সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তির যোগান অব্যাহত রাখতে হলে শক্তির উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। সূর্য সকল শক্তির উৎস। এছাড়া পরমাণুর অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয় শক্তি ও পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থিত গলিত পদার্থ থেকে প্রাপ্ত শক্তিও শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত।
রাসায়নিক/জ্বালানি শক্তিঃ আদিম কালে মানুষ নির্ভর করত পেশী শক্তির উপর। পশুকে বশে আনার পর পশুর মাধ্যমে কৃষিকাজ , জিনিসপত্র বহন ইত্যাদি কাজ করত। কাঠ ও গাছের পাতা পুড়িয়ে তাপশক্তি, বায়ু প্রবাহ এবং জলস্রোত থেকে যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন ছিল সভ্যতার প্রাথমিক স্তর। শিল্প বিপ্লব এবং বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার মানুষের এবং পশুর পেশি শক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। ইঞ্জিন চালানোর জন্য শক্তির প্রয়োজন হয় এই শক্তি উৎপন্ন হয় জ্বালানি থেকে।
শক্তির অতি পরিচিত উৎস হলো কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। ভূঅভ্যন্তরে কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় যা সরাসরি বা সামান্য পরিশোধিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কয়লাঃ শক্তি উৎসসগুলোর মধ্যে কয়লার পরিচিত সবচেয়ে বেশি। কয়লা একটি জৈব পদার্থ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে গাছের পাতা এবং কাণ্ড মাটির নিচে চাপা পড়ে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কয়লায় পরিণত হয়। কয়লা থেকে জ্বালানি ছাড়াও বহু প্রয়োজনীয় পদার্থ তৈরি হয়। যেমন কোল গ্যাস, আলকাতরা, বেঞ্জিন, অ্যামোনিয়া, টলুয়িন প্রভৃতি। রান্না করতে এবং বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালাতে কয়লার প্রয়োজন হয়। আধুনিক কালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান কয়লা।
কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটি সালফারের ধোয়া নির্গমন করে। এই ধোয়া এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করে। এই এসিড অনেক দুর্বল তা জলাশয়ের মাছ মেরে ফেলে , বন ধ্বংস করে এবং প্রাচীন পাথুরে খোদাই কাজ নষ্ট করে ফেলে।
খনিজ তেলঃ বর্তমান সভ্যতায় পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। গ্রামের কুঁড়ো ঘর থেকে শুরু করে আধুনিকতম পরিবহণ ব্যবস্থায় সর্বত্র এর ব্যবহার রয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে নিস্কাশিত তেল পেট্রোল, পাকা রাস্তার উপর দেয়া পিচ, কেরোসিন এবং চাষাবাদের জন্য সার পাওয়া যায়। পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলের প্রচুর ব্যবহৃত হয়। পেট্রোলিয়াম থেকে টেরিলিন, পলিয়েস্টার, ক্যাশমিলন ইত্যাদি কৃত্রিম বস্ত্র পাওয়া যায়। পেট্রোলিয়ামের প্রধান ব্যবহার হল তড়িৎ এবং যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদনে। পেট্রোলিয়াম তৈরি হয়েছে পেট্রো(অর্থ পাথর) এবং অলিয়াম(অর্থ তেল) নামক দুটি ল্যাটিন শব্দ হতে। টারশিয়ারি যুগে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ ছয় কোটি বছর আগে সামুদ্রিক শিলার স্তরে স্তরে গাছপালা ও সাম্রদ্রিক প্রাণী চাপা পড়ে বিভিন্ন রাসায়নিক রূপান্তরের মাধ্যমে তেলে পরিণত হয়। আজকের স্থল ভাগের অনেকাংশ প্রাগঐতিহাসিক যুগে সমুদ্রের তলদেশে ছিল।
প্রাকৃতিক গ্যাসঃ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপক। উন্নত দেশগুলোতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার খুব বেশি। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় এর ব্যবহার থাকলেও মূল ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। বাংলাদেশ রান্নার কাজে ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া ব্যবহার রয়েছে সার কারখানায়। গ্যাসের মাধ্যমে তাপ শক্তি তৈরি করে, সেই তাপ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। সুগভীর কূপ খনন করে ভূগর্ভ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করা হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড তাপ এবং চাপে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি হয়। পেট্রোলিয়াম কূপ থেকেও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন। এই সকল শক্তিকে জীবাশ্ম শক্তিও বলা হয়।
তথ্য সূত্র উইকিপিডিয়া