পোল্ট্রির জন্য একটি সঠিক খামারের পরিবেশ তৈরি করতে হলে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিবেশ মুরগির স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নীচে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো:
১. স্থান নির্বাচন
-
উঁচু জমি: এমন জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না।
-
বাতাস চলাচল: খামার এমন স্থানে হতে হবে যেখানে প্রাকৃতিক বাতাস চলাচল সহজ হয়।
-
পর্যাপ্ত সূর্যালোক: সূর্যের আলো খামারে প্রবেশ করতে পারে এমন স্থান নির্বাচন করুন।
২. খামারের নকশা ও গঠন
-
সঠিক দিকনির্দেশনা: খামারের ছাদ পূর্ব-পশ্চিম দিকে রাখা যাতে রোদ সরাসরি পড়ে না।
-
ভেন্টিলেশন (বায়ু চলাচল): খামারের ভেতরে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত জানালা বা ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা।
-
জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা: পানি জমে না এমন নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
-
সুরক্ষা ব্যবস্থা: খামারের চারপাশে বেড়া বা জাল দিয়ে সুরক্ষিত রাখা।
৩. তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ
-
তাপমাত্রা:
-
ছানা মুরগির জন্য: ৩২-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
-
বয়স্ক মুরগির জন্য: ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
-
আর্দ্রতা: ৫০-৭০% আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।
৪. মেঝে ও লিটার ব্যবস্থা
-
মেঝে পরিষ্কার রাখা: পাকা মেঝে বা শুকনো মাটি ব্যবহার করুন।
-
লিটার উপাদান: ধান ভুসি, কাঠের গুঁড়ি বা খড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
-
লিটার পরিবর্তন: নিয়মিত লিটার পরিবর্তন করে খামার শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
৫. খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা
-
সুষম খাদ্য সরবরাহ: পোল্ট্রির জন্য সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করুন।
-
পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা: মুরগিকে সর্বদা পরিষ্কার ও টাটকা পানি সরবরাহ করুন।
-
খাদ্যদানের সরঞ্জাম: খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
৬. স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা
-
ব্যবস্থাপনা:
-
খামারে ঢোকার আগে পা পরিষ্কার করা বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করা।
-
খামারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা।
-
জীবাণুমুক্তকরণ: নিয়মিত খামার জীবাণুমুক্ত করুন।
-
মৃত মুরগি অপসারণ: দ্রুত মৃত মুরগি অপসারণ করুন।
-
পরজীবী নিয়ন্ত্রণ: কৃমি ও পোকামাকড় থেকে মুরগিকে সুরক্ষিত রাখুন।
৭. আলো ও অন্ধকারের সময়কাল
-
ছোট মুরগি: প্রথম সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা আলো দিন।
-
বয়স্ক মুরগি: প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা আলো এবং ৬-৮ ঘণ্টা অন্ধকার রাখুন।
৮. শব্দ ও চাপ নিয়ন্ত্রণ
-
শব্দ নিয়ন্ত্রণ: খামারে অপ্রয়োজনীয় শব্দ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি মুরগির জন্য স্ট্রেসের কারণ হতে পারে।
-
চাপ কমানো: পর্যাপ্ত জায়গা দিন, যাতে মুরগি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে।
৯. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
-
নিয়মিত টিকা প্রদান: গুরুত্বপূর্ণ টিকাগুলো সময়মতো প্রয়োগ করুন।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ: রোগ দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১০. উৎপাদনশীলতার পর্যবেক্ষণ
-
মুরগির ওজন, খাবার গ্রহণ, এবং ডিম উৎপাদনের হার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
সঠিকভাবে এই বিষয়গুলো মেনে চললে পোল্ট্রির জন্য স্বাস্থ্যকর এবং উৎপাদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।