আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামের আলেমগণ বিভিন্ন হাদীস ও آثار (সহাবীদের বক্তব্য) থেকে এমন কিছু সূরা ও আমল উল্লেখ করেছেন, যেগুলো পাঠ করলে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করা যায়। যদিও এসব ফযীলতের অনেকগুলো হাদীস দুর্বল (ضعيف) বা হাসান (সহনীয়) পর্যায়ের, তবুও আমলের উদ্দেশ্যে অনেক আলেম এগুলো পড়াকে উৎসাহিত করেছেন। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
১. সূরা আল-ইখলাস (قُلْ هُوَ اللّٰهُ أَحَدٌ)
ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«قُلْ هُوَ اللّٰهُ أَحَدٌ تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ»
অর্থাৎ — “সূরা আল-ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: 5013; সহীহ মুসলিম, হাদীস: 811)
অর্থাৎ ৩ বার সূরা আল-ইখলাস পাঠ করলে কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়।
২. সূরা আল-ফাতিহা
ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“যে ব্যক্তি সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করে, সে যেন কুরআনের এক অংশ পাঠ করল।”
(ইবন মাজাহ, তাফসীর সূরা আল-ফাতিহা অধ্যায়)
কিছু বর্ণনায় এসেছে— এটি কুরআনের মূল বা সারসংক্ষেপ, তাই এটি পাঠে বিশাল ফযীলত রয়েছে। তবে সরাসরি “সম্পূর্ণ কুরআনের সওয়াব” বলা হয়নি।
৩. সূরা যা ইয়াসিন (سورة يس)
ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«اقْرَءُوا يس، فإنها قلب القرآن»
“তোমরা সূরা ইয়াসিন পাঠ করো, এটি কুরআনের হৃদয়।”
(সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস: 3631)
কিছু হাদীসে এসেছে— “যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন পাঠ করে, তার জন্য একবার কুরআন খতমের সওয়াব লিখে দেওয়া হয়।”
(দুর্বল হাদীস হলেও আলেমরা নফল আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।)
৪. সূরা আল-যিলযাল (إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ)
ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“যে ব্যক্তি সূরা ‘إِذَا زُلْزِلَتْ’ (আল-যিলযাল) পাঠ করে, তার জন্য অর্ধেক কুরআন পাঠের সওয়াব লেখা হয়।”
(তিরমিজী, হাদীস: 2894)
অর্থাৎ, দুইবার পাঠ করলে পুরো কুরআন পাঠের সওয়াবের সমান হয়।
৫. সূরা আল-কাফিরুন (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)
ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“সূরা ‘قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ’ কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান।”
(তিরমিজী, হাদীস: 2895)
অর্থাৎ, চারবার পাঠ করলে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠের সওয়াবের সমান।
৬. সূরা আল-তাকাসুর (أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ)
কিছু বর্ণনায় আছে—
“যে ব্যক্তি সূরা তাকাসুর পাঠ করে, তার জন্য এক হাজার আয়াত পাঠের সওয়াব লেখা হয়।”
(দুর্বল হাদীস; তবে আমলের উদ্দেশ্যে পড়া যায়।)
সংক্ষিপ্ত সারাংশ
|
সূরার নাম
|
কয়বার পড়লে কুরআন খতমের সওয়াব
|
সূত্র
|
|
সূরা আল-ইখলাস
|
৩ বার
|
সহীহ বুখারী ও মুসলিম
|
|
সূরা আল-কাফিরুন
|
৪ বার
|
তিরমিজী
|
|
সূরা আল-যিলযাল
|
২ বার
|
তিরমিজী
|
|
সূরা ইয়াসিন
|
১ বার (দুর্বল হাদীস)
|
ইবন হিব্বান
|
|
সূরা আল-ফাতিহা
|
একবার পড়লেই বিশাল ফযীলত
|
ইবন মাজাহ
|
♦️ সর্বোত্তম পদ্ধতি:
এই সূরাগুলো নির্দিষ্ট আমল হিসেবে পড়া যেতে পারে; তবে এগুলো কখনোই পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের বিকল্প নয়। বরং নফল ইবাদত হিসেবে করলে ইনশাআল্লাহ বড় সওয়াব পাওয়া যাবে।