গবেষণায় নির্ভরযোগ্যতা (Reliability) এবং প্রমাণযোগ্যতা (Validity)—এই দুটি ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও তারা ভিন্ন দিক নির্দেশ করে। নিচে তাদের পার্থক্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. নির্ভরযোগ্যতা (Reliability):
নির্ভরযোগ্যতা বোঝায়, কোনো গবেষণায় উপাত্ত বা ফলাফল কতটা সুসঙ্গত (consistent) এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য (repeatable)।
মূল বৈশিষ্ট্য:
-
সামঞ্জস্য: গবেষণা যদি বারবার করা হয়, তাহলে কি একই ফলাফল পাওয়া যাবে?
-
স্থিতিশীলতা: সময়ের সাথে সাথে ফলাফল কি একই রকম থাকে?
-
নির্ভুলতা: উপাত্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়া বা যন্ত্র কতটা নির্ভুলভাবে কাজ করে?
উদাহরণ:
একটি থার্মোমিটার যদি বারবার একই তাপমাত্রা দেখায়, তবে এটি নির্ভরযোগ্য।
পরীক্ষার ধরণ:
-
টেস্ট-রিটেস্ট (Test-Retest): একই টেস্ট বারবার করেও যদি একই ফলাফল আসে।
-
অভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্য (Internal Consistency): একই পরীক্ষার অংশগুলো যদি সঙ্গতিপূর্ণ ফলাফল দেয়।
-
আন্তঃপর্যবেক্ষক নির্ভরযোগ্যতা (Inter-Rater Reliability): বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের রায় বা সিদ্ধান্ত একরকম হলে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত হয়।
২. প্রমাণযোগ্যতা (Validity):
প্রমাণযোগ্যতা বোঝায়, গবেষণায় যা পরিমাপ করা হচ্ছে তা আসলেই কি সঠিকভাবে প্রকৃত ধারণা বা উদ্দেশ্য পরিমাপ করছে?
মূল বৈশিষ্ট্য:
-
প্রাসঙ্গিকতা: গবেষণার ফলাফল আসল উদ্দেশ্যের সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক?
-
সঠিকতা: গবেষণা কি বাস্তবতা বা প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে প্রতিফলিত করছে?
-
উপযোগিতা: গবেষণার ফলাফল কি ব্যবহারিক দিক থেকে কার্যকর?
উদাহরণ:
একটি থার্মোমিটার যদি প্রকৃত তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করে, তবে এটি প্রমাণযোগ্য।
পরীক্ষার ধরণ:
-
বিষয়বস্তুর বৈধতা (Content Validity): প্রশ্নপত্র বা টুলের বিষয়বস্তু গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
-
গঠনমূলক বৈধতা (Construct Validity): গবেষণা প্রকৃত ধারণা বা কাঠামো সঠিকভাবে পরিমাপ করছে কি না।
-
মান্য বৈধতা (Criterion Validity): গবেষণার ফলাফল কি বাস্তব উপাত্তের সাথে তুলনামূলকভাবে প্রমাণিত হতে পারে?
৩. মূল পার্থক্য:
বৈশিষ্ট্য
|
নির্ভরযোগ্যতা (Reliability)
|
প্রমাণযোগ্যতা (Validity)
|
সংজ্ঞা
|
ফলাফল কতটা পুনরাবৃত্তিযোগ্য বা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
|
ফলাফল কি প্রকৃত উদ্দেশ্য বা ধারণাকে সঠিকভাবে পরিমাপ করছে?
|
মূল ফোকাস
|
স্থায়িত্ব এবং সামঞ্জস্য।
|
সঠিকতা এবং যথার্থতা।
|
উদাহরণ
|
একটি থার্মোমিটার প্রতিবার একই তাপমাত্রা দেখায়।
|
একটি থার্মোমিটার সঠিক তাপমাত্রা পরিমাপ করে।
|
পরীক্ষার ধরণ
|
টেস্ট-রিটেস্ট, আন্তঃপর্যবেক্ষণ নির্ভরযোগ্যতা।
|
বিষয়বস্তু, গঠনমূলক ও মান্য বৈধতা পরীক্ষা।
|
৪. সম্পর্ক:
-
নির্ভরযোগ্যতা ছাড়া প্রমাণযোগ্যতা অর্জন করা যায় না।
-
তবে, একটি টুল নির্ভরযোগ্য হতে পারে, কিন্তু সেটি প্রমাণযোগ্য নাও হতে পারে।
-
উদাহরণ: একটি মানদণ্ড যদি বারবার ভুল ফলাফল দেয়, তবে এটি নির্ভরযোগ্য কিন্তু প্রমাণযোগ্য নয়।
উপসংহার:
নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে যে গবেষণার ফলাফল বারবার একরকম আসে, আর প্রমাণযোগ্যতা নিশ্চিত করে যে গবেষণাটি সঠিকভাবে যা পরিমাপ করতে চায় তা-ই পরিমাপ করছে। কার্যকর গবেষণার জন্য এই দুটি গুণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।