জিডিপিআর (GDPR), অর্থাৎ জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন, হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সুরক্ষা আইন। এটি ২০১৬ সালে প্রণীত হয় এবং ২০১৮ সালের ২৫শে মে থেকে কার্যকর হয়। জিডিপিআর শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই নয়, বিশ্বব্যাপী ডেটা সুরক্ষা এবং ব্যবসার উপর এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
জিডিপিআর-এর মূল লক্ষ্য:
* ব্যক্তিদের তাদের ব্যক্তিগত ডেটার উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো।
* ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে ডেটা সুরক্ষা আইনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য আনা।
* ইইউ নাগরিকদের ডেটা প্রক্রিয়াকরণকারী সংস্থাগুলির জন্য একটি একক, সরলীকৃত আইনি কাঠামো তৈরি করা, তা সংস্থাটি ইইউ-এর মধ্যে থাকুক বা বাইরে।
জিডিপিআর-এর প্রভাব:
* বিশ্বব্যাপী প্রভাব: জিডিপিআর শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যদি কোনো সংস্থা ইইউ নাগরিকদের ডেটা প্রক্রিয়া করে, তাহলে সেই সংস্থা যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে জিডিপিআর মেনে চলতে হবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলির ডেটা সুরক্ষা নীতি এবং প্রক্রিয়াগুলিতে পরিবর্তন এসেছে।
* ব্যক্তিগত ডেটার সংজ্ঞা সম্প্রসারণ: জিডিপিআর ব্যক্তিগত ডেটার একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে নাম, ঠিকানা, ইমেল, আইপি ঠিকানা, কুকিজ, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত।
* অধিকার প্রতিষ্ঠা: জিডিপিআর ব্যক্তিদের বেশ কিছু অধিকার দিয়েছে, যেমন:
* অ্যাক্সেসের অধিকার (Right of Access): ব্যক্তি তার সম্পর্কে কী ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে তা জানতে পারবে।
* সংশোধনের অধিকার (Right to Rectification): ভুল ডেটা সংশোধন করার অধিকার।
* মুছে ফেলার অধিকার (Right to Erasure) ("ভুলে যাওয়ার অধিকার" নামেও পরিচিত): কিছু ক্ষেত্রে ডেটা মুছে ফেলার অধিকার।
* প্রক্রিয়াকরণে সীমাবদ্ধতার অধিকার (Right to Restriction of Processing): কিছু পরিস্থিতিতে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ সীমিত করার অধিকার।
* ডেটা বহনযোগ্যতার অধিকার (Right to Data Portability): নিজের ডেটা অন্য সেবাদাতাকে স্থানান্তরের অধিকার।
* আপত্তি করার অধিকার (Right to Object): কিছু ক্ষেত্রে ডেটা প্রক্রিয়াকরণে আপত্তি জানানোর অধিকার।
* কঠোর জরিমানা: জিডিপিআর লঙ্ঘনকারী সংস্থাগুলির জন্য কঠোর জরিমানার বিধান রয়েছে। লঙ্ঘনের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে সর্বোচ্চ জরিমানা হতে পারে €20 মিলিয়ন ইউরো অথবা বার্ষিক বিশ্বব্যাপী আয়ের ৪%, যেটি বেশি।
* ডেটা সুরক্ষা অফিসার (DPO) নিয়োগ: কিছু সংস্থাকে একজন ডেটা সুরক্ষা অফিসার (DPO) নিয়োগ করতে হয়, যিনি ডেটা সুরক্ষা নীতিগুলির তত্ত্বাবধান করেন।
আইনি চ্যালেঞ্জ:
* ব্যাখ্যার ভিন্নতা: জিডিপিআর-এর কিছু অংশের ব্যাখ্যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হতে পারে, যা সংস্থাগুলির জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
* আন্তর্জাতিক ডেটা স্থানান্তর: ইইউ থেকে বাইরের দেশে ডেটা স্থানান্তর একটি জটিল প্রক্রিয়া, কারণ জিডিপিআর ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মকানুন আরোপ করে।
* প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ: জিডিপিআর মেনে চলার জন্য সংস্থাগুলিকে তাদের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়াগুলিতে পরিবর্তন আনতে হয়, যা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
* ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসার জন্য বোঝা: জিডিপিআর-এর নিয়মকানুন ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করতে পারে, যাদের সীমিত সম্পদ রয়েছে।
* বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ: জিডিপিআর-এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ একটি চলমান চ্যালেঞ্জ।
জিডিপিআর ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন মান স্থাপন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী আইন এবং ব্যবসার উপর এর প্রভাব অনস্বীকার্য। সংস্থাগুলিকে তাদের ডেটা সুরক্ষা নীতি এবং প্রক্রিয়াগুলি পর্যালোচনা এবং আপডেট করতে হবে, যাতে তারা জিডিপিআর মেনে চলতে পারে এবং তাদের গ্রাহকদের ডেটার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।