দারুণ একটি প্রশ্ন! পৃথিবী তো মহাশূন্যেই নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। মহাশূন্যে বাতাস নেই অথচ পৃথিবীতে বাতাস। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এটা কি ব্যতিক্রম? যদি তা-ই হয়, তাহলে এই ব্যতিক্রম কীভাবে হলো?
সন্দেহ নেই এটা ব্যতিক্রম এবং শুধু তা-ই নয়, বলা যায় অদ্বিতীয় ব্যতিক্রম। অন্তত আমাদের সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহে পৃথিবীর মতো অক্সিজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল নেই। আজ পৃথিবীতে বাতাস আছে, কিন্তু প্রথমে ছিল না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সূর্য, পৃথিবীসহ অন্য গ্রহগুলো একই সময়ে সৃষ্টি হয়। সেই জন্মলগ্নে পৃথিবীতে সমুদ্র বা বাতাস ছিল না। যদি থাকত, তাহলে প্রাথমিক পর্বের তীব্র সৌরবায়ুর ঝাপটায় উড়ে যেত। পৃথিবীর আকাশে বাতাস এসেছে পরে।
আদি যুগে পৃথিবীতে লাখ লাখ আগ্নেয়গিরি ছিল। প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত হতো। অনেক বাষ্প বের হতো। বাষ্পে রয়েছে পানির উপাদান—দুইটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণু। আগ্নেয়গিরি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অ্যামোনিয়া গ্যাসও বের হতো। এসব মিলেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল।
প্রথম দিকে বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানিতে বেশি হারে দ্রবীভূত হয়। পানির ব্যাকটেরিয়া সূর্যরশ্মি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন বাতাসে ছেড়ে দেয়। এভাবে বাতাসে অক্সিজেনের হার বাড়ে। অন্যদিকে অ্যামোনিয়ার অণু তীব্র সূর্যরশ্মির প্রভাবে বিভক্ত হয়ে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন তৈরি করে। এভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন, ২১ ভাগ অক্সিজেন ও অল্প মাত্রার অন্যান্য কিছু গ্যাস সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই বায়ুমণ্ডলই আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম একটি শর্তে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য গ্রহে হালকা বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্ব রয়েছে। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই হালকা। এর ঘনত্ব আমাদের বায়ুমণ্ডলের ১০০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ। অক্সিজেন প্রায় নেই। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন প্রভৃতি বড় গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন ও অ্যামোনিয়া রয়েছে।
তাই বলা যায়, একমাত্র আমাদের পৃথিবীতেই মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর বেঁচে থাকার মতো বায়ুমণ্ডল আছে।