ইন্টারনেটে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্রাউজিং করার বেশ কিছু উপায় আছে। তবে একেবারে শতভাগ পরিচয় গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব, তবুও কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের অনলাইন কার্যক্রমের গোপনীয়তা অনেকখানি বাড়ানো যায়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপায় আলোচনা করা হলো:
১. ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার:
ভিপিএন আপনার ইন্টারনেট সংযোগকে এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার আইপি অ্যাড্রেস গোপন রাখে। এর ফলে আপনার অনলাইন কার্যকলাপ ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা:
* আইপি অ্যাড্রেস মাস্কিং: আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস গোপন করে অন্য একটি সার্ভারের আইপি অ্যাড্রেস দেখায়।
* এনক্রিপশন: আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করার ফলে হ্যাকারদের পক্ষে ডেটা ইন্টারসেপ্ট করা কঠিন হয়।
* ভূ-অবস্থান পরিবর্তন: আপনি বিভিন্ন দেশের সার্ভারের সাথে কানেক্ট করে আপনার ভার্চুয়াল লোকেশন পরিবর্তন করতে পারেন।
কিছু জনপ্রিয় ভিপিএন সার্ভিস: NordVPN, ExpressVPN, CyberGhost, Surfshark ইত্যাদি। তবে বিনামূল্যে ভিপিএন ব্যবহারে কিছু ঝুঁকি থাকে, তাই নির্ভরযোগ্য পেইড ভিপিএন ব্যবহার করা উত্তম।
২. টর ব্রাউজার (Tor Browser) ব্যবহার:
টর ব্রাউজার একটি বিশেষ ব্রাউজার যা আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে বিভিন্ন সার্ভারের মাধ্যমে ঘুরিয়ে আপনার পরিচয় গোপন রাখে। এটি "অনিয়ন রাউটিং" এর মাধ্যমে কাজ করে। টর ব্যবহারের সুবিধা:
* উচ্চমাত্রার অ্যানোনিমিটি: একাধিক স্তরের এনক্রিপশন এবং রাউটিং এর মাধ্যমে পরিচয় গোপন রাখে।
* সেন্সরশিপ বাইপাস: যেসব ওয়েবসাইটে প্রবেশাধিকার সীমিত, টর এর মাধ্যমে সেগুলোতে প্রবেশ করা যায়।
তবে টর ব্যবহারের কিছু অসুবিধা আছে:
* ইন্টারনেট স্পীড ধীর হতে পারে।
* কিছু ওয়েবসাইট টর ব্যবহারকারীদের ব্লক করে দেয়।
৩. প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার:
প্রক্সি সার্ভার আপনার এবং ওয়েবসাইটের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার আইপি অ্যাড্রেস গোপন রাখতে সাহায্য করে। তবে ভিপিএন এর তুলনায় প্রক্সি কম নিরাপদ।
৪. সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তন:
গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন আপনার সার্চ হিস্টরি ট্র্যাক করে। DuckDuckGo এর মতো প্রাইভেসি-ফোকাসড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আপনি এই ট্র্যাকিং এড়াতে পারেন।
৫. ব্রাউজার সেটিংস পরিবর্তন:
* ব্রাউজারের কুকিজ এবং ক্যাশে নিয়মিত ক্লিয়ার করুন।
* "ডু নট ট্র্যাক" অপশনটি এনাবল করুন।
* ব্রাউজারের প্রাইভেসি সেটিংস কনফিগার করুন।
৬. অপারেটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যার আপডেট রাখুন:
লেটেস্ট সিকিউরিটি প্যাচ আপনার ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
৭. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্কতা:
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সাধারণত অসুরক্ষিত থাকে। তাই এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময় ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত।
৮. সোশ্যাল মিডিয়াতে কম তথ্য শেয়ার করুন:
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য কম শেয়ার করে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
৯. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) ব্যবহার করুন:
আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোতে 2FA এনাবল করে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়াতে পারেন।
উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি ইন্টারনেটে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্রাউজিং করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, অনলাইনে সম্পূর্ণভাবে পরিচয় গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই নিজের অনলাইন কার্যকলা
পের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।