সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (রাজত্বকাল: ১৫২০–১৫৬৬ খ্রি.) তাঁর দীর্ঘ ও গৌরবময় শাসনামলে শুধু বাহ্যিক যুদ্ধ ও সাফল্যের জন্যই পরিচিত নন; বরং নিজ পরিবারের সদস্যদের রক্তে রঞ্জিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর জন্যও ইতিহাসে বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) হয়ে আছেন।
চলুন আমরা ধাপে ধাপে দেখি —
তিনি তাঁর নিজের আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের কার কাট মৃত্যুদণ্ড দেন, এবং কেন -
১. পারগালি ইব্রাহিম পাশা (Pargalı İbrahim Pasha)
সম্পর্ক-
সুলতানের শৈশবের বন্ধু, পরবর্তীতে উজিরে আ’জম (Grand Vizier) ও তাঁর ছোট বোন হাতিজে সুলতানের স্বামী।
♦️ মৃত্যু ১৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দে, ইস্তানবুলের টোপকাপি প্রাসাদে।
♦️ কারণ -
★ অতি প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন।
★ রাজদরবারে “দ্বিতীয় সুলতান” নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
★ সরকারি চিঠিতে “সুলতান ইব্রাহিম” লেখা শুরু করেন।
★ পারস্যের সঙ্গে কূটনীতিতে সুলতানের মর্যাদার সমকক্ষ আচরণ করেন।
★ হুররাম সুলতানের প্ররোচনায় সুলতান সন্দেহ করেন যে ইব্রাহিম তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত।
♦️ পরিণাম -
১৫৩৬ সালে প্রাসাদে রাতের খাবারের পর তাঁবুতে গলা টিপে হত্যা করা হয়।
♦️ শাহজাদা মুস্তফা (Şehzade Mustafa)
সম্পর্ক: জ্যেষ্ঠ পুত্র; জন্ম মাহিদেভরান সুলতানের গর্ভে।
♦️ মৃত্যু - ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দে, কনিয়া (Konya)-র কাছে।
♦️ কারণ -
★ সেনাবাহিনী ও প্রজাদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তরাধিকারী ছিলেন।
★ হুররাম সুলতান ও তাঁর জামাতা রুস্তম পাশা ভয় পেতেন যে, মুস্তফা সিংহাসন দখল করবেন।
★ তাঁদের প্ররোচনায় সুলেমানের মনে সন্দেহ জন্মে — মুস্তফা নাকি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করছে।
♦️ পরিণাম -
পারস্য অভিযানের সময় তাঁবুর ভেতরেই সুলতানের আদেশে গলা টিপে হত্যা করা হয়।
৩. শাহজাদা বায়েজিদ (Şehzade Bayezid)
♦️ সম্পর্ক -
হুররাম সুলতানের পুত্র; শাহজাদা সেলিম (পরবর্তীতে সেলিম II)-এর ভাই।
♦️ মৃত্যু - ১৫৬১ খ্রিষ্টাব্দে, পারস্যে নির্বাসনে।
♦️ কারণ -
★ সুলেমান মৃত্যুর আগে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন।
★ ভাইদের মধ্যে বায়েজিদ ও সেলিমের সংঘর্ষ শুরু হয়।
★ বায়েজিদ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং নিজ সেনা গঠন করেন।
★ পরাজয়ের পর পারস্যে (সাফাভিদ সাম্রাজ্যে) আশ্রয় নেন।
★ সুলেমান পারস্য শাহ তাহমাসপের কাছে অনুরোধ করেন তাঁকে ফেরত দিতে বা মৃত্যুদণ্ড দিতে।
♦️ পরিণাম -
শাহ তাহমাসপের আদেশে ১৫৬১ সালে পারস্যে বায়েজিদ ও তাঁর চার পুত্রকে হত্যা করা হয়।
৪. পরোক্ষভাবে প্রভাবিত মৃত্যু - হাতিজে সুলতান
♦️ সম্পর্ক - সুলেমানের প্রিয় বোন, ইব্রাহিম পাশার স্ত্রী। পরিণাম স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন।
♦️ কারণ - স্বামী ইব্রাহিম পাশার মৃত্যুদণ্ড তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল।
♦️ যদিও তাঁকে সরাসরি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি, কিন্তু ইব্রাহিম পাশার মৃত্যুই তাঁর মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হিসেবে ইতিহাসে উল্লেখিত।
♦️ বিঃদ্রঃ- যথেষ্ট পর্যালোচনা দেখা যায় যে, বিশ্বস্ত ইতিহাসীয় উৎসে Süleyman the Magnificent (সুলতান সুলেমান)-এর বোনদের স্বামীদের মধ্যে অন্য কারও মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়েছে— এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রত্যক্ষভাবে পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র দুটি ক্ষেত্রে সাধারণভাবে উল্লেখ আছে যে -
"Ferhad Pasha (Ferhat Pasha)" - তিনি সুলেমানের বোন Beyhan Sultan-এর স্বামী বলে এক উৎসে বলা হয়েছে; উইকিমিডিয়া-কমনস ও অন্যান্য অনলাইনে জানা যায়, বিয়ের পরই তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে, এবং পরবর্তীতে সুলেমানের আদেশে মৃত্যুদণ্ড পায়।
কিন্তু এই তথ্য ‘বেশ সন্দেহভাজন’ হিসেবে ইতিহাসবিদদের দ্বারা আজও বিতর্কিত, কারণ উৎসভিত্তি দুর্বল। যেমন এক রেডিট আলোচনায় বলা হয়েছে -
“…there was an official Süleyman had inherited from his father… Ferhad was accused of crimes… which prompted the Sultan to order his execution.”
কিন্তু সেটি সার্বভৌম ইতিহাসবিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে নিশ্চিত নয়।
সম্ভবত সুলেমানের বোনদের স্বামীদের একাধিক ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড বা সতর্কতা রয়েছে, কিন্তু নির্ধারিত ও নিশ্চিত “মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে”-এরকম শুধু একটি বা দুইটি সন্দেহভাজন ঘটনা পাওয়া যায়, তাও সেগুলো ব্যাপক ইতিহাসভিত্তিক ও প্রমাণভিত্তিক নয়।