সেচ ব্যবস্থার প্রকারভেদ ফসলের ধরণ, মাটি, জলবায়ু এবং পানির প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে। প্রধানত সেচ ব্যবস্থাগুলোকে নিচের ভাগে ভাগ করা যায়:
১. পৃষ্ঠ সেচ (Surface Irrigation):
এই পদ্ধতিতে মাটির ওপর দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। এটি প্রাচীনতম ও সবচেয়ে সাধারণ সেচ পদ্ধতি।
উপ-পদ্ধতিসমূহ:
-
ফ্লাড সেচ (Flood Irrigation):
জমির পুরো অংশে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়।
-
উপকারিতা: সহজ ও খরচ কম।
-
অসুবিধা: পানি অপচয় বেশি।
-
ফারো সেচ (Furrow Irrigation):
জমিতে খাল তৈরি করে ফসলের কাছে পানি পৌঁছানো হয়।
-
উপকারিতা: পানি সাশ্রয়ী।
-
অসুবিধা: খাল তৈরি সময়সাপেক্ষ।
-
বেসিন সেচ (Basin Irrigation):
জমি ছোট ছোট বেসিনে ভাগ করে পানি সরবরাহ করা হয়।
-
উপকারিতা: ধানের মতো জলপ্রীয় ফসলের জন্য কার্যকর।
-
অসুবিধা: সমতল জমি প্রয়োজন।
২. বাষ্পীয় সেচ (Sprinkler Irrigation):
এই পদ্ধতিতে পানিকে কৃত্রিম বৃষ্টির মতো ছিটিয়ে ফসলের গাছে পৌঁছানো হয়।
-
উপকারিতা:
-
অসমতল জমির জন্য কার্যকর।
-
পানি অপচয় কম।
-
কীটনাশক ও সার ছিটানোর জন্যও ব্যবহার করা যায়।
-
অসুবিধা:
-
স্থাপন খরচ বেশি।
-
বাতাসে পানির বাষ্পীভবন বেশি হতে পারে।
৩. ফোঁটা সেচ (Drip Irrigation):
ফসলের শিকড়ের কাছে সরাসরি ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়।
-
উপকারিতা:
-
সর্বাধিক পানি সাশ্রয়ী।
-
জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু পদ্ধতি।
-
লবণাক্ত মাটিতে কার্যকর।
-
অসুবিধা:
-
স্থাপন খরচ বেশি।
-
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
৪. ভূগর্ভস্থ সেচ (Subsurface Irrigation):
পানির পাইপ মাটির নিচে বসিয়ে শিকড়ের স্তরে সরাসরি পানি সরবরাহ করা হয়।
-
উপকারিতা:
-
পানি অপচয় একেবারে কম।
-
মাটির উপরিভাগ শুকনো থাকে, ফলে আগাছা কম হয়।
-
অসুবিধা:
৫. স্থানীয় সেচ (Localized Irrigation):
ফসলের নির্দিষ্ট অংশে পানি সরবরাহ করা হয়। ড্রিপ এবং মাইক্রো-স্প্রিঙ্কলার এই পদ্ধতির উদাহরণ।
৬. ম্যানুয়াল সেচ (Manual Irrigation):
বালতি, পাইপ, বা অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে হাতে করে পানি সরবরাহ করা হয়।
-
উপকারিতা:
-
অসুবিধা:
-
সময়সাপেক্ষ ও শ্রমনির্ভর।
৭. টাইডাল সেচ (Tidal Irrigation):
জোয়ার-ভাটার পানির উপর নির্ভর করে উপকূলীয় অঞ্চলে ফসলের জন্য সেচ সরবরাহ করা হয়।
৮. বৃষ্টিনির্ভর সেচ (Rainfed Irrigation):
প্রাকৃতিক বৃষ্টির মাধ্যমে জমির পানির চাহিদা মেটানো হয়।
উপসংহার:
সেচ ব্যবস্থার সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন ফসল, মাটি, পানি প্রাপ্যতা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। আধুনিক পদ্ধতিগুলো যেমন ড্রিপ ও স্প্রিঙ্কলার সেচ পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর হলেও তাদের স্থাপন খরচ বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের জন্য উন্নত সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার অপরিহার্য।