হায়ারোগ্লিফিক (Hieroglyphic) হলো প্রাচীন মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি। এটি কেবল একটি বর্ণমালা নয়, বরং চিত্রভিত্তিক একটি জটিল লেখার ব্যবস্থা। নিচে এর বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হলো:
১. চিত্রলিপি (Pictographic): হায়ারোগ্লিফিক লিপির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতীকগুলো ছবি বা চিত্রের মতো। প্রতিটি প্রতীক কোনো বস্তু, প্রাণী বা ধারণাকে সরাসরি বোঝাতে পারত। যেমন, একটি পাখির ছবি সরাসরি একটি পাখিকেই নির্দেশ করতে পারত।
২. ধ্বনিতাত্ত্বিক লিপি (Phonetic): সময়ের সাথে সাথে হায়ারোগ্লিফিক লিপি কেবল চিত্রভিত্তিক থাকেনি। কিছু প্রতীক নির্দিষ্ট ধ্বনি বা অক্ষরের প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করে। এর ফলে শব্দ গঠন এবং ব্যাকরণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়। এই ধ্বনিভিত্তিক প্রতীকগুলো এক বা একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের (consonant) প্রতিনিধিত্ব করত; স্বরবর্ণ (vowel) সাধারণত লেখা হতো না।
৩. ভাবলিপি (Ideographic): কিছু হায়ারোগ্লিফিক প্রতীক কোনো বস্তু বা প্রাণীর সরাসরি চিত্র না হয়ে একটি ধারণা বা ভাব প্রকাশ করত। যেমন, সূর্যের চিত্র কেবল সূর্যকেই বোঝাত না, এটি দিন, আলো বা রাজকীয়তাকেও ইঙ্গিত করতে পারত।
৪. নির্ধারণকারী (Determinatives): হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে কিছু প্রতীক শব্দের শেষে ব্যবহৃত হতো, যা শব্দটির অর্থ স্পষ্ট করতে সাহায্য করত। এই নির্ধারণকারী প্রতীকগুলোর নিজস্ব কোনো ধ্বনিতাত্ত্বিক মান ছিল না, কিন্তু এরা শব্দটিকে কোন শ্রেণীতে ফেলা যায় (যেমন: মানুষ, প্রাণী, তরল পদার্থ) তা নির্দেশ করত।
৫. লেখার দিক: হায়ারোগ্লিফিক লিপি অনুভূমিক বা উল্লম্ব উভয় দিকেই লেখা যেত। লেখার দিক নির্ধারণ করার জন্য প্রতীকের মুখ কোন দিকে ফেরানো আছে তা দেখা হতো। প্রতীকগুলো যে দিকে মুখ করে থাকত, সেই দিক থেকেই পড়া শুরু করতে হতো।
৬. লিপির বিবর্তন: প্রাচীন মিশরের দীর্ঘ ইতিহাসে হায়ারোগ্লিফিক লিপির কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল, তবে এর মূল চিত্রভিত্তিক বৈশিষ্ট্য বজায় ছিল। পরবর্তীতে হায়ারোগ্লিফিকের সরলীকৃত রূপ হিসেবে হায়ারেটিক (Hieratic) এবং ডেমোটিক (Demotic) লিপির ব্যবহার শুরু হয়, যা মূলত প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহৃত হতো।
৭. হায়ারোগ্লিফিকের তাৎপর্য: হায়ারোগ্লিফিক লিপি প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাকে জানার এক অমূল্য উৎস। মন্দিরের দেওয়াল, সমাধিক্ষেত্র, স্তম্ভ এবং বিভিন্ন বস্তুর উপর খোদিত এই লিপি তাদের ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান করে।