শয়তান শব্দটি একটি পরিভাষা হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই সব ধর্মের মানুষের কাছে সুপরিচিত। শয়তান শব্দটি সর্বপ্রথম আদি জিন বা জিনদের আদি পিতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর সামনে সিজদাবনত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আরবি ভাষায় শয়তান মানে সীমা লঙ্ঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারী। এই বৈশিষ্ট্যের জিন ও মানুষ উভয়ের জন্যই শয়তান পরিভাষা ব্যবহৃত হয়।
কোরআন মজিদে উভয়ের জন্য শয়তান পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন—সুরা বাকারার ১৪ নম্বর আয়াতে ইসলামের বিরুদ্ধাচারী নেতাদের শয়তান বলা হয়েছে। ‘শয়তান’ শব্দের বহুবচন ‘শায়াত্বিন’। পবিত্র কোরআনে শয়তান শব্দ একবচন ও বহুবচনে ৮৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে।কোরআনে শয়তানকে ইবলিসও বলা হয়েছে। আরবি ‘বালাসুন’ ও ‘ইবলাসুন’ শব্দমূল থেকে ইবলিস শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো, বিস্মিত হওয়া, আতঙ্কে নিথর হয়ে যাওয়া, দুঃখে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া এবং সব দিক থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া। শয়তানকে ইবলিস বলার কারণ হলো, হতাশা ও নিরাশার ফলে তার অহমিকা প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মরণখেলায় মেতে ওঠে আর সব ধরনের অপরাধ সংঘটনে উদ্ধত হয়। কোরআন মজিদে ইবলিস শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ বার।
শয়তানকে পবিত্র কোরআনে খান্নাসও বলা হয়েছে। এটি ‘খুনুস’ শব্দমূল থেকে নির্গত হয়েছে। এর অর্থ হলো, সামনে এসে আবার পিছিয়ে যাওয়া এবং প্রকাশ হয়ে আবার গোপন হয়ে যাওয়া। ‘খান্নাস’ আধিক্যবোধক শব্দ। তাই এর অর্থ বারবার সামনে আসা ও পিছিয়ে যাওয়া, বারবার প্রকাশিত ও গোপন হয়ে যাওয়া।
শয়তানকে ‘খান্নাস’ বলার কারণ হলো, সে বারবার প্ররোচনা দেয় এবং বারবার লুকিয়ে যায়। এভাবে সে প্ররোচনা দিতেই থাকে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, মানুষ যখন অসচেতন থাকে তখনই শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়। কিন্তু যখনই সে সতর্ক হয় ও আল্লাহকে স্মরণ করে তখন শয়তান পিছিয়ে যায়, লুকিয়ে যায়। এ কারণে শয়তানকে ‘খান্নাস’ বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘খান্নাস’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে একবার—সুরা নাসে।
প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবনে ইসহাক (রহ.) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, “পাপে লিপ্ত হওয়ার আগে ইবলিস শয়তানের নাম ছিল ‘আযাযিল’। সে ছিল পৃথিবীর বাসিন্দা। অধ্যবসায় ও জ্ঞানের দিক থেকে সে-ই ছিল সবার সেরা।” (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪২)
শয়তান মানুষ, পশুপাখি, এমনকি বন্য প্রাণীর আকৃতি ধারণ করতে পারে। যেমন—কোরাইশদের কাছে বদর যুদ্ধের দিন সুরাকা বিন মালিকের আকৃতিতে আর দারুন নদওয়ার বৈঠকে নাজদি শায়খের রূপ ধরে শয়তান এসেছিল। শয়তান বাস্তবের মতো স্বপ্নেও আসতে পারে এবং যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারে। তবে রাসুল (সা.)-এর রূপ ধারণ করতে পারে না। (বুখারি ও মুসলিম)