ইলমুল-কালামকে “কালাম” নামকরণের অনেক কারণ বা রহস্য বর্ণনা করা হয়। যথাঃ-
১. আল্লামা শাহরাসতানী লিখেছেন, এই ইলমকে 'কালাম' বলার উদ্দেশ্য হয়তো এটা ছিলো যে, আকীদার বিষয়সমূহের মধ্যে যে বিষয়ের উপর অধিক আলোচনা ও বাক- বিতন্ডা হতে থাকে তা ছিল আল্লাহর কালাম । অথবা,
২. এ কারণে যে, এই ইলম দর্শনের মুকাবিলায় সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং দর্শনের একটি শাখা (মানতিক/যুক্তিবিদ্যা) এর যে নাম ছিল, এটারও সেই নাম রাখা হয়েছে। (কারণ, মানতিক ও কালাম হল সমার্থক শব্দ।) এ ছাড়াও উলামায়ে কেরাম “কালাম” নামকরণের আরও বহুবিধ রহস্য বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ-
১. ইবনে খাল্লিকান মুহাম্মাদ আল-হুসাইন মু'তাযিলীর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, যেহেতু সর্বপ্রথম আকাইদ সম্পর্কিত মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিল আল্লাহর কালামকে নিয়ে, সেহেতু ইলমে আকাইদের নাম "আল-কালাম" হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
২. অন্য এক মতে এই ইলম শরীআত সম্পর্কে কালাম বা আলোচনা করার ক্ষমতা প্রদান করে থাকে বলে এটাকে ইলমে কালাম বলা হয়। কালাম শব্দের অর্থ হল কথা বলা । অথবা,
৩. এ নামকরণের রহস্য হল- প্রথম প্রথম এই ইলমের রচনাবলীতে অধ্যায় সমূহের শিরোনাম “আল-কালাম ফী কাযা ওয়া কাযা লিখিত হত বলে পরবর্তীকালে গোটা ইলমকে ইলমুল-কালাম নামে অভিহিত করা হয়।
৪. ইবনে খালদুনের মতে এই ইলমের নাম ইলমুল কালাম এ কারণে রাখা হয়েছে যে, এতে বিদআত- পন্থীদের সাথে আকাইল বিষয়ে মুনাজারা (তর্ক-বিতর্ক) স্থান পেয়েছে। এখানে কালাম কথাটি মুনাজারা বা তর্ক-বিতর্ক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫. শায়খ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ এ নামকরণের রহস্য এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, ইলমে কালামের ভিত্তি হল যুক্তি নির্ভর প্রমাণ। ফলে মুতাকাল্লিম ( বক্তা)-র কথা বলার সময় এটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এবং তাঁর বক্তব্যে তার প্রকাশ ঘটে। বক্তব্যের পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহ হতে দলীল পেশ করার সুযোগ তেমন মিলে না, বরং যুক্তিনির্ভর প্রমাণাদির মাধ্যমে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলি ইলমুল কালামে বর্ণিত হয় বলে মানতিক বা যুক্তি বিদ্যা (ইলমুল মানতিক ) এর সাথে এর সাদৃশ্য বিদ্যমান। সুতরাং এখানে মানতিক-এর পরিবর্তে কালাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেন। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বজায় থাকে।
৬. উপরোক্ত কারণসমূহ ছাড়া শরহে আকাইদ গ্রন্থে আল্লামা তাফতাযানী বর্ণিত কারণসমূহের মধ্যে আরও রয়েছেঃ এই ইলমকে কালাম বলার কারণ হল কালাম বা কথার মাধ্যমে যে ইলম প্রথমেই শিক্ষা প্রদান ও গ্রহণ করা ওয়াজিব তা হল ইলমে কালাম।
৭. এই ইলমের দলীল সমূহ শক্তিশালী হওয়ার কারণে এই ইলমই যেন কালাম বা কথা, অন্যটা যেন কালাম বা কথাই নয়। যেমন দুটো কথার মধ্যে দলীল প্রমাণে অধিক শক্তিশালী কথা সম্বন্ধে বলা হয় কালাম বা কথাতো এটাই।
৮. এই ইলম কুরআন হাদীছের দলীলাদি সমর্থিত নিশ্চিত দলীল সমূহের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় মনের উপর এর প্রভাব বেশী হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ইলমে কালাম। কারণ "কালাম" শব্দে "প্রভাব" থাকার ভাবার্থ রয়েছে। কালাম শব্দের মূল অর্থ হল জখম বা আহত করা।