তাছাড়া রেনাস এখনও জানেইনা যে, তাঁকে উইল করা হয়েছে। আমি চাই, সে না জানার আগে কিছু একটা করে ফেলতে। সে জানলে আমার জন্য অনেক বড় একটা বাধা হবে।
এতো কিছু শুনে আমি ঠিক কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। কিছু একটা বার বার বলতে চাচ্ছি। কিন্তু পরিবেশ আমাকে যেন দম আঁটকে ফেলছে রেনাস।
রেনাস তখন মাইকেলকে জিজ্ঞেস করে, তাহলে সেই সাদা কাপড়ের লোকটা কে?
তখনও জানতে পারিনি। এমন কি, এখন পর্যন্ত জানিনা। আজ এতো সপ্তাহ চলে গেল।
এতো সপ্তাহ মানে? কয় সপ্তাহ গেছে?
তিন সপ্তাহ।
মাইকেলের এমন কথা শেষে পুরো ঘোর নিশ্চুপ হয়ে যায়। বাহিরের সাগরের পানির আছড়ে পড়া শব্দ ছাড়া আর কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। রেনাস অনেকক্ষণ মাইকেলের দিকে তাকিয়ে থেকে আসতে করে বিছানার এক কোণে এসে বসে পা ঝুলিয়ে দিয়ে। দুই হাতে ভর দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে মাইকেল কে বলে, তারপরে কি হল?
সাদা আবৃত লোকটা তখন বলে, এই শহরে আপাতত একটাই গ্যাং আছে ভয়ঙ্কর। হলঙ্কা এলাকার নাম করা বাইকার গ্রুপ। তাদেরকে টাকা দিলে কাজ করবেনা এমন কোন কাজ নাই। কিন্তু তাদের শর্ত একটাই। তারা ব্যাকাপ চায়।
ম্যামের স্বামী তখন মাথা উঁচু করে বলে, কোন চিন্তা নাই। লাস্ট ব্যাকাপের জন্য মাইকেল আছে। কি মাইকেল? ক্যাশ দিব এখন ?
আমি তখন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলি, আমাকে কি এসবের মাঝে জড়িত হওয়া অনেক জরুরী?
সাদা কাপরে আবৃত লোকটা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে, আমরা বিশ্বস্ত লোক চাই। আমার জানা মতে তুমি ছাড়া আর কেও নেই। আর বন্ধু বেঁচে থেকে লাভ কি? সে কি সারা জীবন তোমাকে পুষবে? তোমার কোন উপকারে আসবে ? কোন লাভ নেই। অর্থ সম্পদ কামাই কর। নিজের জীবনের চিন্তা কর। আর আমি মাত্র দুটো জীবনের কথা ভাবছি। অথচ এদেরকে সরিয়ে দিলে কত জীবন বাচবে সেটা তুমি জানো ?
মুখ বন্ধ হয়ে গেল আমার। আমি একবার সাব্রিনার দিকে একবার ম্যামের স্বামীর দিকে তাকাচ্ছি। পুলিশ চিফ তখন আমাকে বলে, রাজি হয়ে যাও মাইকেল।
মাথায় তখন আমার কি চলছিল আমি জানিনা। আমি তখন নিয়ন্ত্রণহীন ঠোঁট দিয়ে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম, কি করা লাগবে আমার?
ম্যামের স্বামী পাশে থেকে একটা ব্রিফকেস তুলে আমার সামনে রাখে। ঠক করে খুলে আমার দিকে এগিয়ে বলে, ছোট একটা কাজ মাত্র। সব সামলাবে সাব্রিনা। তুমি থাকবে তোমার অফিসেই। শেষ কাজ করবে তোমার টিম আর সাব্রিনা। সাব্রিনা সাময়িক ভাবে ট্রান্সফার হবে তোমার ইউনিটে। কীভাবে হবে সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। শুধু ফাইল ক্লিয়ার করে দিবে। এটাই শুধু। তুমি এখন যেতে পারো।
চলে যাবো ?
হ্যাঁ , এখন তুমি গিয়ে রেস্ট নিতে পারো। যেহেতু এটা তোমার জন্য অনেক বড় ধকল। আর হ্যাঁ, বণ্ড গুলো কিন্তু অরিজিনাল। তুমি চাইলে এখনি ক্যাশ করে নিতে পারো। কাজ শেষে তোমার জন্য পাঁচ ভাগ শেয়ার থাকবে। আর পরবর্তী পরিকল্পনা তোমাকে আমরা জানাবো। তো আমার গল্প শুনবেনা?
আমি চেয়ারের উপরে দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম অধিক আগ্রহের মন নিয়ে।
ম্যামের স্বামীর কোম্পানিতে অনেক দিন ধরেই সে অনুপস্থিত। তবে সে এতদিন ভেবেছিল যে লেনা মারা গেলে সেদিন সে সব কিছুর মালিক হয়ে যাবে উইল অনুযায়ী। তাছাড়া কাগজে কলমে এখনও সে লেনার স্বামী। তবে তাঁকে যে বাচিয়ে রাখবে এতদিন সেটাও তার ইচ্ছা ছিল না। খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে মেরে ফেলার ইচ্ছেতাই ছিল। পদক্ষপ নেওয়ার আগেই জানতে পারে তোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা। আরও পাকাপোক্ত হয়ে যায় ব্যাপারটা, যখন উকিল এসে জানায় যে তুই সম্পদের উত্তরাধিকার হিসেবে উইল হয়ে গেছিস। মারাত্মক একটা হিংসে কাজ করে। তোর বয়স কম। এই বয়সেই এতো বড় কম্পানির আর এই ট্রাষ্টের মালিক কিনা তুই। তবে তার মাথায় কি এমন পরিকল্পনা ছিল সে সেটা বলেনি। আচমকা সে একদিন লেনার কাছে খবর দেয় যে, স্বামী মারা গেছে। তবে লেনাকে এমন ভাবে তার লোকেরা নিয়ে গেছিল যে, লেনা অন্য দিকে তেমন খোঁজ নিতে পারেনি। তাছাড়া ম্যাম তোকেও জানিয়েছিল। আর তুই জানিয়েছিলি আমাকে। আমি জানিয়েছিলাম সাব্রিনাকে। এভাবে জেনেছে সবাই। কিন্তু ম্যামের পরে জেনেছিলি তুই। পরে যা বুঝলাম, এই চেইনটাকে ম্যামের স্বামী পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিল। সম্পর্কের চেইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। যেটা জানার জন্য সহজ কোন পদ্ধতি কাজে লাগেনা। কিন্তু সে যে অন্যদিকে জীবিত ছিল সেটা অন্যরা সবাই জানে। একটা ছোট নাটক দিয়ে তোদেরকে বুঝানো হয়েছিল যে সে মারা গেছে।
গল্প শেষ হয়ে গেল। আমি ব্রিফকেস নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। যত হাঁটছি সামনের দিকে, বার বার মনে হচ্ছিল সেই মুহূর্তে যে, আমার চেয়ে খারাপ কেও আর এই দুনিয়াতে নেই। একবার ইচ্ছে করছিল তোকে ফোন করে ডেকে নিতে কোন এক জায়গায়। একবার ইচ্ছে করছিল আচমকা প্লেনের টিকেট কেটে তোদের দুজনকে তোর মামার কাছে পাঠিয়ে দি। কিন্তু শেষে ভাবলাম, তারা আমাকে আবার জানাবে। আমিও এর মাঝে নিজেকে একটু গুছিয়ে নি। তোদের সাথে আমিও চলে যাব।
আমি সেই রাতেই মালটা চলে আসলাম। তবে বুঝেছিলাম যে, তারা আমাকে এতটাও বিশ্বাস করেনা। পেছনের একটা গাড়িকে সেই এয়ারপোর্টেও দেখেছিলাম। যদি এই পথে আমাকে অনুসরণ করে, তাহলে আমাকে যে চারিদিকে ঘিরে রাখেনি টা হতেই পারেনা। আমি আর তোকে ফোন দি নি। পরের দিন কাটে আমার নির্ঘুমে। বণ্ড ভেঙ্গে এই বীচ হাউজ কিনি। বর্তমানে এখন যেখানে তুই আছিস।
রেনাস অবাক হয়ে যায়। সে বিস্ময়কর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, আমি এখন কোথায় আছি?
মালটা।
মালটা? মানে ? তুই আমাকে কতক্ষনের জন্য অজ্ঞান করেছিলি।
যতক্ষণের জন্য জরুরী ছিল।
রেনাস কোন কথা আর জিজ্ঞেস করতে পারেনা। সে শুধু তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সে দেখে যে মাইকেল মুঠি মেরে মুখটা কেমন যেন কাচুমুচু করে নিল। রেনাস বুঝতে পারে এই মুখতার দৃশ্য। সে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে ?
ভালোবাসা কঠিন জিনিস অনেক। বিশ্বাস করলেও শেষ হয়ে যাবি। নিজেকে ভালবাসার মাঝে ডুবিয়ে দিলেও তোর ডুবে মৃত্যু হবে। রেনাস মাইকেলের মুখে এই কথা শুনে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে যায়। তার কাঁধের উপরে এক হাত দিয়ে ভর দিয়ে বলে, কেন কিয়ারার কি হয়েছে?
আমি মালটার সব কাজ শেষে ফিরছিলাম সেদিন জার্মানিতে। ফ্লাইটে উঠার আগেই একটা মেসেজ পাই আমি ।
কোথাই তুমি ?
আমি শুধু বললাম , এখন বিমানে উঠছি। নেমে কল দিব।
কিন্তু আমি জানতাম না যে এটাই আমাদের কাল হবে। আমি বিমান থেকে নামতেই সাব্রিনার কল পাই। সাব্রিনা আমাকে কল দিয়ে বলে, গাধার ডট। মালটা কি করতে গেছিলা, আমরা অবিশ্বস্ত হতে চলেছি। তোমাকে আমাকে জানানো ব্যাতিত তারা পদক্ষপ নিতে চলেছে। আর আজকেই হয়ত ম্যাম রেনাস কে নিয়ে কোর্টে যেতে পারে অন্য এক কাজে। উইল থাকলেও এমনও হতে পারে আজকে অফিশিয়ালি মালিক করে দিতে পারে তাঁকে। আর এটা ম্যামের ল'য়ার জানিয়েছে।
কি যা তা এসিব ? তারা কি পদক্ষপ নিবে।
কাল রাতে ম্যাম আর রেনাস হিল পোর্টে গেছে। এখন তারা কি করবে তারাই জানে। যেহেতু তুমি নাই, টেম্পোরারি ফাইল আমাকেই করে দিতে বলেছে।
কিন্তু তারা করছেটা কি ? আর তারা হিল পোর্টে গেছে তুমি কি করে জানলে।
এর বেশী কিছুই বলতে পারবোনা।
সাব্রিনা কল কেটে দেয়। সব ফোন বন্ধ পাই। তোকে কল দি ঢোকে না। ম্যামের নাম্বার নেই। শহরে আসার লাস্ট ফ্লাইট মিস করেছি। বাস বা ট্রেন শেষ বিকল্প। পৌছাতে লেগে যাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা। তবুও মনের ভরসা নিয়ে চললাম । সত্যি বলতে আমি কখনই চাইনি তোদের কিছু হোক। আমি দুর্নীতি করি আমার ব্যাক্তিগত স্বার্থে। এখানে তোদেরকে জড়াব না আমি। বার বার গডকে বলছিলাম, যেন তোদের কে শেষ রক্ষা করতে পারি। কিন্তু আমি যখন পৌছাই তখন প্রায় রাত দশটা। মেডিকেলের সামনে আসতেই দেখি অসংখ্য মিডিয়া আর পুলিশের টহল। মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। দাঁড়িয়ে যে তাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করব, সেটাও ইচ্ছে ছিল না। ছুটে চললাম আমার চেম্বারে। পৌছাতেই শুনি তোরা দুজন এক্সিডেন্ট করেছিস। কোন কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারিনি তখনও। সাব্রিনা আমকে একটা ফাইল ধরিয়ে বলে, এই দুইটা ফাইলের ঘোষণা দিয়ে আসো। এক কোথায় শেষ, মার্ডার না এটা। এটা একটা এক্সিডেন্ট।
আমি হাত থেকে কাগজ নামিয়ে বললাম, কীভাবে মারা গেল?
সময় নাই বেশী। আগে মিডিয়াকে স্টেটমেন্ট দিয়ে আসো। রেনাস কই? আমি তাঁকে না দেখে যাবো না।
মাইকেল, জোরাজুরি একদম পছন্দ হচ্ছেনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হবে।
রেনাস কোথাই?
সাব্রিনা দাঁত কটমট করতে করতে আমাকে তার পেছনে পেছনে নিয়ে গেল। তুই তখন অক্সিজেনে ছিলি। তাৎক্ষণিক ভাবে বুঝা গেছিল তুই ইঞ্জুরি কিছুটা কম হয়েছিস। কিন্তু তোকেও রাখবেনা ।
আমি চোখ রাঙিয়ে সাব্রিনার এপ্রোনের কলার দুই হাত দিয়ে খামচে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, লেনা ম্যামের কি হয়েছে?
মাইকেল তুমি এভাবে কেন কথা বলছ? তোমাকে আমি বুঝতে পারছিনা?
যা বলছি তার উত্তর দাও সাব্রিনা।
আমি জানিনা সম্পূর্ণ। তারা অন্য এক রাস্তা দিয়ে ফিরছিল শহরে। আগে থেকেই তাদেরকে ট্র্যাক করা হচ্ছিল। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আর এইসুযোগে তারা মেরে ফেলে ট্রাক দিয়ে বাইকার গ্রুপের দ্বারা। কিন্তু তার আগে তারা ম্যামের গাড়ির মেইন ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছিল। মেডিকেলে আনতেই ম্যাম প্রায় শেষ অবস্থায় ছিল। বাহিরের এক টিম এসেছিল পর্যবেক্ষণের জন্য। ফাদারের অনুমতিতে সব হয়েছে। আমি আর কিছুই জানিনা মাইকেল। তারা কাজ শেষ চলে গেছে। কিন্তু লেনা ম্যাম।
হ্যাঁ ম্যামের কি হল?
তারা মেরে ফেলেছে।
মাইকেল সাব্রিনাকে দূরে ঠেলে দেয় ধাক্কা দিয়ে। মাইকেলের এমন আচরণ দেখে সাব্রিনা বলে, তুমি এভাবে বদলাচ্ছ কেন? তুমি কি কন্টাক্ট নাওনি? কিছু করনি, তবুও এতো মিলিয়ন ইউরো নিয়েনিয়েছ।
তো আমাকে দিল না কেন ? তারা যেহেতু সব কিছুই করবে তাহলে আমাকে কেন জড়াল?
এটা তাদের অন্যরকম মাস্টারপ্ল্যান। যা তোমাকে বুঝাবেনা। বুঝতেও দিবেনা।
এখন এখানে থেকে রেনাস কে সরাও।
কোথায় নিয়ে যাব ?
মেন্টাল কেয়ারে।
কেন ? ওখানে কেন নিয়ে যাব ?
আমি বাড়তি কথা শুনতে চাইনি। আমি নিজেও নিয়ে যেতে পারি। তুমি নিয়ে যাবা এখন তাঁকে।
কিন্তু মেন্টাল কেয়ারে কেন মাইকেল ?
আমি আসছি কাজ শেষে।
গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে সাব্রিনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যামের স্বামী কোথায় ?
সে কাল রাতেই আমেরিকা রওয়ানা হয়ে গেছে। তবে এখনও সেই জিনিসটা পায়নি। এতো কিছুর মাঝে একটা বোকামি হয়ে গেছে।
কি বোকামি হয়ে গেছে?
উইলের কাগজটা কোথায় আছে সেটা উদ্ধার হয়নি। সেটা খুব জরুরী।
মাইকেল এসব জিজ্ঞেস না করে বলে, তো সে তার ফাইনাল একশন কখন শুরু করবে।
সেদিক থেকে কাজ শেষ করে এসে।
সে তো মারা গেছে মিডিয়ার কাছেও। তাহলে সে কি শেষ পর্যন্ত টিকবে?
কে বলল সে মারা গেছে। সে তো সাত মাস হল আমেরিকাতেই আছে। হাহ, তুমি জানইনা সে কত বড় মাস্টারমাইন্ড। সে এসে বলবে ম্যাম নাটক করেছে। আর সে এই দুশ্চরিত্রা মেয়ে কিনা এই অভদ্র ছেলেকে সব লিখে দিতে চলেছিল তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।
আমার ভেতরে অনেক বড় একটা ধাক্কা লাগে। মানে সে কত বড় পরিকল্পনা করে রেখেছিল , যেটা ভাবনার বাহিরে।
আমি হাতের ফাইল নিয়ে ধীরে ধীরে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। গেটের মাঝে আমাকে দেখে পুলিশ আর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে । কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে আমি স্টেটমেন্ট দি নিজের মত করে। তবে ম্যামকে মৃত ঘোষণা করতে আমার নিজের ভেতরে জ্বলে যাচ্ছিল। আমি তোকে ভালবাসি বন্ধু।
রেনাস মাইকেলের ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে নেয় । মুখ ঘুরিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় পাশের এক জানালার কাছে। দুই হাত জানালার কাঠের উপরে ভর দিয়ে মুখটা জনালার বাহিরে বের করে মাইকেলকে জিজ্ঞেস করে, তো আমার নামে কি স্টেটমেন্ট দিয়েছিলি?
তুই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিস।
সবার আড়ালে তোকে আমি অজ্ঞান করে রাখতাম। আমি সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে, তুই আসলেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিস। সাব্রিনাও আমার আর আমার সেই বন্ধুর রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে বিশ্বাস করলেও সে এক পর্যায়ে তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। সে কালকে তোকে চেকাপ করানোর জন্য নিজেদের ডাক্তার নিয়ে আসে। আমি জানতাম সে কেন এসেছে।
রেনাস তখন বলে, স্বপ্নে কোন কোন ছবি আচমকা আসেনা। তুই হয়ত কোন এক লাইন বাদ দিয়েছিস। আমি এর মাঝে কোন একদিন হঠাৎ চোখ খুলে তোর হবু বউ আর ম্যামের স্বামীকে দেখেছিলাম।
হ্যাঁ, সে জার্মানিতে এসেছে। কিন্তু এখনও সে নিজেকে সবার সামনে আসেনি। কাজ গুছাচ্ছে এখনও। সে তোকে দেখতে গেছিল একদিন। সেদিন আমাকে আর সাব্রিনাকে আসতে দেয়নি। হয়ত সেও কোন ভাবে একটু হলেও বিশ্বাস করেছে যে, তুই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিস। আর এটাই তার ফায়দা। সে হয়ত তোকে আর মেরে ফেলার জন্য উতালা হবেনা। তার কাজ হয়ে গেছে। কারণ উইল অনুযায়ী যদি তুই মৃত কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেলে পূর্ব উইলকৃত ব্যাক্তি সব পেয়ে যাবে।
আর তোর হবু বউয়ের কি হল?
বাদ দে। আমি ছেড়ে দিয়েছি । সে যে ম্যামের স্বামীর সাথে আড়ালে এতটা ঘনিষ্ঠ আমার জানা ছিল না সেটা।
রেনাস বিছানায় এসে বলে, যাইহোক। বাদ দে এখন। কাল সকালে কথা হবে। এখন খিদে পেয়েছে অনেক। কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হত।
আচ্ছা তুই বস, আমি নিয়ে আসছি।
রুমটা ফাঁকা হয়ে যায় মাইকেল চলে যাওয়ার পরে। পেছনের একটা জিনিস ভাবতে থাকে ছোট করে রেনাস। যেন ঘুম থেকে উঠার পর ধ্বংস এক পৃথিবী। স্বপ্ন শেষে ঘুম ভাঙল। সে শুনল সে নাকি পাগল আর উন্মাদ। অথচ তার বন্ধু তাঁকে বাঁচানোর জন্য তাঁকে উন্মাদ বানিয়ে দিয়েছে। আবার একটা ঘুমে দেশ ছেড়ে মালটা। সব যেন চোখের পলকে শেষ। মালটা এসে যেই কল্পনায় বিভোর হয়েছিল, ছিল অতীতের এক কল্পনা। অতীতের কল্পনা শেষে যেন আবার এক মিনিটের ধ্বংসের দুনিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে। ছোট একটা ঘটনা কেন্দ্র করে কত কিছু হয়ে গেছে। সম্পদের লোভ কখনই ছিল না এটা ম্যাম খুব ভাল করেই জানত। অথচ সেই সম্পদটা তাঁকে দিতে গিয়েই ম্যাম নিজেই চলে গেল। অথচ কাগজটা কোথায় আছে কেও জানেনা। আর সেটাও যদি সামনে না আসে। তাহলে ম্যামের স্বামী অন্য কোন ভাবে সব কিছু আরও সহজেই গ্রাস করে নিতে পারবে।
এতো কিছু ভাবার মাঝেই মাইকেল খাবার নিয়ে ঢুকে রুমের ভেতরে। রেনাস তার ভাবনা শেষ করে বলে, আমি কালকেই জার্মানি যাব। তুই সব ঠিক করে দে।
#চলবে_______________