অবশ্যই উপকারীতা রয়েছে। পিতলে সহজে অক্সিডেশন হয় না ও ক্ষয় প্রাপ্ত হয় না। এটি ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধকও বটে। তাই থালা-বাসন তৈরীতে এটির ব্যবহার সুপ্রচুর।
তামা ও জিঙ্কের সংকর হওয়ার ফলে পিতলের মধ্যে দুই ধাতুর গুণ আছে৷ পিতলের বাসন নন ম্যাগনেটিক এবং টেকসই৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পিতলের বাসনে রান্না করলে খাবারের পুষ্টিমূল্য বজায় থাকে৷
তামায় অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস ও অ্যান্টি-কারসিনোজেনিক থাকে। যা শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। তামা পানিতে আয়রনও সঞ্চার করে। পাশাপাশি এর অন্যান্য উপাদানও শরীরের একাধিক উপকার করে।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি পানের সময় তামার তৈরি পাত্র বা গ্লাস ব্যবহার করাই ভালো। শুনে মনে হতেই পারে পানি খেতে গেলে পাত্রে কী আসে যায়? আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী, রাতেরবেলা যদি তামার জগ বা গ্লাসে পানি ঢেকে রেখে দেন। সকালবেলায় খালি পেটে সেই পানি খেলেই শরীরের নানান রোগব্যাধি দূর হবে।
চলুন জেনে নেয়া যাক ঠিক কী কী উপকার পেতে আমরা তামার পাত্রে পানি পান করবো -
বাতের ব্যথা কমায়
বয়স বাড়ামাত্রই শরীরে দেখা দেয় বাতের ব্যথা। সকালে উঠে তামার পাত্রে পানি পান করলে এই ব্যথায় উপশম পেতে পারেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমে
যারা হার্টের রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য অব্যর্থ দাওয়াই তামা। এছাড়া ক্যান্সারের প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে তামা।
মেদ ঝরাতে
শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে তামা। তাই ডায়েট এবং শরীরচর্চার পাশাপাশি তামার পাত্রে রাখা পানি খান। অল্প দিনে কমবে শরীরে অতিরিক্ত মেদ।
বয়সের ছাপ দূর করতে
বয়সের ভারে মুখে বলিরেখা দেখা দিয়েছে? তামায় থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। রোজ সকালে খালি পেটে তামার পাত্রে পানি খেলে বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। এছাড়া ত্বকের কালো দাগ-ছোপ দেখা দিলে সেটা কমাতেও সাহায্য করে এই তামা।
হজমশক্তি বাড়ায়
তামার পাত্রে পানি খেলে হজম শক্তি ভালো হয়। অম্বল কিংবা গ্যাসের সমস্যা থাকলে উপকার পাওয়া যায়। শরীরে থাকা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াদের নিঃশেষ করতে তামা সাহায্য করে। শরীরে থাকা দূষিত পদার্থও বের করে দিতে তামা দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে।
ক্ষত নিরাময়ে
যেকোনো রকমের ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে তামা। তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। তামার পাত্রে পানি খেলে শরীরে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করে
শরীরে তামার পরিমাণ কম থাকলে তা রক্তচাপে তারতম্য ঘটায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এবং তামা কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সব মিলিয়ে হাইপারটেনশন রোধ করতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলে শরীরে তামার পরিমাণ ঠিক রাখতে তামার পাত্রে পানি পান করা যেতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কাজে ভারসাম্য বজায় রাখে
শরীরে সঠিক মাত্রায় তামা থাকলে তা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ আটকাতে সহায়তা করে। এবং এর কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তামা পানিতে আয়রন সঞ্চার করে, ফলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়তে পারে। তাই তামার বোতলে পানি পানে অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমতে পারে। এর পাশাপাশি, আয়রন কম থাকলে শ্বেত রক্তকণিকাও কমতে পারে।
ধারণা করা হয়, পিতল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মূর্তিপূজকরা পিতলের মূর্তি তৈরি করে মন্দিরে এবং ঘরে রাখে। বুদ্ধের অনেক মূর্তি পিতল দিয়ে তৈরি। সোনার মতো উজ্জ্বল দেখতে বলে পিতলকে অলঙ্করণে ব্যবহার করা হয়।
যেহেতু পিতল দিয়ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা উপাসনার জন্য মূর্তি বানিয়ে থাকেন, তাই অনেকের মনে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে- পিতলের তৈরি প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষেধ।
এটি আসলে একটি অমূলক ধারণা। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। স্বর্ণ-রূপার পাত্র ব্যবহার করা নিষেধ কিন্তু পিতলের প্লেট, গ্লাস বা যে কোনো পাত্র ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই।
হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় পাত্রে অজু করেছেন। সুতরাং পিতলের প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।
-সহিহ বোখারি: ১/৩২ ও রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৪১