কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট (Quantum Entanglement) হল একটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ধারণা, যেখানে দুটি বা তার বেশি কণা (যেমন ফোটন, ইলেকট্রন ইত্যাদি) এমনভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে যে, তাদের অবস্থা (যেমন স্পিন, পোলারাইজেশন বা অবস্থান) একে অপরের সাথে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, একটি কণার অবস্থার পরিবর্তন হলে, অন্য কণার অবস্থাও তৎক্ষণাৎ পরিবর্তিত হয়, যতদূরই তারা একে অপর থেকে দূরে থাকুক না কেন।
এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো "অস্পষ্টতা"—অর্থাৎ, এক কণার অবস্থা যখনই মাপা হয়, তখন অন্য কণার অবস্থা নির্ধারিত হয়ে যায়, যদিও সেগুলো একে অপর থেকে দূরে বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে। এর মানে হলো, এক কণার অবস্থা জানার মাধ্যমে, আপনি অন্য কণার অবস্থা আগাম জানবেন, তবে এরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ না করেও এটি ঘটে। কোয়ান্টাম তত্ত্বে এটিকে বলা হয় "নন-লোকালিটির" উদাহরণ।
এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট কিভাবে চিরায়ত পদার্থবিদ্যার ধারণার বিপরীত?
চিরায়ত (ক্লাসিক্যাল) পদার্থবিদ্যার ধারণায়, যেমন নিউটনের পদার্থবিদ্যায় বা আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতায়, একটি কণার অবস্থা স্থান এবং সময়ের নির্দিষ্ট স্থান (লোকাল) এবং অন্য কণার অবস্থার ওপর কোন প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ, দুইটি কণার মধ্যে সংযোগ বা সম্পর্ক থাকতে হলে তাদের একটি নির্দিষ্ট উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে—যেমন শক্তির বা তথ্যের মাধ্যমে।
কিন্তু কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্টে, "লোকালিটি" ভেঙে যায়। অর্থাৎ, এক কণার অবস্থা পরিবর্তন হলে, তা অন্য কণার অবস্থাকে তৎক্ষণাৎ প্রভাবিত করতে পারে, দূরত্বের কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়াই। এই অদ্ভুত ঘটনা "নন-লোকাল সংযোগ" এর উদাহরণ, যা চিরায়ত পদার্থবিদ্যার ধারণার বিপরীতে দাঁড়িয়ে।
আইনস্টাইনের মন্তব্য: এটি নিয়ে আইনস্টাইন খুবই বিস্মিত হয়েছিলেন এবং তিনি একে "ভূতের মতো দূরবর্তী প্রভাব" (spooky action at a distance) বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এমন কিছু ঘটে না এবং এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ত্রুটি হতে পারে। তবে পরবর্তীতে একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, যা কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার জটিলতা ও বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত।