জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) কী?
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) হল নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA), এবং কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থার (CSA) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি অত্যাধুনিক স্পেস টেলিস্কোপ। এটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি এবং মহাবিশ্বের প্রথম যুগ, গ্যালাক্সি গঠন, নক্ষত্রের জন্ম এবং বহির্জাগতিক গ্রহের (Exoplanet) তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-
উন্মোচন: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়।
-
অবস্থান: এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে (L2 ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে) অবস্থিত।
-
প্রধান আয়না: এর ৬.৫ মিটার চওড়া গোল্ড-কোটেড প্রধান আয়না রয়েছে, যা হাবলের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বড়।
-
ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণ: এটি প্রধানত ইনফ্রারেড রশ্মি পর্যবেক্ষণ করে, যা দূরবর্তী গ্যালাক্সি ও নক্ষত্রের গঠন বিশ্লেষণে অত্যন্ত কার্যকর।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের বৈশিষ্ট্য
-
ইনফ্রারেড ডিটেকশন:
মহাবিশ্বের প্রাচীনতম আলোর রেডশিফটেড ইনফ্রারেড তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।
-
এটি এমন গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে পারে যা প্রায় ১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগের।
-
তাপ নিরোধক ব্যবস্থা:
টেলিস্কোপের পাঁচ স্তরের সানশিল্ড সূর্যের তাপ থেকে এটি সুরক্ষিত রাখে, যা এটিকে অত্যন্ত ঠান্ডা অবস্থায় কাজ করতে সাহায্য করে।
-
মহাকর্ষীয় লেন্সিং ব্যবহার:
মহাকাশের বৃহৎ গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলিকে প্রাকৃতিক টেলিস্কোপ হিসেবে ব্যবহার করে আরো দূরের অবজেক্ট পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
জেমস ওয়েব কীভাবে মহাবিশ্ব সম্পর্কে তথ্য দেয়?
-
মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ:
-
এটি মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায়ে গঠিত গ্যালাক্সিগুলোর গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য দেয়।
-
JWST প্রথম গ্যালাক্সি এবং তারা কীভাবে তৈরি হয়েছিল তা বোঝার জন্য নতুন অন্তর্দৃষ্টি দেয়।
-
নক্ষত্রের জন্মস্থান অধ্যয়ন:
-
ধূলি এবং গ্যাসের ক্লাউডের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নতুন নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করে।
-
নক্ষত্র গঠনের প্রক্রিয়া এবং তাদের চারপাশের গ্রহীয় ব্যবস্থা তৈরির রহস্য উন্মোচন করে।
-
এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ:
-
বহির্জাগতিক গ্রহের বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করে।
-
জীবনধারণযোগ্য এলাকা এবং সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্ব বিশ্লেষণ করতে পারে।
-
উদাহরণ: JWST এর মাধ্যমে গ্রহে পানি, মিথেন, এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো উপাদান শনাক্ত করা সম্ভব।
-
ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি:
-
মহাবিশ্বের প্রসারণ এবং ডার্ক এনার্জির প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে সাহায্য করে।
-
ব্ল্যাক হোল এবং সুপারনোভা:
-
ব্ল্যাক হোলের আশপাশের বস্তু এবং তাদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে।
-
সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরিমাণগত বৈশিষ্ট্য বোঝায়।
জেমস ওয়েবের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য
-
প্রাচীনতম আলো শনাক্ত:
জেমস ওয়েব প্রাচীনতম গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো শনাক্ত করেছে, যা মহাবিশ্বের শুরুর সময় সম্পর্কে তথ্য দেয়।
-
কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি শনাক্ত:
এক্সোপ্ল্যানেট WASP-39b এর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।
-
ধূলিকণা ভেদ করা:
নক্ষত্র গঠন অঞ্চল এবং ধূলি মেঘের আড়ালে থাকা গ্যালাক্সি বিশ্লেষণ করে।
জেমস ওয়েব এবং হাবলের মধ্যে তুলনা
বৈশিষ্ট্য
|
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ
|
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ
|
তরঙ্গদৈর্ঘ্য
|
ইনফ্রারেড (0.6-28 মাইক্রন)
|
ভিজিবল এবং আল্ট্রাভায়োলেট
|
আয়নার আকার
|
৬.৫ মিটার
|
২.৪ মিটার
|
অবস্থান
|
L2 ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট
|
পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথ
|
প্রধান লক্ষ্য
|
প্রাচীন গ্যালাক্সি, এক্সোপ্ল্যানেট, নক্ষত্র গঠন
|
নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, সুপারনোভা
|
উপসংহার
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের অজানা অধ্যায় উন্মোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশন। এটি মহাবিশ্বের জন্ম ও বিবর্তন সম্পর্কে নতুন জ্ঞান প্রদান করছে এবং আমাদের স্থানিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করছে।