কুরআন-সুন্নাহর আলোকে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর সহজ উপায় তুলে ধরা হলো। যে উপায়গুলো শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেবে এমনই নয় বরং তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় যথাযথ কার্যকরী। তাহলো-
> ইখলাস বা আন্তরিকতা: সফলতা অর্জনে যেমন ইখলাস বা আন্তরিকতার বিকল্প নেই। তেমনি স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতেও ইখলাসের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আর ইখলাসের মূল উপাদানই হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তাদেরকে এছাড়া কোরো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা আল-বায়্যিনাহ : আয়াত ৫) এ জন্যই স্মরণশক্তি ধরে রাখা কিংবা বাড়ানোর মূলমন্ত্রও কাজের প্রতি নিয়তের বিশুদ্ধতা, ইখলাস তথা যথাযথ আন্তরিকতা রাখা। এ সম্পর্কে বিশ্বনবি বলেন, ‘ব্যক্তির সব আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যার নিয়ত যত পরিশুদ্ধ ও ইখলাসপূর্ণ হবে তার কাজ তত মজুবত হবে। ইসলামিক স্কলার খুররাম মুরাদ বলেন, ‘উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেয়া শুরু করে তখন মানুষের কাছে বীজের আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায়। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।’ সুতরাং মুমিন মুসলমানের নিয়ত এমন হতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।
> দোয়া ও জিকির: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য মুমিন মুসলমানের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া ও জিকির করা যাতে তিনি সবার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে কুরআনুল কারিমের এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা- ﺎًﻤْﻠِﻋ ﻲِﻧْﺩِﺯ ِّﺏَّﺭ উচ্চারণ : ‘রাব্বি যিদনি ইলমা’ অর্থ : হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ১১৪)
> গোনাহ থেকে বিরত থাকা: আলো ও অন্ধকার এক সঙ্গে থাকতে পারে না। জ্ঞান হলো আলো আর গোনাহ হলো অন্ধকার। তাই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হলে অবশ্যই গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই মানুষের স্মরণ শক্তি লোপ পাবে না। তা দিন দিন বাড়বে। প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসঙ্গে থাকতে পারে না। ইমাম শাফেঈ রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘আমি (আমার শাইখ) ওয়াকিকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন- আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোনো পাপচারীকে দান করা হয় না।’
হজরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেন, ‘এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা! আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোনো কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া।’ (আল- খাতিব আল-জামি) সুতরাং যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভোঁতা হয়ে যায় তার অনুভূতি এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।