মেয়ে হওয়ার কারণে সাদা একটা কাপড় দিয়ে আবৃত দেহটা । কিন্তু কেটে যাওয়া মুখ দেখে চিনতে আমার একদম সমস্যা হচ্ছেনা। আমি নিজের ভেতরে রাগ চেপে রেখে তাকে বললাম, তোর স্ত্রীর বডি এখানে। আর তুই কিনা আমকে ডেকে এনেছিস ম্যাম মারা গেছে বলে? নিজের স্ত্রীর প্রতি মৃত্যুর সময়টাতে অন্তত সদয় হতে পারতি। আমার এমন সব কথা শুনে পুরো টিম একে অপরের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করতে শুরু করে। তাদের এমন চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যে আমি অনেক বাজে কিছু বলে ফেলেছি। মাইকেল তখন আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে আমাকে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, আমি জানি তোর অবস্থা। সবাই জানে যে, তুই শুধু ম্যামকে পছন্দ করিস। কিন্তু আমি জানি সব তোর ব্যাপারে।
এবার এই কথা গুলো শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল আমার। আমি একটু চেঁচিয়েই উঠলাম তার উপরে। মাইকেল, এখন জিনিসটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুই বার বার বুঝাতে চাইছিস যে ম্যাম মারা গেছে। তুই কি নিজেই উন্মাদ হয়ে গেছিস স্ত্রীকে হারিয়ে?
সবার সামনে আমাদের দুজনের কথার একটা গিট লেগে যায়। দ্বিধায় পড়ে যায় সবাই। আমার আর মাইকেলের কথা কোন মিল পাচ্ছেনা কেও তারা। পাল্টা কথা আসার আগে আমি জিজ্ঞেস করি, ম্যামের ফোন কই শুনি আগে ?
মাইকেল প্রশ্নন শুনে বেশী দেরি করেনা। চোখের পলকেই নিয়ে হাজির হয় একটা প্লাস্টিক ব্যাগ। সব কিছুই আছে এই ব্যগের ভেতরে। একটা প্লাস্টিক ব্যাগের ভেতরে ম্যামের রক্তাক্ত পার্স। অন্য একটাতে ভাঙ্গা মোবাইল। আর একটাতে কাঁচ ভাঙ্গা ঘড়ি। আমার মাথা আবারও কিছুটা চক্কর কাটতে শুরু করল। রক্ত মাখা ছিল ব্যাগে কিছুটা। আমি সেখানেই দুর্বল হয়ে মাইকেলের উপরে ভর দিয়ে ফেললাম। মনে হচ্ছিল যে, পুরো দুনিয়া আমাকে ঘিরে ধরেছে। সাব্রিনা আমাকে এই অবস্থায় দেখে দৌড়ে পানি আনতে যায়। বাকিরা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি তখন মাইকেলকে ফিসফিস কণ্ঠে বললাম, আমি এখনও বিশ্বাস করিনা। এগুলো আমাকে নিয়ে যেতে দে।
মাইকেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, কিন্তু আমি এটা পারব না যে রে। সব গুলো এখন কেস ফাইলের আন্ডারে। ধারণা করা হচ্ছে এটা মার্ডার। আমার কাছে এই অনুরোধ করিসনা দয়া করে।
সাব্রিনা পানি নিয়ে আসতেই আমি পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। মাইকেল তখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, এখন কাজ শুরু হবে। আমি কোন কথা বললাম না। শুধু এটাই বললাম, আমি বিশ্বাস করিনা। বাকিটা তোর ইচ্ছা।
রওয়ানা হলাম ম্যামের বাসার দিকে। পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সাড়ে দশটা পার। কিন্তু যখন ম্যামের বাসার সামনে আসলাম আমি, এসে দেখি এক অবাক করা দৃশ্য। ম্যাম জানালার পাশে বসে থেকে কারো প্রহর গুনছে। অনেক অবাক লেগেছে এটা আমার কাছে। কিন্তু উনি যখন আমার উপস্থিতি বুঝতে পারলেন, বসা থেকে উঠে জানালার উপরে হাত ভর দিয়ে আমার দিকে মিষ্টি হাঁসি মাখা মুখ নিয়ে তাকালেন। হাতের ইশারায় বোঝালেন, জলদি এসো?
আগের বারের মত আবারও দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দরজাটা অটোম্যাটিক ভাবে লক হয়ে যায়। দরজাটা আধুনিক না। তবুও এমন ভাবে লক হয়ে যাওয়াটা কেমন যেন। সিঁড়ি তে পড়ে থাকা ফুল গুলো এখনও তাজা হয়ে আছে। কয়েক সিঁড়ি উঠতেই ম্যাম এসে সিঁড়ির উপরে দাঁড়ায়। একটু অভিমানী কণ্ঠে বলে, এতো দেরি লাগে আসতে ? কতক্ষন সময় ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি জানো তুমি?
সব কিছু অবাক লাগলেও আমার না হাসতে ইচ্ছে করছে না কথা বলতে। কিন্তু আজকের দিনটা হয়ত মনের আর ইচ্ছের বিরুদ্ধে। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠে উনার সামনে গিয়ে বললাম, কাজ শেষ করতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ঘুম আসছে নাকি আপনার?
জিনা, এতো তাড়াতাড়ি আমার ঘুম আসেনা। কত গল্প করতে ইচ্ছে করছে জানো তুমি? কিন্তু তুমিই তো নাই।
আমি ম্যামের হাতে ধরে রুমের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতেই আগের মত আবারও জিগেস করলাম, গল্প করার জন্য আজকে আমাকে পছন্দ হল কেন? এর আগে কত দুষ্টামি আর কত কিছু করেছি আপানার সাথে। তখন তো একবারের জন্যও ডাকেননি।
তুমি কি আজকের দিনে প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই পারনা?
কৌতূহলের কোথাও জিজ্ঞেস করতে পারবোনা?
না দরকার নেই এখন এসব জানার। পরে জানা যাবে। তোমার খিদে পায়নি?
নাহ, সব খিদে হারিয়ে গেছে আজকে।
আচ্ছা আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি। যেহেতু মেডিকেল থেকে এসেছ। ফ্রেশ হয়ে তারপরে রান্না ঘরে আসবে।
আপনার ফোনটা কোথায়?
কেন? তুমি কি করবে?
দেখব। যেহেতু ভেঙ্গে গেছে বললেন, দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
কিছু করতে পারবানা। ওই ঘরের টেবিলের উপরে আছে। বাথরুমও আছে। এক ঘরে দুই কাজ করে আসো। আমি অপক্ষা করলাম তোমার ঘরে। সরি তোমার জন্য রান্না ঘরে।
ম্যাম চলে যাওয়ার পরে আমি সেই ঘরে গেলাম। ভেবেছিলাম ব্যাতিক্রম কিছু দেখব। মাইকেল কে ডেকে এনে দেখাবো, দেখ শয়তান। এখানে কোন প্রমান নেই। ম্যাম জীবিত। পাগলামি বন্ধ কর। হুশে ফিরে আয়। তোর স্ত্রী সে। আমি তোকে সিম্প্যাথি দিতাম। কিন্তু তুই আমার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছিস। তবে মাইকেল জিতে যাবে এই দিক দিয়ে। এখানে আমি অনেক শান্ত হয়ে আছি। অবাক হচ্ছি না। চোখ গুলোও বড় বড় করছিনা। কারণ আমার সামনে সেই জিনিস গুলই পরে আছে, যেগুলো মেডিকেলে প্লাস্টিক ব্যাগের ভেতরে দেখে এসেছি। এটা ঠিক সেই ফোন। যেটা আমি দেখে এসেছি। ঠিক একই ভাবে ভাঙ্গা এটা। সেই ঘড়ি। কিন্তু ব্যাগে রক্ত নেই। ব্যাগ টা হাতে নিয়ে দেখলাম। না, ব্যাগে রক্ত লেগেছিল। হয়ত ম্যাম এটা মুছে দিয়েছে। খুব সুক্ষ ভাবে দেখলে এটা বুঝা যাচ্ছে। আর কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছেনা। পাশের একটা আলনা থেকে সাদা তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
বাথরুমের দরজা লাগিয়ে যখন বেসিনের দিকে ঝুঁকে মুখ ধুতে যাব, ঠিক তখন দেখি যে কিছু রক্তের দাগ। কাঁচা রক্ত। এমন না যে অনেক সময় আগের। আমি আর সেখানে মুখ ধুলাম না। এটা নিয়ে অন্তত প্রশ্ন করতে হবে ম্যামকে। পাশের ট্যাঁপে থেকে পানি নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। এখন মনে হচ্ছে মাথা টা কিছু হালকা হয়েছে। তবে একটা কারণ এখনও বাকি। যদি ধরেও নি যে ম্যাম মারা গেছে, তাহলে এই মহিলা কে ?
রান্না ঘরের দরজায় গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি ম্যাম খুব মনোযোগ দিয়ে পেঁয়াজ কাটছে। পেঁয়াজের কুঁচি দেখে বলতেই হয় যে, এটা অনেক দক্ষ হাত। আমার দিকে না তাকিয়েই উনি তখন জিজ্ঞেস করে, যাওয়ার আগে যেন তুমি কিছু বলেছিলে। বিরক্ত করবে নাকি কি যেন?
একটু ক্লান্ত লাগছে। আচ্ছা বেসিনে দেখলাম কিছুটা রক্ত লেগে আছে। কিছু হয়েছিল নাকি আপনার?
ম্যাম দেখলাম এই প্রশ্ন শুনে কিছুটা নেতিয়ে পড়ল। শেষমেশ এমন অবস্থা হল যে, নিজের শরীরটাই ছেড়ে দিল। আমি এটা দেখেই উনাকে গিয়ে ধরি। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। সে তখন আমার বাহু ধরে বলে, আমার এমনটা সকালেও হয়েছিল গাড়ির ভেতরে। পরে দেখি যে আমি রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে দাঁড়িয়ে আছি। আর পেছনে প্রচণ্ড ভিড়। আমি বেশী সময় সেখানে থাকিনি। বাসায় আসতেই দেখি নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। সেটাই ধুয়েছিলাম। মাথা ঘুরছিল বলে হয়ত ভাল ভাবে পরিস্কার করতে পারিনি।
এখন আর কিছু করতে হবেনা। চলেন রুমে।
না ক্যাট আমার। একটু ধরে থাকো আমায় । পেঁয়াজ টা অন্তত কেটে নেই। তুমি এখনও কিছুই বলনি কি খাবে তুমি ?
ম্যামকে আসতে করে দাঁড় করিয়ে দিলাম।
ম্যাম তখন বলে, তুমি এখন অন্তত পেছন থেকে আমাকে সাপোর্ট করতে পারো।
আমি এটা শোনার পরে পেছন থেকে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মুখটা নিয়ে আসলাম চুল সরিয়ে কাঁধের উপরে। মনকে তখন বললাম, এখন অন্তত সব ঝেরে ফেলে সামনের দিকে সময় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক। কিছু একটা পরে দেখা যাবে।
আমি ম্যামের খোলা পেটের ভেতরে আস্তে আস্তে হাত প্রবেশ করাচ্ছি। হালকা করে যে আমার সাথে লেগে থাকা দেহটা কাঁপছে, আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি। আমি হাতের তালুটা খোলা পেটের উপরেই আনমনে বুলিয়ে দিতে থাকলাম। শরীরের ভেতরের কম্পন যেন আমাকেও কাবু করে তুলছিল। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে চাইছিল হাত দুটো। ধীরে ধীরে মুখটা কাছে নিয়ে যাচ্ছি সেই ঠোঁটের। অনেকটা কাছে যেতেই বুঝা যাচ্ছিল যে, একটা ঘন নিশ্বাস খুব উষ্ণতার সাথে নিসর্গ হচ্ছে। হয়ত আরও চাইছে তাঁর ভেতরে। এমন উষ্ণ নিশ্বাস পেয়ে নিজেকে ধরে রাখা আরও কঠিন। আমি মুখ সরিয়ে ম্যামকে বললাম, অসহ্য লাগছেনা ?
ম্যাম কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, লাগছে। কিন্তু ভালও লাগছে।
আমি ম্যামের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, তাঁর হাতটাও আগের দক্ষতা অনুযায়ী পেঁয়াজ কাটতে পারছেনা।
আমি কানের কাছে ফিসফিস কণ্ঠে বললাম, পেঁয়াজ অনেক কেটে ফেলেছেন। এখন কি রুমে যাবেন ?
উহু, না। কি খাবে সেটা বল। বিরক্ত করতে গিয়ে যদি নিজেরি বিরক্ত লাগে , তবে তুমি রুমে গিয়ে বসতে পারো।
আমি ঘাড়ে ঠোঁট চেপে একটা চুমু দিয়ে বললাম, যাবনা। আমি আছি এখানেই। ম্যাম যে আগের চেয়ে আরও কিছুটা অস্থির হয়ে গেছে , এটা তাঁর বুকের উঠা নামা দেখেই বুঝতে পারছিলাম। মাঝে মাঝে যখন হাতটা উপরের দিকে নিয়ে আসতে যাচ্ছিলাম, চোখটা বন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর। কিন্তু চরম মাত্রার কিছুই এখন করতে মন সায় দিচ্ছিল না।
ম্যাম অনেকক্ষণ পরে আমাকে বলে, এখন ছেড়ে দিয়ে সাইডে থাকো। বেশী বিরক্ত করলে আর রান্না করতে পারবোনা। আর আমি শাড়ি পরিনা। তুমি আসবে বলে আজকে পরেছি। তাই একটু বিরক্ত লাগছে। রান্না করতে গিয়ে এটা এখন নষ্ট হয়ে যাবে। সমস্যা নাই। আরও আছে। মায়ের শাড়ি সেগুলো। কিন্তু পরিয়ে দিবে তুমি। কীভাবে সেটা আমি জানিনা। মা পাকিস্তানী হওয়ার কারণে শুধু এই জিনিসটা শিখেছি।
ছাড়তে ইচ্ছা করছিল না ম্যামকে। তবুও ছেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়ালাম। আমার পছন্দের ডিম ভুনা করেছে সে। স্বাদের কোন তুলনায় হয়না। যদি ধরেও নি সে মারা গেছে। তাহলে হয়ত একটা মৃত মেয়ের হাতের রান্না খেলাম। তাকে কি বলা যায় তাও জানিনা। পেত্নি বা ডাইনি বললেও তাকে গালি দেওয়া হয়ে যাবে। সেটা বলতেও মন চাইছেনা।
রাতের খাবার শেষে দুজনে ঘরের সোফায় বসে আছি মুখমুখি করে। ম্যাম তখন শাড়ীর আচল নাকে নিয়ে বলে, এটা আর পরে থাকা যাবেনা। কেমন যেন মশলার গন্ধ হয়ে গেছে। ঘেমেও গেছি। শুননা, আলমারি খুল্লেই শাড়ি পাবে। একটু নিয়ে আসবে ? তুমিতো পরিয়ে দিবে। এটাও কর না হয়।
আমি দুষ্টু কণ্ঠে বললাম, আপনি ঘামলে আমার বেশী ভাল লাগে। এখন সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে।
কিন্তু আমার অসহ্য লাগছে। যাও না প্লিজ।
আমি হাসতে হাসতে পাশের রুমে চলে গেলাম। কিন্তু আমি যখন রুমের ভেতরে ঢুকতে যাবো, এমন সময় দেখি যে, ম্যাম নাইটি পরে বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে। এইটা দেখে আমার মাথা ঘেমে উঠে চরম ভাবে। অথচ সে মাত্র কয়েক সেকেন্ড মুহূর্ত আগে সেই রুমে গা ছেড়ে দিয়ে বসেছিল।
লেখক: আহিল আহমেদ
#চলবে____________