ম্যামের খুব শখ ছিল , একটা একান্ত মুহূর্ত কাটাবে এই পাহাড়ে। অনেক দিন আগেই বলেছিল সেটা। সবুজ আর নিরিবিলি পরিবেশ। এখান থেকে নিচের দৃশ্য দেখতে আরও মধুর লাগে। তবে এখন দাঁড়িয়ে থেকে সেই দৃশ্য দেখা হচ্ছেনা। ম্যাম আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে আধো ঘুম অবস্থায়। মিছি মিছি কুয়াশা পড়ছে। মুখটা একবার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বললাম, তাঁবুটা উপর দিয়ে এখন লাগিয়ে দি। তোমার চুল ভিজে যাচ্ছে। সে তখন আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার সমস্যা নেই। তোমাকে নিয়েই ভিজব। তোমার সমস্যা হলে বল, আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
তাহলে লাগবেনা। তুমি ভিজে যাচ্ছ ভেবে লাগিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। আমার ভীষণ ভাল লাগছে।
আমার অতটাও ভাল লাগছেনা। তোমার বুকে এভাবে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকতে যতটা ভাল লাগছে।
আমি তখন চাদরের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে তার নগ্ন পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। আর কত দিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে সময় কাটাবো ? পাপ হচ্ছেনা?
উফ রেনাস। মুড নষ্ট করিওনা। পাপের কথা বললে এখনি পাহাড় থেকে ঝাপ দিব। তখন পাপ মোচন করিও। জীবনটা আমার এমনিতেই তেজপাতা হয়ে আছে। তুমি কিনা এখন কি নিয়ে পড়ে আছ। আচ্ছা বিয়ে করবে তো? এই সপ্তাহেই করব। এই সপ্তাহে না হলে আগামী রবিবার করব। তখনও যদি চুমু খেতে গিয়ে ইতস্ত কর, নাক ভচকে দিব একদম তোমার। হাদারাম একটা। ওই ষোল বছর বয়সে ঠিকি তো অন্যরকম হয়ে গেছিলা।
এই কথা শোনার পরে আমার আচমকা সেই শুরুর দিনের কথা মনে পড়ে গেল। বাবা মা এক্সিডেন্টে মারা গেছে মাত্র কয়েকদিন হয়েছিল। পরিবারের আর কেও ছিল না। দাদা দাদি নানা নানি কত আগেই চলে গেছে। বাকি ছিল শুধু এক মামা। তিনিও থাকেন ফ্রান্সে। এই জার্মানিতে দেখার মত কেও ছিলোনা। মামা শেষমেশ এই সেন্ট ইম্মোরটাল অরফানেজ সেন্টারে নিয়ে আসেন। যেটা একটা বিলিওনার কম্পানির আদলে চলে। তবে এখানে শুধু কোম্পানির এতিম ছেলে বা মেয়েদের নেওয়া হয়। যারা কর্মক্ষেত্রে মারা যায় বা যারা অসহায়। বলতে গেলে শুধু এই কোম্পানির ভেতরেই সব হবে। যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, বাহিরের কোন বাচ্চা নিবেনা তারা। কিন্তু মামা জানতেন যে, এই শহরে এর চেয়ে বেস্ট অরফানেজ সেন্টার আর কোথাও নেই। এক পর্যায়ে তিনি রাজি হয়ে গেলেন যে, আমার মা এবং বাবার সব সম্পত্তি দিয়ে দিবেন। আমি তখন একদম ছোট। এই সয় সম্পত্তি দিয়ে কি বা আর করব। তবুও রাজি হলেন না অথোরিটি। গডের কি কাম, সেই মুহূর্তে কীভাবে যেন লেনা ম্যাম হাজির হয়েছিলেন। আর যেহেতু তিনি এই অরফানেজের বড় একজন নান। পাশাপাশি দায়িত্বরত সেই বিলিওনার কোম্পানির মালিকের মেয়ে। একটা ক্ষমতা তার থেকেই যায়। অথোরিটি অনিচ্ছা স্বত্বেও তাকে একটা ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করেন যে, এই ছেলেকে আসলে এখানে রাখা যাবে কিনা। তাছাড়া তার বয়স এখন তের। সে বড় হয়ে এসেছে বাবা মায়ের সাথে। ম্যাম হয়ত এসেছিলেন একটা ফাইল নিতে। পরনে তার কালো বোরকা। আর মাথায় ছিল একটা সাদা নেকাব। বয়স হয়ত তখন তার বিশ হয়েছে মাত্র। একদম তরুনি ছিলেন। শরীর আর চেহারা দিয়ে যেন যৌবনের রস আর দেহের আকর্ষণ ঝর্নার মত প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি তখন তার হাতের ফাইলটা রেখে একদম কাছে এসে আমার মুখের দিকে ঝুঁকে যান। আমার থুঁতনিতে তার নরম হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, নাম কি তোমার ?
আমি অসহায় চোখে তার দিকে উত্তরে বললাম, রেনাস।
ভারী মিষ্টি নামতো তোমার। ধর আমি এখানে তোমার একজন সঙ্গি। খেলা, পড়া, ঘুরতে যাওয়া। সব কিছুর। তবুও কি একা একা বোধ হবে তোমার?
আমি মাথা নামিয়ে কেঁদে ফেললাম। বাবা মা হারানোর অনুভুতিটা ছিল সেই বয়সে আমার। আর ছিলাম আদরের সন্তান। যেহেতু একটাই ছিলাম। আমি কাঁদতে কাঁদতে উনাকে বললাম, হ্যাঁ হবে।
জানিনা উনার কি মনে হল, তিনি কোমর সোজা করে অথোরিটিকে বললেন, এক কাজ করুণ। আমার রুমের পাশে একটা রুম ফাঁকা আছে হয়ত। সেটা লিলির জন্য রেখেছিলাম। যেহেতু সে ম্যাম হেনরির কাছে চলে যাচ্ছে, তাই এখন সেটা আর পুরন হবেনা। আপাততো তাকে সেখানে দিন।
অথোরিটির সেই দিনের মুখটা এখনও আমার মুখস্ত। সবাই যেন এটা মেনে নিতেই চাইছিল না। এর মাঝে থেকে একজন এটাকে আটকানোর জন্য বলে উঠে, কিন্তু ম্যাম, আমি আপনার উপরে রেস্পেক্ট রেখেই বলছি, সেটা তো বিশাল রুম। আর তাছাড়া এই ছেলে আমাদের কোম্পানির কাছের কেও নন। না কোন ওয়ার্কারের না কোন অফিসারের।
ম্যাম তখন জবাবে বলে, হতে পারে আমাদের কোন কাস্টমারের ছেলে। আমি দায়িত্ব নিলাম। কোন সমস্যা হবেনা। তাছাড়া আমি এই মাসুম ছেলেকে ইগ্নোর করতে পারিনা। একবার তার চেহারাটা দেখুন। যেন ঈশ্বরের পাঠানো কেও।
আমি হালকা মাথা উঁচু করে উনার দিকে তাকিয়ে দেখচিলাম। সেই শুরুর দিনেই প্রেমে পড়ে গেছিলাম কিনা উনার, জানিনা। সব পেপার শেষে মামা আমাকে নিয়ে বাইরে এলেন। ব্যবসায়ীদের আর ব্যস্তদের একটা কমন কথা থাকে। আমি প্রায় আসব তোর খোঁজ নিতে। প্রয়োজনে প্রত্যেক মাসে আসব। আমি আসব তোকে দেখতে।
সেদিন রাতে এক বিশাল রুমে ঢুকেছিলাম। পাথরের কারুকার্য করা এরকম রুমে আমি কখনও থাকিনি আগে। এক রুম থেকে আর একটা রুমের দূরত্বটাও অনেক। জোরে করে না ডাকলে কেও শুনতে পাবেনা। রাতের খাবারের সময় ম্যাম ছিলেন না। ম্যামের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তখন। উনি শুধু সকালে আর বিকেলে থাকতেন। এই সময়টাতে উনি যে আমার এতো যত্ন নিতেন, টা অস্বীকার করার কোন রাস্তা নেই। কিন্তু রাত হলে সেই বয়সে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত এক বিশাল কষ্ট। বুক ভরা কষ্ট। দরজা লাগিয়ে উঁচু জানালার জায়গায় উঠে হাঁটু মোড়া করে কাঁদতে শুরু করতাম। রাতটা লাগত ভীষণ একা। কেঁদে কেঁদে ফাল আর গলা ব্যাথা করে ফেলতাম। তারপরে কখন যে নিজের অজান্তে সেই জায়গায় কাচুমুচু হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম, জানাই হত না। এভাবে পার হয়ে গেল এক মাস। মামা কথা দিয়েছিল আসবে। উনি আসেনি। মাসে চার থেকে পাঁচবার ম্যামের ফোনে ভিডিও কলে কথা হত কিছু সময়ের জন্য। সেটাই শেষ। কথা রাখেনি উনি। বিষাদ ভরা মন আরও ভারী হয়ে যেতে থাকল।
একদিন সকালে ম্যাম এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি জানালার পাশের জায়গায় ক্লান্ত মন নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর হয়েছে মাত্র। সূর্যের নিচটা এখনও উঁচু হয়নি। এই সময়ে ম্যামের হাতের স্পর্শ পেয়ে যখন আমি ঘুম থেকে উঠে গেলাম, চমকে গেছিলাম। ম্যামের চোখ লাল হয়ে আছে। চোখের এক কোণে কালশিরে দাগ। কি বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাম , আপনার চোখের আর মুখের এই অবস্থা কেন?
ম্যাম শান্ত গলায় বলে, পড়ে গিয়েছিলাম। তুমি এভাবে এখানে ঘুমিয়ে আছ কেন? বিছানাতে ঘুমাও না?
ন্যা ম্যাম। এখানেই ঘুমাতে ভাল লাগে এখন।
নেমে আসো। তোমাকে বলিনি তাই। চোখের নিচে কালো করে কি করেছ? এতো সুন্দর চেহারাটা নষ্ট করে দিচ্ছ। ঘুমাতে হবে সঠিক সময়ে। সঠিক সময়ে খেতে হবে। আর কালকে থেকে ক্লাসেও যেতে হবে। শিক্ষিত হতে হবেনা?
হুম। আপনারও দাগ হয়ে গেছে। আমরা দুজন এখন সমান সমান।
ম্যাম আমার কথা শুনে হোহো করে হেসে উঠে। হয়ত সেই বয়সে এই বয়সের মত ফিল টা আসেনি। টা না হলে তখন সেই হাসিটা অনেক উপভোগ করতাম। কিন্তু তখন জানতাম না ম্যামের সেই চেহারার রঙের কারণ। পরের দিন পাশের এক চার্চ স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। আগে থেকে পড়াশোনা থাকায় শুরু থেকে আর পড়তে হয়নি। ভর্তি হয়ে গেলাম চলমান ক্লাসে। সেখানে গিয়ে জুটে গেল প্রানের বন্ধু। মাইকেল। সাথে আরও অনেকেই ছিল। কিন্তু মাইকেলের মত আমার না কেও ছিল , না কেও আছে। মেয়েদের সাথে মিশা হত না। কিন্তু সাব্রিনা আর হিনারো যেন আমাকে সব সময় ঘিরে রাখত। এভাবেই চোখের পলকে কেটে গেল তিন বছর। এখন সময় এসেছে আমাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। ভাষ্যমতে আর তন্ত্র মতে কিংবা শারীরিক ভাবে আমি এখন নতুন যৌবনে পদার্পণ করেছি। মাইকেল এটা নিয়ে অনেক বিরক্ত করত। যেদিন তাকে বলেছিলাম না, আমি এখন যৌবনে পদার্পণ করিতাছি। ব্যাডা, তোমার মনে হয় কিছুই হয়না। তাই আমার সাথে এমন কর। পাল্টা জবাবে এটা বলা ছাড়া তাকে আর কিছুই বলতে পারতাম না। সেও এতিম ছিল আমার মত। তবে তার বাবা ছিল এই কোম্পানির একজন বড় সাইন্টিস্ট।
ম্যাম ইদানিং সন্ধার পরেও চার্চের হোস্টেলে থাকছেন। এই বয়সে এসে একটা জিনিস নিয়ে খুব অবাক হতাম। ম্যাম এতো বড়লোক। গাড়ি হল মার্সিডিস। তবুও তিনি এই কালো পোশাক পরে রোজ আসে এখানে এই এইতিমদের দেখতে। তাদের পরিচর্যা করতে। অথছ চার্চের স্কুলের অন্য কয়েকটা বড়োলোকের বেটি কে দেখি, পা যেন মাটিতে পড়েনা। অথচ যেই কোম্পানির স্কুলে তারা পড়ে, সেই কোম্পানির মালিকের মেয়ের চলন একদম আলাদা। একদম সাদামাটা জীবন।
আর কয়েকদিন পরেই হয়ত চলে যাব অন্য জায়গায়। ম্যামের সাথে আর কোন দিন দেখা হবে কিনা তাও জানিনা। জীবনের একটা অন্যতম অংশ। হয়ত এই জায়গাটার চেয়ে ম্যামকে বেশী মিস করব।
সন্ধার পরে আমার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখি ম্যামের রুমে লাইট জ্বলছে। আজ বেশ কয়েক দিন পরে ম্যামের রুমে লাইট জ্বলতে দেখলাম। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে দেখি, ম্যাম তার চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঝিমাচ্ছে। কি যে সুন্দর আর মাসুম লাগছিল এই চেহারাটা। সেটা বলে বুঝাতে পারব না। আমি জানিনা আসলে কি হয়েছিল তখন, ভেতর থেকে আমি আমার জীবনের প্রথম একটা অজানা অনুভূতি পেয়েছিলাম। সেই স্বাদ আজও পেলেও জীবনের প্রথম স্বাদ একদম ভিন্ন। অদ্ভুত এক টানে আমি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায়। আমার পায়ের শব্দ পেয়ে ম্যাম তড়িঘড়ি করে তার মাথার আর বুকের কাপড় ঠিক করে একটা নরম হাঁসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আরে রেনাস। এসো এসো। কত দিন পরে দেখলাম তোমাকে।
ম্যাম, কাল সকালেই দেখা হয়েছিল।
হয়েছে হয়ত। তবুও মনে হয় অনেক দিন পরে হল। কত বড় হয়ে গেছ তুমি। দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল হ্যাঁ? ইশ আর একটু আগে আসতে যদি।
আমি আপনাকে ভুলবনা কখনও।
আমিও না সুইট হার্ট। পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?
একদম ঠিক।
রাতের খাবার খেয়েছ?
না। একটু পরে খেতে যাব।
আচ্ছা থাক। অতো দূর যাওয়ার দরকার নাই। আমি রাতের খাবার এনেছি। তুমি আমার সাথে খাবা আজকে।
অন্যরা খোঁজ করবে যে ?
করবেনা। কারণ আজকে তাদের স্যার এডওয়ার্ড এর বাসায় দাওয়াত আছে। আমি বলে দিয়েছি যে উনিশ জন যাবে মাত্র। তোমাকে দিয়ে কিছু কাজ করাব।
আপনি আগেই বলে দিয়েছেন ?
হ্যাঁ, কেন কোন সমস্যা ?
না, তেমন না , একটু অবাক হলাম। আপনি জানলেন কি করে যে আমি আসব।
তুমি না আসলেও আমি তোমাকে খুঁজে নিতাম। অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি নিজেই এসেছ যখন ভাল হয়েছে। চল, আজকে ছাদে যাই। বাহিরে ভাল বাতাস হচ্ছে।
ম্যামের সাথে এই প্রথম রাতের বেলা নিরিবিলি কোথাও আসলাম। এর আগে এই ছাদে রাতে আসলেও এরকম ভিন্নতা আগে লাগেনি কখনও। ছাদে একটা জায়গা আছে সুন্দর। সেন্সর লাইট থাকার কারণে মানুষের আগমন বুঝে সেটা জ্বলে উঠে। ম্যাম তার হাতের ব্যাগ রেখে দুই হাত পাখির মত মেলে বলে, এই বিশুদ্ধতার মাঝেই আমার শান্তি। এছাড়া আমি আর কোথাও শান্তি পাইনা।
আমি কিছুটা আবেগ আর অনুভূতি বুঝতে শুরু করেছি মাত্র। কারো মান অভিমান মন খারাপ হয়ে যাওয়াটাও বুঝি এখন বেশ। যেমন মাইকেলের মন খারাপ হলে তার সাথে কত মজা করি। মাঝে মাঝে তো অণ্ডকোষেও চাপ দিতে দ্বিধা করিনা। তবুও চাই সে হাসিখুশি থাকুক। এই জগতে আমার আর কাওকে মুখ ভার করে থাকতে দেখতে ইচ্ছা করেনা একদম।
ম্যাম একটা জায়গায় বসে আমাকে বলে, এখানে বস। তোমার সাথে কিছু গল্প করা যেতে পারে।
আমি খুব লাজুকতার সাথে উনার পাশে বসলাম। শ্রদ্ধা সব সময়ের মত এই হালকা অন্ধকার মিষ্টি পরিবেশেও ছিল।
আমাকে এভাবে গুটিসুটি হয়ে বসতে দেখে ম্যাম বলে, আরে এভাবে না বসে স্বাভাবিক ভাবে বস। লজ্জা পাচ্ছ নাকি । কেও নেই এখানে। কথা শেষ করে ম্যাম তার হাত দিয়ে আমার হাত মুঠি মেরে ধরে। এই স্পর্শে যেন আমার পুরো শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। হয়ত জীবনে প্রথম সেদিন একটা নারী শরীরের স্পর্শে আমার পশম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গেছিল। যৌবনের এই এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি। বিপরীত দিকে কে আছে মানেনা এক মাত্র রক্তের বাঁধন বাদে।
ম্যাম আকাশের দিকে তাকিয়ে নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল। কিন্তু সব গুলো যেন বিষাদ ছোঁয়া। সম্পূর্ণ বুঝতে না পারলেও কিছুটা বুঝেছি যে , ম্যামের মন বড্ড খারাপ। আমি নিজের অজান্তেই ম্যামের শরীরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ম্যাম বিভোর ছিল সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে। একদম যখন তাঁর গা ঘেঁষে বসলাম। একটা উষ্ণ গরম তাপ অনুভব করলাম। যেটা তাঁর শরীর থেকে নির্গত হচ্ছে। আমার হাত পর্যন্ত কাঁপতে শুরুর করল তখন। জানিনা কি হচ্ছিল নিজের ভেতরে। আচমকা যখন ম্যাম তাঁর মুখটা নামিয়ে আমার দিকে ঘুরাল, সেটা ছিল আরও ভয়ঙ্কর এক ধাক্কা। তাঁর উষ্ণ নিশ্বাস আমি একদম স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিলাম। কিন্তু খুব ধীরগতিতে সেটা বের হচ্ছিল। ম্যাম নিজেকে না সামলে আমাকে জিজ্ঞেস করে, এভাবে কি দেখছ রেনাস?
আমি কথা বলতে পারছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম না যে, কিসে আঁটকে গেছিলাম আমি। তাঁর কথায় নাকি তাঁর উষ্ণ তাপে। আমি কিছুটা দূরে মুখ সরিয়ে বললাম, না ম্যাম কিছুনা। আপনার কথা শুনছিলাম মনোযোগ দিয়ে।
বুঝতেই পারছি তুমি অনেক লয়াল একজন স্রোতা।
অনুভূতি আর উষ্ণতা এমন এক জিনিস। যেটার জন্য পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা লাগেনা। মন যেন সেটা সময়ের সাথে নিজেই অজানা কোন এক জায়গায় শিখে আসে। আমি ধীরে ধীরে ম্যামের পেটের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে শক্ত করে ধরি। চোখ বন্ধ করে নিজের অনিচ্ছায় ডুবিয়ে দি তাঁর ঠোঁটে আমার ঠোঁট। বুঝতে পারছি ওপর পাশে জোরপূর্বক এটাকে সামলাচ্ছে। কিন্তু আমি পাগলের মত তাঁর ঠোঁটে ডুবতে চলেছি। তাঁর জিহ্বাতে এলোপাথাড়ি আঘাত করে চলেছি আমি।
ম্যাম জোরে করে এক ধাক্কা দিয়ে হাফাতে হাফাতে বলে, রেনাস। কি করছ তুমি এটা ? এটা পাপ রেনাস।
লেখক: আহিল আহমেদ
#চলবে_______