ভ্যাকুয়াম বোমা -
প্রাণঘাতী ভ্যাকুয়াম বোমা একই আকারের অন্য যে কোনো সাধারণ বোমার চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী, যা বিস্ফোরণের এলাকায় যে কারো ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এই বোমা উচ্চ-তাপমাত্রার বিস্ফোরণ তৈরি করতে চারপাশের বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেয়। বিস্ফোরণ ঘটালে প্রচলিত বোমার তুলনায় শক্তিশালী শকওয়েভ তৈরি হয়। এই ধরনের অস্ত্র বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত এবং বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে।
ভ্যাকুয়াম বোমার কাজ -
ভ্যাকুয়াম বোমাকে অ্যারোসল বোমা বা ফুয়েল এয়ার এক্সপ্লোসিভও বলা হয়। সাধারণত একটি জ্বালানির পাত্রে ২ ধরনের বিস্ফোরক চার্জ রেখে এই বোমা তৈরি করা হয়।
রকেট লঞ্চারের মাধ্যমে এই বোমা ছোড়া যায়, আবার বিমান থেকেও এটি ফেলা যায়। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করলে প্রথমে বিস্ফোরক চার্জ বোমার কনটেইনারের মুখ খুলে দেয়।
বোমায় থাকা দাহ্য বস্তু অ্যারোসলের মেঘের মতো আশেপাশের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে সেই মেঘে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তা একদিকে যেমন বিকট হয় অন্যদিকে এতে আশেপাশে বায়ুশুন্যতা তৈরি হয়। এতে মনে হবে ফুসফুস থেকে বাতাস যেন কেউ জোর করে বের করে নিচ্ছে।
এর আগে কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে-
১৯৬০ সাল থেকে রাশিয়ান ও পশ্চিমা বাহিনী এই বোমা ব্যবহার করে আসছে। আফগানিস্তানের পাহাড়ে আল-কায়েদাকে নির্মূল করার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এই বোমার ওপর নির্ভর করেছিল।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক ড. মারকাস হেলিয়ার বলেন, 'পশ্চিমা বাহিনীর তুলনায় রাশিয়ার এই বোমা ব্যবহারের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। চেচনিয়ায় এই অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।'
এটি কতটা বিপজ্জনক-
হেলিয়ার জানান, থার্মোবারিক অস্ত্রগুলোর প্রাথমিকভাবে প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান ধ্বংস করার মতো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো। এটি যেকোনো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স বা অন্যান্য বিল্ডিং ধ্বংসের ক্ষেত্রেও একটি মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র হতে পারে।
তিনি বলেন, 'এই অস্ত্রের ব্যবহার বেআইনি নয় যদিও এর প্রভাব বেশ ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণ এটি একটি ভ্যাকুয়াম তৈরি করে এবং মানুষের ফুসফুস থেকে বাতাস শুষে নিতে পারে।'
হেলিয়ার আশঙ্কা করছেন, রাশিয়ান কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভ্যাকুয়াম বোমার ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, 'রাশিয়ান কৌশল সম্পর্কে আমরা যা জানি তার মধ্যে একটি হলো— প্রয়োজনে তারা সবকিছু ধ্বংস করবে। ইউক্রেন দখলের ক্ষেত্রে তাই এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কারণ রুশ সৈন্যরা এখনও দেশটির রাজধানী কিয়েভ এবং পূর্বের অন্যান্য বড় শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখনো অনেক ইউক্রেনীয় সেনা ও বেসামরিক নাগরিক শহরের ভবন ও বাংকারে রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে।