ম্যামের স্বামী মা*রা গেছে আজ প্রায় তিনদিন হল। এর মাঝেই ম্যাম আজকে রাতে আমাকে তার বাসায় ডিনারে ডেকেছেন। সাথে আনতে বলেছেন কিছু চকলেট। অনেক অদ্ভুত বিষয়টা। তারচেয়েও অদ্ভুত বিষয় হল, গত সপ্তাহে ফাঁকা একটা জায়গায় ম্যামের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার পরে হাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ম্যাম নরম চোখে তাকানো ব্যাতিত আর কিছুই বলেনি। উনি যদি কড়া ভাষায় কথাও বলতেন কিছু, মনে নিতাম না কিছু। ফোনে কথার ফাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাসায় আর কে কে আসবে ? উত্তরে তিনি বলেন , কেও নেই। মা আর বাবা চলে গেছে। শুধু তুমি আসবে। কিন্তু দয়া করে সেই প্লেবয় পারফিউম দিয়ে এসোনা। অ্যারিজোনার চকলেট টা মেখে আসবে। বাসায় আসলে আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিব।
সব কিছু আমাকে অবাক করে দিচ্ছিল। একবার ভাবলাম মাইকেলকে ফোন দিয়ে বলব সব। কিন্তু কথার মাঝে ম্যাম একবার বলল যে, তুমি যে আমার বাসায় আসবে, এটা কাওকে বলার দরকার নেই।
সন্ধা শেষ হওয়ার আগেই রওয়ানা হয়ে যাই ম্যামের বাসার দিকে। ম্যাম বেলিফুল অনেক পছন্দ করে। এটা অনেক আগে চার্চে থাকতে জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে কেন যেন উনার উপরেই দুর্বল হয়ে পড়েছি। নিজেকে হাজার বার বুঝিয়েও পিছু হটাতে পারিনি। সেদিন তো নিজেকে একটু বেশী দুরেই নিয়ে ফেললাম। সাহস করে উনার নিতম্বে হাত দিয়ে ফেলেছি। আমি জানতাম উনি এই সময়ে এই ফাঁকা রাস্তা দিয়েই যাবেন। অদ্ভুত ভাবে তিনি কিছুই বলেনি। এর পরে উনার সাথে আর দেখা নেই। কিন্তু সেই দিনের মুহূর্তটা আমাকে ঘিরে রাখত সব সময়। মনের ভেতরে তাকে নিয়ে একটা গান বেজে উঠত। নিজেকে কল্পনায় ডুবিয়ে দিতাম তার বুকের মাঝে। তবে ম্যাম কে নিয়ে আমি ছাড়া আর কেও ভাবত কিনা জানিনা আমি । কিন্তু অনেকেই জানত যে, লেনা ম্যামকে আমি কতটা পছন্দ করতাম।
বাসায় এসেছিলাম উনার স্বামীর বিদায়ের দিনে। শেষকৃত্যতে এসে বাসাটা চিনে গেছি। তবে জানতাম না যে, এই চিনে যাওয়াটা কাজে লাগবে।
বাসার সামনে এসে দেখি দোতলায় লাইট জ্বলছে। ভেতরের পাতলা পর্দাটা বাতাসের টানে মাঝে মাঝে বাহিরে চলে আসছে। পকেট থেকে ফোন বের করে একটা রিং দিলাম ম্যামকে। রিসিভ করতেই ম্যামকে একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললাম, আপনার জন্য আপনার বাসার সামনে চলে এসেছি। কিন্তু আমি যে এই সন্ধার আলোতে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখব, সেটা কল্পনা করতে পারিনি। পাকিস্তানী ক্রস একজন জার্মানি মেয়ে লেনা ম্যাম। পর্দা সরিয়ে বাহিরে তাকিয়েছে আমাকে খুঁজতে। এখন তার পরনে লাল রঙের শাড়ি। কান আর গলা ভর্তি গহনা। এটা এখানে দাঁড়িয়ে থেকেই বুঝা যাচ্ছে। তার এমন দর্শনে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বললাম, এখান থেকে দেখতেই এত সুন্দর লাগছে। সামনে দেখলে মরে যাবো নাতো?
মেরে ফেলার জন্যই ডেকেছি। সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে কাছে এসে দেখ। চলে আসো উপরে।
দরজা খোলাই ছিল আমার জন্য। তবে ভেতরে ঢোকার পরে ফুল লক হয়ে যায় সেটা। সিঁড়িতে যখন পা দিব, তখন দেখি যে, সিঁড়িতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। এটা আমাকে আরও অবাক করে দেয়। কি হয়েছে আজকে ম্যামের। এসব কি আসলে আমার জন্যই কড়া হয়েছে? নাকি অন্য কোন কারণ আছে ? হয়ত সেটা সামনে গেলেই জানতে পারব।
আনমনে যখন দরজা পেরিয়ে ঢুকতে যাব, সেই সময়ে আচমকা ম্যাম অরেঞ্জ জুস হাতে নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ধাক্কা লেগে জুস কিছুটা পরে যায় আমার শার্টে। ম্যাম জিহ্বা কামড়ে বলে, ইশ একদম খেয়াল করিনি আমি। পরক্ষনেই তার চোখটা যেন আঁটকে যায় আমার উপরে। উনি তখন বিস্ময়কর কণ্ঠে আমাকে বলে, বাহ রেনাস, তোমাকে আজকে দেখতে একজন সুপুরুষ লাগছে। ভেতরে এসো এখন, লম্বা সময় ধরে তোমাকে দেখা যাবে।
ভেতরে ঢুকে নতুন করে আর অবাক হলাম না। কারণ দিনের শুরুটাই হয়েছে অবাক করা বিষয় নিয়ে। সুতরাং ভেতরটা আমাকে আর অবাক করবেনা। মোমবাতির আলোতে ঘড়টা আরও আলকিত লাগছে।
সোফাতে বসতেই ম্যাম তার হাতের জুস আমাকে দেয়। আমি হাতে নিয়ে যখন এক চুমুক দিব, ঠিক তখন ম্যাম বলে, তুমি এতটা ভদ্র তাতো জানতাম না।
আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না। শুধু এই কথার মানে খুঁজতে থাকলাম। সামনেই বসে উনি এক হাঁটুর উপরে আর এক হাঁটু তুলে। নিজেকে অতটা গুছাচ্ছেনা এখন তিনি আমার সামনে। আমি জুস পান করেই চলেছি। ধীরে ধীরে মুহূর্তটা যেন নিরব হয়ে গেল।
আমি নিরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাম, আজকে এভাবে ডাকার কারণ কি ?
তিনি অন্য দিক থেকে চোখ নিয়ে আসে আমার দিকে। নরম কণ্ঠে বলে, এখনি জানতে হবে ? রাত এখন লম্বা হয়ে গেছে। তোমার তো যাওয়ার কোন তাড়া নেই।
না আসলে, আমি এভাবে কখনও এর আগে কারো আমন্ত্রণ পাইনি। আর আপনি যেহেতু এতো খাস করে ডেকেছেন। তাই ভাবলাম, হয়ত কোন কারণ আছে।
তেমন কিছুনা, একা লাগছিল। তাই ভাবলাম, তোমাকে পাশে নিয়ে আজকের সময়টা পার করি। সময়টা কাটতে চাইছেনা।
এমন কথা শুনে আজকের অবাক করা বিষয় গুলো মুছে গেল। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে আমার নিশ্বাস টা একটু ধীরগতি হয়ে গেল। তিনি কিনা আমাকে ডেকেছেন একা লাগছে তাই!
তো সেই ক্ষেত্রে আমি কেন ?
ম্যাম তখন সামনের সোফা থেকে উঠে আমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। পাশে এসে বসে অনেকটা গা ঘেঁষে। উষ্ণতা মাখা কণ্ঠে তিনি আমাকে বলেন, আমি বিশ্বাস করি তোমাকে। তবে কেন করছি বা করি জানিনা সেটা। কিন্তু তুমি এভাবে চুপসে যাচ্ছ কেন? সেদিন তোমাকে দেখে ভেবেছিলাম , তুমি একটু আলাদা সবার থেকে।
সেদিনের কথা আমি ঠিক বলতে পারবোনা। কিন্তু এখন সত্যি আমি অনেক নার্ভাস ফিল করছি।
ম্যাম আস্তে করে ঊরুর উপরে হাত রেখে বলে, কারণ ?
সেটাও অজানা।
কত টাকা লেগেছে ফারমিউমের?
আপনার কি এটাই পছন্দ ?
ম্যাম চোখ বন্ধ করে কোর্টের উপরে নাক নিয়ে নরম কণ্ঠে বলে, ভীষণ। যেটা বহু দিন আগে আমার প্রেমিকের শরীরে পেয়েছিলাম।
আপনার প্রেমিকও ছিল ?
বিশ্বাস হচ্ছেনা?
একটু কষ্ট হচ্ছে।
এই ঘ্রাণ পাওয়ার পরে কোলে মাথা গুঁজে হাতের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করে। তবে মনে হচ্ছেনা বেশী কিছু আশা করা সম্ভব কারো থেকে। যাইহোক, কি খেতে পছন্দ কর তুমি ?
ম্যাম আমাকে এখন যেই পরিস্থিতিতে আছড়ে ফেলে দিল। পুরুষ হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা একদম কঠিন। সাহস করে ম্যামের হাত টেনে নিয়ে বললাম, আমি মাথায় ভাল করে হাত বুলিয়ে দিতে পারি। আপনার পছন্দ হতে পারে।
এখন কিছু খাবেনা?
দুষ্টু একটা কথা মুখের আগাতে এসেছিল। কিন্তু সেটা পুকুত করে গিলে নিয়েছি। এটা বলে দেরি করার দরকার নেই। দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে বললাম, বুকে আসবেন নাকি ঊরুতে মাথা রাখবেন ?
এখানে না। বারান্দায় চল।
ম্যামের পেছনে পেছনে বারান্দায় গেলাম। বাড়ির অন্য একটা দিক এটা। সামনে একটা বাগান, তারপরে শহরের রাস্তা। মুহূর্তের সাথে যেন বারান্দার আবহাওয়াটা বেশ খাপ খাওয়া। একটা গদির চেয়ার এগিয়ে দিয়ে আমাকে বসতে বলে ম্যাম। লম্বা আছে বেশ এটা। আমি বসতেই ম্যাম মুহূর্তেই তার শরীর এলিয়ে দিয়ে অধিকারী একজন মানুষের মত আমার বুকে মাথা রেখে নিজেকে ছেড়ে দেয়। অনুভুতিও যে এমন হয় জানা ছিল না আমার। শরীরটা কেঁপে উঠে আমার কিছুটা। মাথার চুল কিছুটা সরিয়ে তার চোখ দুটো বের করলাম। ম্যাম তখন বুকের মাঝে আরও ঠেলে দেয় তার মুখটা। যেন সে এই ঘ্রানের ভেতরে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। ঠিক কি বলব আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
ম্যাম তখন জিজ্ঞেস করে, এর আগে কাওকে এভাবে বুকে রেখেচ?
না। কিন্তু আজকে আমার কাছে সব কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত লাগছে।
সেসব পরে শুনব। কিছু কি অনুভব হচ্ছে?
বুঝতে পারছেন না?
বুঝলে জিজ্ঞেস করতাম না। শুনতে ভাল লাগে বেশী।
ঘাড়ের কাছে কিছুটা কাপড় সরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে অনেক সুন্দর লাগে।
ম্যাম তখন পিঠ ঘুরিয়ে আমার মুখ বরাবর মুখ রাখে। ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলে, একবার গলার নিচে ঠোঁট লাগিয়ে দেখতে পারো।
আমার গলা শুঁকিয়ে আসছিল। আমি তখন বললাম, জুস কি আর আছে নাকি সব শেষ ?
এই মুহূর্তে জুস কেন লাগছে তোমার ?
গলা শুঁকিয়ে গেছে।
আমি ভিজিয়ে দিই?
কথাটা শুনে যেন শরীরটা একটু কেঁপে উঠল। আমি তখন বললাম, জুসটা পেলে তারপরে দিব না হয়।
ম্যাম বুক থেকে উঠে গিয়ে দাঁড়ায়। দাঁড়ানোর পরে উনি আমাকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, মুড যেন না বদলে যায়। আমি নিয়ে আসছি জুস।
ম্যাম তড়িৎ গতিতে সামনে থেকে হাওয়া হয়ে যায়। আমি তখন পকেটে মোবাইলের ভাইব্রেশন বুঝতে পারলাম। ইচ্ছে করছিল না এই মুহূর্তে মোবাইল দেখতে। তবুও কেন যেন মোবাইলটা বের করলাম। তখন মনে পড়ল, ম্যামের জন্য চকলেটও এনেছি। এখনও দেওয়া হয়নি উনাকে। সেটা পাশে রেখে মোবাইলের স্ক্রিন অন করলাম। কিন্তু মেসেজ দিয়েছে মাইকেল। মাইকেল সাধারণত কখনও মেসেজ দেয়না। কিন্তু আমি যখন মাইকেলের মেসেজ টা অন করলাম, আমার হাত কাঁপতে শুরু করল। ঠাণ্ডা পরিবেশেও যেন কপালটা ঘেমে উঠল আমার। " রেনাস, তোর লেনা ম্যাম এক্সিডেন্ট করেছে । সকাল থেকে তোকে কল দিতে চেষ্টা করছি। কল ঢুকছেনা। সন্ধার আগে মেডিকেলে আয়। ময়নাতদন্তের দায়িত্ব আমরা পেয়েছি।"
লেখক: আহিল আহমেদ
চলবে.........