DDoS (ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস) হল এক ধরনের সাইবার আক্রমণ যেখানে কোনো ওয়েবসাইট বা অনলাইন সার্ভিসের উপর একসঙ্গে অনেকগুলো কম্পিউটার বা ডিভাইস থেকে ট্র্যাফিকের বন্যা সৃষ্টি করা হয়, যার ফলে ওয়েবসাইটটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য অনুপলব্ধ হয়ে পড়ে।
DDoS আক্রমণ কিভাবে কাজ করে:
DDoS আক্রমণে, হ্যাকাররা প্রথমে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে অনেকগুলো কম্পিউটার বা ডিভাইসকে (যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইওটি ডিভাইস ইত্যাদি) সংক্রমিত করে একটি "বটনেট" তৈরি করে। এই সংক্রমিত ডিভাইসগুলোকে "জম্বি" বলা হয়, কারণ এগুলো হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তাদের নির্দেশ মতো কাজ করে।
যখন হ্যাকার কোনো ওয়েবসাইট বা সার্ভিসের উপর আক্রমণ করতে চায়, তখন সে বটনেটের জম্বি ডিভাইসগুলোকে নির্দেশ দেয় ওই ওয়েবসাইটে একসঙ্গে অনেক রিকোয়েস্ট পাঠানোর জন্য। এর ফলে ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিকের বন্যা সৃষ্টি হয় এবং সার্ভারটি এই বিপুল পরিমাণ রিকোয়েস্ট সামলাতে না পেরে ক্র্যাশ করে বা ধীর হয়ে যায়, যার ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারে না।
DDoS আক্রমণের কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি:
* ভলিউমেট্রিক অ্যাটাক (Volumetric Attack): এই পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে ট্র্যাফিক পাঠিয়ে টার্গেটের ব্যান্ডউইথ নষ্ট করে দেওয়া হয়। UDP ফ্লাড, ICMP ফ্লাড এবং DNS অ্যামপ্লিফিকেশন এই ধরনের আক্রমণের উদাহরণ।
* প্রোটোকল অ্যাটাক (Protocol Attack): এই পদ্ধতিতে সার্ভারের রিসোর্স নষ্ট করার জন্য নেটওয়ার্ক প্রোটোকলগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া হয়। SYN ফ্লাড এই ধরনের আক্রমণের উদাহরণ।
* অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার অ্যাটাক (Application Layer Attack): এই পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটের অ্যাপ্লিকেশন লেয়ারে আক্রমণ করা হয়, যেমন HTTP ফ্লাড।
DDoS এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কৌশল:
DDoS আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া কঠিন, কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করে এর প্রভাব কমানো যায়:
* ওভার-প্রভিশনিং (Over-provisioning): ওয়েবসাইটে যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ এবং সার্ভার রিসোর্স রাখা যাতে ট্র্যাফিকের চাপ সামলানো যায়।
* ফায়ারওয়াল এবং ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (Firewall and Intrusion Detection System): নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক মনিটর করা এবং ক্ষতিকারক ট্র্যাফিক ফিল্টার করার জন্য ফায়ারওয়াল এবং আইডিএস ব্যবহার করা।
* কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDN): CDN ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বিভিন্ন সার্ভারে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ফলে একটি সার্ভারের উপর চাপ কম পড়ে।
* রেট লিমিটিং (Rate Limiting): একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো আইপি অ্যাড্রেস থেকে কতগুলো রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা হবে, তা নির্ধারণ করা।
* ব্ল্যাকহোল রাউটিং (Blackhole Routing): DDoS আক্রমণের সময় আক্রান্ত আইপি অ্যাড্রেসের ট্র্যাফিক অন্য একটি সার্ভারে ডাইভার্ট করে দেওয়া, যেখানে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
* DDoS প্রোটেকশন সার্ভিস: অনেক কোম্পানি DDoS প্রোটেকশন সার্ভিস প্রদান করে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে DDoS আক্রমণ শনাক্ত করে এবং তা প্রতিহত করে।
উপরে দেওয়া কৌশলগুলো অবলম্বন করে DDoS আক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায় এবং ওয়েবসাইটের স্বাভাবিক কার্যক্র
ম বজায় রাখা যায়।