আলোক কণা বা ফোটন (Photon) হলো একটি ভরহীন কণা, তবে এটি শক্তি এবং গতি (momentum) বহন করে। ফোটন কীভাবে শক্তি স্থানান্তরিত করে, তা বুঝতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর নির্ভর করতে হবে।
ফোটনের বৈশিষ্ট্য:
-
ভরহীনতা:
ফোটনের স্থির ভর নেই, তবে এটি সর্বদা আলো বা তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গের গতিতে (299,792,458 মি/সে বা cc) চলে।
-
শক্তি (Energy):
ফোটনের শক্তি নির্ধারণ করা হয় এর কম্পাঙ্ক (frequency, ff) দ্বারা। শক্তি সম্পর্কিত সমীকরণ হলো:
E=hfE = h f
যেখানে EE হলো শক্তি, hh হলো প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক (6.626×10−34 J\cdotps6.626 \times 10^{-34} \, \text{J·s}), এবং ff হলো ফোটনের কম্পাঙ্ক।
-
গতিবেগ (Momentum):
ফোটনের গতিবেগ বা গতি রয়েছে, যা নির্ধারিত হয় এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য (λ\lambda) দ্বারা। গতিবেগ সম্পর্কিত সমীকরণ হলো:
p=hλp = \frac{h}{\lambda}
যেখানে pp হলো গতিবেগ এবং λ\lambda হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
ফোটন কীভাবে মহাশূন্যে শক্তি স্থানান্তরিত করে?
ফোটনের ভর না থাকলেও এটি তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তির একটি প্যাকেট হিসেবে কাজ করে এবং শক্তি স্থানান্তরিত করে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ায়:
-
তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ:
-
ফোটন হলো তড়িৎ (electric) এবং চৌম্বক (magnetic) ক্ষেত্রের কম্পনের মাধ্যমে তৈরি একটি তরঙ্গ।
-
এই তরঙ্গ শক্তি এবং তথ্য বহন করে এবং মহাশূন্যে প্রচারিত হয়, যেখানে মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
-
শক্তির স্থানান্তর:
-
যখন একটি ফোটন কোনো কণার (যেমন ইলেকট্রন) সাথে সংঘর্ষ করে, তখন এটি তার শক্তি এবং গতিবেগ কণাটিকে স্থানান্তরিত করতে পারে।
-
উদাহরণ: ফটোইলেকট্রিক প্রভাব, যেখানে ফোটন ইলেকট্রনকে উচ্ছিষ্ট করে, তার শক্তি সরবরাহের মাধ্যমে।
-
মহাকর্ষের প্রভাব:
-
যদিও ফোটনের ভর নেই, এটি শক্তি বহন করে বলে মহাকর্ষ তাকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং, যেখানে ফোটনের পথ মহাকর্ষের কারণে বাঁকানো হয়।
-
মহাকর্ষের প্রভাবে ফোটনের শক্তি পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন লাল সরণ (redshift) বা নীল সরণ (blueshift)।
-
তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তি সংরক্ষণ:
-
ফোটনের শক্তি এবং গতিবেগ সংরক্ষিত থাকে। এটি যখন কোনো কণার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে, তখন সেই কণা তার শক্তি শোষণ করে এবং নতুন গতি বা অবস্থা অর্জন করে।
-
উদাহরণ: সূর্য থেকে আগত ফোটন পৃথিবীতে শক্তি স্থানান্তরিত করে, যা উদ্ভিদের ফটোসিন্থেসিস এবং সৌর প্যানেলের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার:
ফোটনের স্থির ভর না থাকলেও এটি শক্তি (energy) এবং গতিবেগ (momentum) বহন করে এবং তা স্থানান্তর করতে পারে। এটি মহাশূন্যে তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায় এবং কণার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। ফোটনের এই বৈশিষ্ট্যই মহাবিশ্বে আলোর শক্তি স্থানান্তরের মূল কারণ।