অষ্টাঙ্গ যোগ হল একটি প্রাচীন যোগপদ্ধতি যা পাটাঞ্জলি মহর্ষি তাঁর "যোগসূত্র" নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। "অষ্টাঙ্গ" শব্দটি দুটি শব্দ থেকে এসেছে: "অষ্ট" (অর্থাৎ ৮) এবং "অঙ্গ" (অর্থাৎ স্তর বা অংশ)। অর্থাৎ, অষ্টাঙ্গ যোগের ৮টি স্তর বা ধাপ রয়েছে, যা শরীর, মন ও আত্মার সমন্বয় সাধন করে মানব জীবনের পূর্ণতা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রণীত।
অষ্টাঙ্গ যোগের ৮টি স্তর বা অঙ্গ:
1. ইয়মা (Yama) - নৈতিক নিষ্ঠা:
এটি পাঁচটি মৌলিক নৈতিক বিধান বা শৃঙ্খলা নিয়ে গঠিত:
1. অহিংসা (Ahimsa) – সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকা
2. সত্য (Satya) – সত্যবাদিতা
3. অস্তেয় (Asteya) – চুরি না করা
4. ব্রহ্মচর্য (Brahmacharya) – আত্মসংযম ও নিয়ন্ত্রণ
5. অপরিগ্রহ (Aparigraha) – অতিরিক্ত দ্রব্যসংগ্রহ থেকে বিরত থাকা
2. নিয়ামা (Niyama) - ব্যক্তিগত শুদ্ধতা:
এটি পাঁচটি ব্যক্তিগত আচরণের শৃঙ্খলা:
1. শৌচ (Shaucha) – শুদ্ধতা
2. সন্তোষ (Santosha) – সন্তুষ্টি
3. তপস (Tapas) – কঠোরতা বা ধৈর্য
4. স্বাধ্যায় (Svadhyaya) – আত্ম-জ্ঞান বা আত্মবিশ্লেষণ
5. ঈশ্বরপ্রণিধান (Ishvarapranidhana) – ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিততা
3. আসন (Asana) - শারীরিক ভঙ্গি:
আসন হলো শরীরের বিভিন্ন ধরণের ভঙ্গি, যা শরীরের নমনীয়তা, শক্তি, ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে শরীরের সুস্থতা ও শিথিলতা অর্জিত হয়।
4. প্রাণায়াম (Pranayama) - শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ:
প্রাণায়াম হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, যা শরীরের শক্তি এবং জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে মনের শান্তি ও স্নায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।
5. প্রত্যাহার (Pratyahara) - ইন্দ্রিয় সংবরণ:
প্রত্যাহার হলো ইন্দ্রিয়গুলি (চোখ, কান, ইত্যাদি) সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং বাহ্যিক দুনিয়ার প্রতি অতি আকর্ষণ কমিয়ে আনা। এটি মনকে অভ্যন্তরীণভাবে মনোযোগী করতে সাহায্য করে।
6. ধারণা (Dharana) - মনোসংযোগ:
ধারণা হলো একাগ্রতার স্তর, যেখানে মনের সমস্ত শক্তি এক পয়েন্টে集中 করা হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করতে সাহায্য করে।
7. ধ্যান (Dhyana) - ধ্যান বা মেডিটেশন:
ধ্যান হলো অবিচলিত মনোযোগ ও গভীর চিন্তা, যা আত্মজ্ঞান ও আত্মবিশ্লেষণকে প্রবর্তিত করে। ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শান্তি এবং একতার অনুভূতি পাওয়া যায়।
8. সমাধি (Samadhi) - আধ্যাত্মিক পূর্ণতা:
সমাধি হলো ঐক্য বা একতার অভিজ্ঞতা, যেখানে ব্যক্তির আত্মা এবং মহাব্রহ্মের মধ্যে পূর্ণ মিলন ঘটে। এটি অষ্টাঙ্গ যোগের সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে একাগ্রতা এবং শান্তি পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়।
সারসংক্ষেপ:
অষ্টাঙ্গ যোগের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন করা যায়। এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতি, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে সমন্বিত উন্নতি সাধন করতে সহায়তা করে।