আমি মাথা নিচু করে ফেলি এমন একটা প্রশ্নে। আমার গাল দুটো লাল হয়ে যায়। নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি। আসলেইতো, এটা আমি কি করলাম। এটা পাপ। তা ছাড়া উনি আমার ম্যাম। এই পুরো চার্চের নান উনি। নান রা কখনও বিয়ে করেনা। আর যারা বিয়ে করেও ফেলে , তারা কখনও গড ছাড়া কারো সামনে নিজেকে তুলে ধরেনা। তবে রেনাস এখনও জানে না যে, ম্যাম আসলেও নান কিনা।
রেনাসের আমন বিধ্বস্ত মুখ দেখে লেনা ম্যাম তার দুই হাত দিয়ে তার দুই গাল চেপে ধরে। মুহূর্তেই পরিবেষটা বদলে দিয়ে ম্যাম নরম স্বরে বলে, এভাবে মুখ ভার করার দরকার নেই। তবে গড দেখছে। রাতে গিয়ে মাফ চেয়ে নিবে।
রেনাস মুখ তুলে তাকায় সাহস করে ম্যামের দিকে। কিন্তু সে যখন ম্যামের চোখের দিকে তাকায়। এক অস্বাভাবিক কোন কিছু সে উপলব্ধি করতে পারে। যেটা এই নতুন যৌবনেই সম্ভব। হালকা আলোর মাঝে সে ম্যামের চোখের মাঝে এক বিশাল সাগরের উষ্ণতা দেখতে পায়। চোখ ভরা কামুকতা। শয়তান যেন রেনাসের ঘাড়ে এবার খুব ভাল ভাবে চেপে বসে। বাধা না মেনে জীবনের প্রথম উত্তাপে সে ঝাপ দেয় ম্যামের অসম্মতিতেও । একটা উষ্ণতার রাতে ডুবে যায় সব কিছু।
এভাবে পার হয়ে যেতে থাকে একের পর এক দিন,সপ্তাহ,মাস,বছর। রেনাস চলে গেছে অন্য এলাকায়। কিন্তু লেনার সাথে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে এক অন্যরকম গভীর সম্পর্ক। মাইকেল সব না জানলেও সে জানত যে রেনাস লেনা ম্যাম কে মারাত্মক পছন্দ করে। সপ্তাহের একদিনের সেই চার্চের দর্শনে সবার চোখের আড়ালে রেনাস আর লেনার চোখাচোখি হত। হয়ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্ধকার এক বিশাল হলে গিয়ে তারা মেতে উঠত নগ্নতার মাঝে। যৌবনের এই পর্যায়ে এসেও রেনাসের মনে হত যে, সব কিছু এখনও সেই নতুন দিনের মতই আছে। এতসব হজবরল এর মাঝে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দিব্বি চলছিল তাদের সব কিছু। কিন্তু সবার কাছে তাদের জীবনের পথ চলা একটা নিতান্ত সাধারন দিনের মতই। অন্যদের চোখে লেনা অনেকটা বয়স্ক হয়ে গেলেও রেনাসের চোখে ম্যাম এখনও সেই তেইশ বছরের যুবতীই রয়ে গেছে। এর মাঝে ম্যাম একদিন হঠাৎ করে রেনাসের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
একদিন যায় দুদিন যায়। সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোন যোগাযোগ নেই। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে এক রাতে লেনা রেনাস কে কল দেয়। কল দিয়ে লেনা সরাসরি বলে, খুব একা একা লাগছে, আমি হল রুমে যাচ্ছি। তুমিও সেখানে আসো।
চার্চের এরিয়া কল্পনার চেয়েও বড়। কিন্তু সেই তুলনায় ভেতরের জনসংখ্যা অনেক কম। নিজেদেরকে আড়াল করাও সহজ। আর নিরাপত্তাবেষ্টনী শুধু দেয়ালের দিকেই। ভেতরে এসব দরকার নেই। কেননা, ভেতরটা গড নিজেই রক্ষা করে।
রেনাস হাঁটতে হাঁটতে সেই হল রুমে পৌঁছে যায়। এক বিশাল হল রুম। বিশাল দরজা খুলতেই একটা কড়াত আওয়াজ। তবে এই শব্দ শুধু ভেতরেই ছড়িয়ে যায়। অন্ধকারের এক আলোতে রেনাস বুঝতে পারে যে, ম্যাম ঠিক মাঝের একটা চেয়ারে বসে আছে একা একা। মোবাইলের আলো জ্বেলে রেনাস ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে ম্যামের দিকে। কোন নড়াচড়া নেই তার। অন্যদিন রেনাস কে দেখলে ম্যাম উজ্জীবিত হয়ে রেনাস কে ডাক দেয়। আজ যেন পিনপতন নীরবতা।
রেনাস তাঁর কাছে গিয়ে একদম গা ঘেঁষে বসে। ইয়ার্কির ছলে রেনাস তাঁর মোবাইলের আলোটা যখন তাঁর চেহারার উপরে ছড়িয়ে দেয়, তাঁর বুকটা কেঁপে উঠে। এইটা সেই দাগ, যেটা আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে সে দেখেছিল লেনা ম্যাম এর মুখে। কিন্তু এই দাগের মানে টা এখন রেনাস খুব ভাল করেই বুঝে। সে হাঁটু গেড়ে লেনার সামনে বসে অস্থির কণ্ঠে তাকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে, আপনার মুখে কি হয়েছে ? কীভাবে হয়েছে এটা? আপনি চুপ করে আছেন কেন? কিছু বলেন ?
দীর্ঘক্ষণ লেনা চুপ হয়ে থাকে একটা মূর্তির মত। আচমকা সে ঝুঁকে গিয়ে রেনাস কে শক্ত করে ধরে হুহু করে কেদে উঠে। অবাক হয়ে যায় রেনাস। এর আগে সে এতো বছরেও কখনও লেনা ম্যাম কে কাঁদতে দেখেনি। আজ সে এভাবে বাঁধনহারা জলের মত কেঁদে চলেছে। রেনাস চুপ করে থেকে মাথ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শুধু।
রেনাস আস্তে করে উঠে এসে ম্যামের পাশে বসে। সে তাঁর দুই হাত ধরে লেনাকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে ম্যাম আপনার? আপনাকে এভাবে দেখে আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি। আমাকে বলবেন না আপনি ?
লেনা তখন তাঁর বাহু রেনাসের বুকের সাথে লাগিয়ে তাকে বলে, আমি বর্তমানে এই দুনিয়াতে যদি কাওকে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করি, সেটা কে জানো?
রেনাস কিছু না ভেবে বলে, জানিনা।
সেটা হলে তুমি।
এটা আমার জন্য অনেক বড় এক প্রাপ্তি। কিন্তু কি হয়েছে আপনার ম্যাম ?
লেনা উঠে জোরে করে একটা নাক টান দেয়। কেঁদে কেঁদে মুখটা আরও ফুলিয়ে দিয়েছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, জানো, বাবা হসপিটালে। মা তো বাবার অত্যাচারে সেই কবেই উপরে চলে গিয়েছে গডের কাছে। আমি বাবা হিসেবে কখনও আমার বাবাকে গালি দিব না। তিনি বাবা হিসেবে ছিলেন একজন যোগ্য বাবা। কিন্তু স্বামী হিসেবে? আমি কখনই তাঁকে পারফেক্ট স্বামী বলবনা। একজন অসহায় এতিম খ্রিস্টান পাকিস্তানী পরিবারের মেয়ে ছিলেন আমার মা। সুন্দরীর তুলনা হয়ত কখনও মা মরিয়মের মত হবেনা। তবে মরিয়মের পরে যদি কেও হয়, সেটা আমার মা হবে। আমি সেই নয় বছর থাকতে মাকে হারিয়েছিলাম জানো। কোন এক্সিডেন্টে না। হার্টের যন্ত্রণায় মারা গিয়েছিলেন তিনি। কারণ দুনিয়াতে আমি আর বাবা ছাড়া তাঁর কেও ছিলইনা। আমার থেকে কোন কষ্ট পেয়েছে কিনা জানিনা, কিন্তু বাবার অবহেলা আর নির্যাতনে নিজেকে সে আর বেশী দিন দুনিয়াতে রাখতে পারেননি। মান অভিমান নিয়ে চলেগেছিলেন। কিন্তু বাবা বদলেছিলেন কি ? তবুও বদলায়নি। আমি ধীরে ধীরে মা হারানোর কষ্ট বুঝতে পারতাম। এই জন্য নিজেকে এদিকেই রেখে দিয়েছি। নিজেও ডুবে আছি পাপের জগতে। যদি একটুখানি পাপমোচন হয় আমার। বাবা এক বড় ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। জীবনে আরও এক মাত্রার যন্ত্রণা আমার মায়ের মত আমারও শুরু হল। বাবা থাকে অন্য দিকে। আমি থাকি অন্যদিকে। আর আমার স্বামী ? যৌনসংগম এর সঠিক ব্যাখ্যা হয়ত সে জানেই না। মাতালের আর স্বাভাবিক কি থাকবে বল ? জীবনের সুখের কোন পর্ব ছিলই না। আলাদাই থাকতাম। সেও ছিল তাঁর মতই। কেও কারো ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটতাম না। কিন্তু যেদিনই নিজে একটু সরল হয়ে স্বামীর একটা পাঠ চোকাতে যাব, সেদিনি ফিরে আসতে হত ব্যাথার শরীর নিয়ে।
লেনা ম্যাম কান্নায় ভেঙ্গে পরে। আমি এই অন্ধকারের মাঝেও একপলক তাকিয়ে আছি ম্যামের দিকে। কিছুই বলার নাই। বুকের ভেতরে এখনও হাজার কথা। আঁটকে আছে এক দলা ইটের মত। না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে। আমি আস্তে করে বুকের মাঝে টেনে নিলাম। দুঃখ থাকে অনেকের। কিন্তু এই ছোট জীবনে কখনও কারো এমন দুঃখের কথা শুনিনি। বুঝ হওয়ার পরে ম্যামের জালে আঁটকে ছিলাম। যে কোন প্রয়োজনে সব সময় ছিল চার্চ। আর এসব যে মানুষের জীবনে হয়, টা একদম অজানা।
ম্যাম কেদেই চলেছে বুকে অঝোরে। আমি তখন ম্যামের কানে কানে বললাম, পা টা একটু মেলে দিন। আমার বুকে মাথা দিয়ে একটু শুয়ে থাকেন। ভাল লাগবে আপনার।
কথাটা বলা মাত্রই ম্যাম পায়ের জুতা ফেলে পা লম্বা করে আমার বুকে মাথা রেখে বাম হাত দিয়ে খামচে ধরে থাকে আমার শার্ট। যেন একটা ছোট বাচ্চা। অথচ আর কয়েকবছর পরে মধ্যবয়সে চলে যাবে। পড়াশোনা আর কিছু অভিজ্ঞতার মাঝে এটাই বুঝলাম যে, কাছের মানুষের আদর বা বিশ্বাসের কাছে যে কেও শিশু হয়েই যায়। সে যত বয়সের অধিকারী হোক না কেন।
আমি মাথার চুল কিছুটা মুঠি মেরে ধরে টেনে আস্তে আস্তে বললাম, আমার উপরে বসবেন দুই পা ছড়িয়ে?
আমার কিছুই ভাল লাগছেনা রেনাস। কিছুই না। এখন একটু বুকে থাকতে দাও।
সারা রাত আমার এভাবেই কেটে গেল সেদিন। ম্যাম আমার বুকেই ঘুমিয়ে গেছিল। যেন কত দিনের ঘুম বাকি তাঁর। এদিকে কেও আসার সম্ভাবনাও নেই। তাই কোন চিন্তাও নেই। আমিও বসে থেকে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ঘুমচ্ছিলাম। ম্যামের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সে তখন উঠে গিয়ে পাশে বসে বলে, আমি যে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা। তুমি ডাকোনি কেন আমাকে?
আপনার এই আরাম আমি কেন নষ্ট করব বলেন?
আচ্ছা এখন তুমি আমার বুকে আসো। মাত্র ভোরবেলা। একটু ঘুমিয়ে নাও আমার কাছে।
আমি ম্যামের ঊরুতে মাথা রাখতেই বললাম, একটু ঠোঁট দিবেন ?
রেনাস, সব সময় কি দুষ্টামি লেগেই থাকে মাথায় ?
আচ্ছা লাগবেনা।
আমি কথাটা বলে বাম দিক হয়ে তাঁর পেটের ভেতরে মুখ গুঁজে দিলাম। ম্যামকে কিছু কিছু মুহূর্তে বুঝা বড্ড মুশকিল। সে আমার মুখ ঘুরিয়ে আস্তে করে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ভেতর থেকে যেন সব টেনে নিচ্ছিল। জিহ্বাটাও ভিজিয়ে দেয় তাঁর মুখের রসে। ঠোঁট সরানোর পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম, চাইলাম দিলেন না। আবার নিজেই ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন?
তোমাকে আমি আগেও বলেছিলাম। আমার কাছে এসব চাইবানা। নিজেই নিয়ে নিবা। মুড খারাপ থাকলেও কখনও মানা করব না। কিন্তু আমার লজ্জা লাগে চাইলে রেনাস। এতো কিছু বুঝ, এটা বুঝনা না কেন। এখন ঘুমাও । কথা বন্ধ।
এর পরে কেটে যায় আরও কয়েকবছর। ম্যাম কে সেই চেহারায় আর সেই ক্রন্দসী অবস্থায় আর কখনও দেখিনি। জীবনটা সুন্দর। আমি হয়ে গেলাম শেষ পর্যন্ত চার্চের একজন বড় মাপের ডাক্তার। শুধু সময়ের ওভাবে মাঝে মাঝে লেনা ম্যাম এখন নিজেই আমার উপরে রেগে যায়। আর আজ সেই রাগ ভাঙ্গাতেই নিয়ে এসেছি এক নির্জন জায়গায়। যেখানে পাহাড়ের একটা জায়গা ভাড়া নিয়ে হোটেলের মত থাকা যায়। পেছনের ছোট স্মৃতি শেষে আবারও ম্যামের নিচে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।
লেখক: আহিল আহমেদ
#চলবে_________________