পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম যিনি কন্যা সন্তান দাফন করতে নিষেধ করেছেন তিনি হচ্ছেনঃ- সা'সা' ইবনে নাজিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু।
তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ- তিনি ইসলামের প্রসিদ্ধ কবি ফারাজদাকের পিতামহ ছিলেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সাল সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। তবে তাঁর নাতি ইসলামের প্রসিদ্ধ কবি ফারাজদাক জন্মগ্রহণ করেন ৩৮ হিজরীতে এবং মৃত্যুবরণ করেন ১২০ হিজরীতে।
তাঁর পরিচয় হলোঃ- তিনি একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বললেনঃ- হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মুর্খতার যুগে কিছু ভালো কাজ করেছি৷ ইসলাম গ্রহণের পর আমি কি ওই কাজগুলোর প্রতিদান পাবো?
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন কি কি ভালো কাজ করেছো?
তিনি উত্তরে বললেনঃ- তিনশত কন্যা সন্তানকে একটি করে উট ও দু'টি করে উষ্ট্রীর বিনিময়ে ক্রয় করে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছি৷
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ- এটা পুণ্যের কাজ। তুমি তার প্রতিদান পাবে। আর তাইতো আল্লাহ তা'আলা ইসলাম ধর্মের দীক্ষিত করে তোমার উপর ইনসান করেছেন, অনুগ্রহ করেছেন।
যেভাবে শুরু হলো তাঁর জীবন্ত কন্যা সন্তান দাফনে নিষেধ করা ও তাদেরকে ক্রয় করে মুক্ত করার ঘটনাঃ-
একবার তিনি অর্থাৎ সা'সা' ইবনে নাজিয়া নিজের দু'টি উষ্ট্রী হারিয়ে ফেললেন। তাই তিনি তাঁর উষ্ট্রীদ্বয়ের সন্ধানে বের হলেন। যখন রাত্রি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল তখন তিনি কিছু দূরে অগ্নি প্রজ্বলিত দেখে সেখানে যাওয়ার মনস্থ করলেন। সেখানে পৌঁছে হঠাৎ একজন বৃদ্ধ ও একজন প্রসব বেদনাগ্রস্থ মহিলাকে দেখতে পেলেন। তিনি বৃদ্ধের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে তার হারানো উষ্ট্রীদ্বয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। বৃদ্ধ বললেন, আমরা আপনার সেই উষ্ট্রীদ্বয় পেয়েছি এবং এগুলোর উসিলায় আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ( অর্থাৎ সম্ভবত বৃদ্ধ বলতে চাচ্ছেন, তাঁরা উষ্ট্রী দুটিকে জবাই করে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছেন, অথবা একটিকে খেয়ে অন্যটিকে বাহনজন্তু হিসেবে ব্যবহার করেছেন, আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন৷ ) অতঃপর বৃদ্ধ তার নিকটস্থ মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, যদি আমার ছেলে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে আমি তাকে কি করবো জানি না। তবে যদি কন্যা সন্তান জন্ম নেয় তাহলে অবশ্যই আমি তাকে হত্যা করে ফেলব এবং তার আত্মচিৎকারটুকু পর্যন্ত শুনবো না। অতঃপর দেখা গেলো তার কন্যা সন্তানই জন্ম নিল৷ তখন সা'সা' ইবনে নাজিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর হারানো সেই দুটি উষ্ট্রী
( যে উষ্ট্রীদুটি ইতোমধ্যেই বৃদ্ধ পেয়েছিলেন) এবং যে উটে আরোহন করে তিনি তাঁর হারানো উষ্ট্রীদ্বয়ের সন্ধানে এসেছিলেন তার বিনিময় কন্যা সন্তানটিকে ক্রয় করে নিলেন৷
তারপর থেকে এটাকে তিনি নিজের একটি নিয়ম বানিয়ে নিলেন। এরপর যে ব্যক্তিই স্বীয় কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন করতে চাইত তিনি তার নিকট গিয়ে দুগ্ধদানকারী দু'টি উষ্ট্রী ও একটি উটের বিনিময়ে সেই জীবন্ত কন্যা সন্তানটিকে তার থেকে ক্রয় করতেন। এভাবে ইসলামের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত তিনি তিনশত জীবন্ত কবর অবধারিত কন্যা সন্তানকে মুক্তি দিয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ-
কিতাবঃ- নাফহাতুল আরাব
লেখকঃ- শায়খুল আদব ( আরবী সাহিত্যের পণ্ডিত) আল্লামা এ'জাজ আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি৷
সদরে মুফতী, দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত৷
জন্মঃ- ১৩০০ হিজরী
মৃত্যুঃ- ১৩ ই রজব রোজ মঙ্গলবার সুবহে সাদিকের সময় ৭৪ বছর বয়সে ১৪৭৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
( ভালো লাগলে নিজ ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করুন।)
Tuhin_Islam
Kuddus