্ধ রাতে তাই শুয়ে শুয়েই উপভোগ করা যায় হাজার লক্ষ গ্রহের ভীড়ে মানুষের বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ ছোট্ট এই পৃথিবীর রাতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, নিকষকালো অন্ধকার। কিন্তু আমার জন্য এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেনো প্রতি রাতে যম হয়ে দাড়াঁয়। কেন এমন হয় আমার সাথে? আগে রাতের অন্ধকার খুব উপভোগ করতাম। বারান্দার জানালা দিয়ে নিকষকালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এখনও তাকিয়ে থাকি। কিন্তু হঠাৎ করেই কোত্থেকে যেন জগদ্দল পাথরের মত বুকের উপর ভয়টা চেপে বসে! 

  গরমের সময় রাতে খুব গরম পড়ে। তাই বারান্দার দরজাটা খোলা রেখেই ঘুমাই। দরজাটা পায়ের সাথেই। রাতে খেয়েদেয়ে বিছানায় যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়। তারপর বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করি শুধু। ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করি বারবার। ঘুম আসে না। ফোসবুকেই একবার পড়েছিলাম রাতে ঘুম না আসার কারণ। রাতে মোবাইল চালালে স্ক্রিনের নীল আলোতে মস্তিষ্কে এক ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। এক ধরনের রস বের হয়। এতে ঘুমে প্রবলভাবে ব্যাঘাত ঘটায়। নিয়মিত এমন হলে রাতের ঘুম উড়ে যায়। এমনও হয়- মাথার আশেপাশে বিছানায় মোবাইল থাকলেই হলো- ভালো ঘুম হয় না, ঘুম আসে না। আমার এমন হলো কিনা কে জানে। ইয়া আল্লাহ্! মাফ করো! 

৩.

 ক্রমে রাত গভীর হয়। মাঝ রাত পেরিয়ে যায়। সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে যেনো ভয়টাও বাড়তে থাকে। এক সময় মোবাইল রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ঘুম আসে না। বার কয়েক উঠি। বাথরুমে যাই। ভালো করে পা ভিজিয়ে আসি। কোথায় যেনো পড়েছিলাম- রাতে ঘুম না এলে পা ভিজিয়ে এলে নাকি মাথা ঠাণ্ডা হয়। ঘুম আসে তাড়াতাড়ি। কিন্তু ঘুমের দেখা নেই। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি। হঠাৎ মনে হয় পুরো ঘরজুড়ে কে যেনো হাঁটছে। নিঃশব্দে হাঁটছে। খুব ধীরে ধীরে নিঃশব্দে শ্বাস নেয়। আধোঘুম আধো জাগ্রত আমি কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করি সেই শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ। তার পদশব্দ। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু কেমন নিরব হয়ে যায়। একেবারে পিনপতন নীরবতা। ঘড়ির টিকটিক শব্দে আবার কখনওবা নিজের হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানির শব্দেও যেনো চমকে উঠি। কিছুক্ষণ পর আবার মনে হয় কে একজন যেন খুব ধীরপায়ে হাঁটছে পুরো ঘরজুড়ে। তার নিঃশ্বাস ফেলার শব্দও শুনতে পাই। আমি জোর করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি। চোখ খুলতে চাই না। কে হেঁটে বেড়াচ্ছে পুরো ঘরময় দেখতে চাই না। জোর করে ঘুমুতে চাই। কিন্তু জোর করে ঘুমুতে চাইলেই কি আর ঘুমানো যায়! হঠাৎ মনে হয় কেউ একজন আমার ঠিক উপরে এসে ঝুঁকে পড়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মুখে ডিম লাইটের আলো পড়ছে না। তার ছায়া পড়ছে।   মাঝেমাঝে ব্যপারটা খুব স্পষ্ট মনে হয়। যেন সত্যিই কেউ একজন ঝুঁকে এসে আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকটা ধকধক করতে থাকে। হঠাৎ মনের সব সাহস নিয়ে চোখ খুলে ফেলি। কই!  নেই তো! কোথায়ও কেউ নেই। মুহুর্তেই যেনো সব হাওয়া। ডিম লাইটের আলো এসে পড়ছে মুখের উপর। আলোটা একটু বেশীই মনে হয় তখন। আমার মুখ বরাবর উপরে একটা গামছা ঝুলছে। বাতাসে নড়ছে সেটা। বাতাসে কখনও গামছাটা আমার মুখ আর ডিম লাইটের মাঝামাঝি আসছে। আবার সরে যাচ্ছে। সেটার কারণেই মাঝেমধ্যে মুখে ডিম লাইটের আলো এসে পড়ছে না, আবার ছায়াও লাগছে! কি আশ্চর্য! আর আমি কিনা ভয়ে জবুথবু হয়ে যাচ্ছি একেবারে!  আমি আবার চোখ বন্ধ করে জোর করে ঘুমুতে চেষ্টা করি। কিন্তু জোর করে কি আর ঘুমানো যায়! 

 শুয়ে শুয়ে চিন্তা করি- কেনো আমার এমন হয়! কেনো আমি এত ভয় পাই! রাত বাড়ার সাথে সাথে ভয়টাও যেন বাড়তে থাকে! কেন এমন হয়! ভয়ের তো তেমন কিছু নেই! 

৪.

  আধোঘুম আর আধো জাগ্রত থেকে বিছানায় শুয়ে থাকি আমি। মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে হাজারো চিন্তা।  সবই ভূত কেন্দ্রীক। যা ভয়কে আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। বিছানায় উঠে বসি আমি। পাশে বেঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আমার বউ। তার ওপাশে ঘুমাচ্ছে আমার ছোট্ট মেয়েটা। ওদের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি শান্তিতেই না ঘুমুচ্ছে ওরা। মাশা আল্লাহ্। আর আমার ঘুমই আসছে না! আমি কিনা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি! এই বয়সে ভূতের ভয়! লোকে শুনলে নির্ঘাত পাগল বলবে! আমি বউয়ের গা ঘেঁষে এক হাত বউয়ের গায়ের উপর তুলে দিয়ে ঘুমুতে চেষ্টা করি। কিন্তু বউ উফ্! কি গরম! ধ্যাৎ বলে হাতটা সরিয়ে দেয়। আমাকে বলে ফাঁকা হয়ে শোয়ার জন্য! কি আর করা! বাধ্য হয়ে একটু চেপে সরে আসি। এখন তো আর ছোটো নই। ছোটো থাকতে মাঝখানে শোয়া নিয়ে ভাইদের মধ্যে কতো মারামারি হতো। শেষপর্যন্ত কিনারেই শুতে হতো আমার। কিন্তু গভীর রাতে খুব বেশী ভয় লাগলে মাঝের  জনকে কিনারে এনে আমি গিয়ে মাঝখানে শুয়ে পরতাম। এখন তো এসব করার সুযোগ নেই। বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করি শুধু। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি। কিন্তু আবার ওই ভয়! অযথাই ভয়! ভয়ে চোখ খুলে ফেলি। চোখ খুলে পুরো ঘরটাতে একটু চোখ বুলাই। পায়ের উপর জানালা দিয়ে অন্ধকার আকাশ দেখি। কোনোদিন আকাশে চাঁদ থাকে আবার কোনোদিন থাকে না। যেদিন থাকে না সেদিন আকাশটা কুচকুচে কালো দেখায়। পাশে বারান্দার দরজার দিকে তাকাই। বারান্দার দরজা দিয়েও বাইরের খানিকটা অংশ দেখা যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে। হঠাৎ ভয় লাগে আবার। চোখ বন্ধ করে ফেলি আমি। চোখ বন্ধ থাকাবস্থায়ই মনে হয় বারান্দার দরজায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। তার মুখটা অস্পষ্ট। মাঝেমধ্যে মনে হয় সে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি ভয় পাচ্ছি দেখে তার হাসি পাচ্ছে! আবার কখনও বা মনে হয় মুখটা একদম গোমড়া করে রেখেছে। আমি ভয়ে কাঠ হয়ে যাই। আচমকা চোখ খুলে ফেলি তখন। বারান্দার দরজায় কেউ নেই। যেনো মনে হয় ছিলো কেউ, হঠাৎই মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়। 

৫. 

  আমি আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি। এবার শুরু হয় আরেক রকম ভয়! মনে হয়- কেউ একজন যেন বারান্দা থেকে আমার পা ধরে টান দিবে হঠাৎ করে! কিংবা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে ধরে টান দিবে। এই দিলো টান! দিলো টান! হঠাৎ করেই এর মধ্যে বাইরে কুকুরেরা দল বেঁধে খুব জোরে জোরে ডাকতে থাকে। মাঝেমধ্যে কয়েকটা কুকুর সকরুণ সুরে ডাকতে থাকে। তখন তো ভয়ে অবস্থা আরও বেগতিক। শুনেছি, কুকুর নাকি জ্বীনদের দেখতে পায়। অতিপ্রাকৃতিক অদৃশ্য প্রাণ দেখতে পায়। তখন নাকি তারা খুব ডাকাডাকি করে। খুব ঘেউঘেউ করে। তাই যখন কুকুর খুব বেশি করে ডাকতে থাকে তখন আরও বেশী ভয় পেয়ে যাই। তখন মনে হয়- জ্বীনেরা কি সত্যিই আশেপাশে কোথায়ও আছে? কুকুর যাদেরকে দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করছে! তা না হলে এত রাতে কুকুরের ঘেউঘেউ করার তো অন্য কোনো কারণ দেখি না! তাছাড়া আমাদের বা আমাদের আশেপাশের কারও কোনো পালিত কুকুরও নেই যে, রাত-বিরেতে অচেনা-আগুন্তক দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করবে! 

ভয়ে বুকটা ধকধক করতে থাকে। হঠাৎ করেই মনের অজান্তেই নিজের পা'দুটো উপরের দিকে টেনে আনি। কে জানে! সত্যিই যদি আশেপাশে জ্বীন এসে থাকে! আর হঠাৎ করে সত্যি সত্যিই যদি কেউ যদি পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে টান দিয়ে এক টানে হেঁচরিয়ে বারান্দায় নিয়ে যায়!  

  ভয়ে জমে যাই আরও। চোখ বন্ধ করে কিছুটা শব্দ করে "আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম" পড়তে থাকি বারবার। হাদীসে পড়েছি- কুকুর বা গাধার ডাক শুনলে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম পড়তে হয়। যতক্ষণ ডাক না থামবে পড়তে থাকবে। এক সময় সত্যিই কুকুরের ডাক থেমে যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই থেমে যায়। যেটা আউজুবিল্লাহ্ না পড়লে এত তাড়াতাড়ি থামতো না। এটা আমার নিজের আমল দ্বারা পরীক্ষিত আলহামদুলিল্লাহ্। যেদিন না পড়ি অর্থ্যাৎ আমলটা ভুলে যাই সেদিন একনাগাড়ে ডাকতেই থাকে কুকুরের দল। যখন ভয়ের এই প্রবলেমটা ছিলো না তখন দেখেছি এমনও হয় যে, ঘন্টাখানেকও ডাকতে থাকে একনাগাড়ে। মাঝেমধ্যে একেবারে বিরক্ত হয়ে যেতাম তখন যে, এখনও কুকুরের ডাক থামছে না কেন! হঠাৎ মনে পড়ত- আরে! আমি তো আমলটাই করি নি এখনও! রাত-বিরেতে কুকুরের ডাক  কি থামবে সহজে! সাথে সাথেই আমলটা করি আর সহসাই বন্ধ হয়ে যায় কুকুরের ঘেউঘেউ। 

   আর এখন তো ভয়ে একেবারে জমে যাওয়ার মত অবস্থা। কেন যে এমন হলো আমার! কারণ খুঁজে পাই না। নিজের উপর খুব রাগ লাগে তখন। কেন এমন হয়? কেন এতো ভয় পাই আমি রাতের বেলায়! ওই যে বললাম- আসলে প্রত্যেক মানুষই ছোট বেলায় ভয় পায়। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ভয়ও দূর হয়ে যায়। ভয় দূর হয়ে যায় ঠিক- তবে একেবারে দূর হয় না। মানুষের অবচেতন মনে এই ভয়টা এক চিলতে পরিমাণ থেকেই যায়! মাঝেমাঝেই এই ভয়টা বের হয়ে আসে! প্রাচীন আগ্নেয়গিরির সুপ্ত লাভার মতো- ধীরে, খুব ধীরে ধীরে এই ভয়টা বেরিয়ে আসে। কারও কারও বেলায় এটা খুব অল্প সময় থাকে - হঠাৎ করে আসে আবার হঠাৎ করেই চলে যায়! কিন্তু কারও কারও বেলায় এই ভয়টা হঠাৎ করে এলেও হঠাৎ করেই আবার চলে যায় না! অনেকটা সময় থাকে এবং নানান সমস্যা তৈরী করে! আমার বেলায় কোনটা হচ্ছে! নির্ঘাত দ্বিতীয়ই হচ্ছে! তা না হলে প্রতিরাতেই কেন একই ভয় মনের ভেতর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসবে! 

  তাই এখন রাতের বেলায় কুকুর একবার ডাকলেই হলো- সাথে সাথে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম পড়তে থাকি, সাথে আরও দুয়া দুরুদ, আয়তুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বারবার পড়তে থাকি আর চোখ বন্ধ করে জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকি। 

কখন যে দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে আমার, 

টের পাই না আমি! 

 

              _____♦_____

- গল্প 

- মুহাম্মাদ আবদুল হাই 

রচনাঃ- ২৭ / ৭ / ২০২১ ইং 

মেরুল বাড্ডা, ঢাকা।

করেছেন
আপনার লেখা গল্পটি পড়লাম, খুবই চমৎকার ভূতুড়ে একটি গল্প। ভয় ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। আপনার জন্য শুভ কামনা নিরন্তর। ভালো থাকবেন সব সময়। ফী আমানিল্লাহ্। 

এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে দয়া করে প্রবেশ কিংবা নিবন্ধন করুন...

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
14 জুলাই, 2020 "ব্যকরণ" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Bodrul Alom
0 টি উত্তর
0 টি উত্তর
0 টি উত্তর

37,401 টি প্রশ্ন

36,724 টি উত্তর

1,797 টি মন্তব্য

3,881 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
40 জন অনলাইনে আছেন
1 জন সদস্য, 39 জন অতিথি
এখন অনলাইনে আছেন
আজকে ভিজিট : 55256
গতকাল ভিজিট : 48831
সর্বমোট ভিজিট : 58330610
এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
...