আপনি যদি মনে করেন আপনার উপর জ্বীনের আছর বা জাদু-তাবিজের প্রভাব আছে, তাহলে তা যাচাই করার জন্য কিছু ইসলামি পদ্ধতি ও নিয়মিত আমল আছে যেগুলো আপনি নিজেই করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে বলছি -
নিজে পরীক্ষা করার উপায় (ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে)
১. রুকাইয়া (ruqyah) দ্বারা পরীক্ষা -
রুকাইয়া শরঈয়া মানে হলো কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসের দোআ দ্বারা নিজেকে ঝাড়ফুঁক করা।
♦️ পদ্ধতি -
★ ওযু করে পরিষ্কার স্থানে বসুন।
★ নিচের আয়াতগুলো আন্তরিকভাবে ধীরে ধীরে পড়ুন বা শুনুন।
★ নিজে নিজের উপর (বিশেষত মাথা ও বুকের কাছে) ফুঁ দিন।
★ পড়ার জন্য আয়াতসমূহ -
- সূরা ফাতিহা (৭ বার)
- আয়াতুল কুরসি (বাকারাহ ২:২৫৫)
- সূরা ইখলাস - ৭ বার করে পড়ুন।
- সূরা ফালাক - ৭ বার করে পড়ুন।
- সূরা নাস - ৭ বার করে পড়ুন।
♦️ এই রুকিয়া পড়ার সময় যদি আপনি -
★ হঠাৎ মাথাব্যথা অনুভব করেন
★ গা কাঁপুনি দেয়
★ ঘুম পায় বা বমি আসে
★ ভয় লাগে বা মন চঞ্চল হয়ে পড়ে
তাহলে এগুলো আছর বা যাদুর প্রভাবের লক্ষণ হতে পারে।
২. ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখা -
নিম্নোক্ত স্বপ্নগুলো যদি বারবার দেখেন, তাহলে এটা জ্বীন বা যাদুর লক্ষণ হতে পারে -
★ সাপ, বিড়াল, কুকুর বা অদ্ভুত প্রাণী দেখা।
★ উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়া।
★ কোনো কিছু দ্বারা ধাওয়া খাওয়া।
★ বারবার দুঃস্বপ্নে জাগরণ।
★ নিজের শরীর বা মুখ পরিবর্তিত দেখতে পাওয়া।
৩. জীবনে হঠাৎ বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়া, যেমন -
★ হঠাৎ ব্যবসা বা চাকরিতে অস্বাভাবিক ক্ষতি।
★ সংসারে অশান্তি বা অকারণে ঝগড়া।
★ শরীরিক বা মানসিক দুর্বলতা কিন্তু চিকিৎসায় ভালো না হওয়া।
★ চিকিৎসা করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক, কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
৪. আত্মিক পরিবর্তন / আমলে অনাগ্রহ
★ ইবাদতে মন না বসা
★ নামাজে অস্থিরতা
★ কুরআন শুনলে অস্বস্তি
★ রুকাইয়া শুনলে মাথা ভার লাগা বা কান্না আসা।
♦️ করণীয় (প্রতিরোধ ও চিকিৎসা)
আপনার উপর যাদু বা জ্বীনের প্রভাব থাকুক আর না থাকুক, নিচের আমলগুলো নিয়মিত করলে ইংশা আল্লাহ্ সব ধরনের অপদ্রব্যের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবেন।
♦️ দৈনন্দিন আমল -
★ ৫ ওয়াক্ত নামাজ
★ ঘুমের আগে তিন কুল ও আয়াতুল কুরসি
★ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে (আসরের পর) ৩ বার করে সূরা ফালাক, সূরা নাস, সূরা ইখলাস
★ “لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ...” ১০০ বার
★ “أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ...” ঘুমানোর আগে
যা করণীয় নয় -
★ তাবিজ-কবচ ঝুলানো
★ পীর-ওলির মাজারে যাওয়া
★ ঝাড়ফুঁককারী মোল্লা/ফকিরের কাছে যাওয়া যারা কুরআনের বাইরে কিছু পড়ে।
★ নাম না জানা “কালো কাগজ”, ধোঁয়া, পানি দেওয়া ইত্যাদিতে বিশ্বাস করা।
♦️ সু-পরামর্শ -
নিজে নিজে পরীক্ষার পর যদি সন্দেহ আরও বাড়ে, তবে আপনি একজন বিশুদ্ধ আক্বীদার ইসলামি রুকইয়া বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন - যাঁরা শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে চিকিৎসা করেন।
মহান আল্লাহ্ পাক আপনাকে পরিপূর্ণ শিফা দান করুন, আমীন ইয়া আরহামার রাহিমীন।