কোয়ান্টাম টানেলিং (Quantum Tunneling) হল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যেখানে কণা (particle) একটি শক্তি বাধা (energy barrier) অতিক্রম করতে সক্ষম হয়, যদিও শাস্ত্রীয় (classical) পদার্থবিজ্ঞানের মতে কণাটির সেই শক্তি বাধা অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি নেই।
কোয়ান্টাম টানেলিং কীভাবে কাজ করে?
-
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, কণার অবস্থানকে একটি "কণার তরঙ্গ ফাংশন" (wave function) দ্বারা বর্ণনা করা হয়, যা বিভিন্ন স্থানে কণার উপস্থিতির সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
-
যদি কোনো শক্তি বাধা উপস্থিত থাকে, তবে শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানে কণাটি বাধার মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, যদি তার শক্তি বাধার উচ্চতার চেয়ে কম হয়।
-
কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, তরঙ্গ ফাংশন বাধার মধ্য দিয়ে কিছুটা প্রসারিত হয়, যা নির্দেশ করে যে কণাটির একটি সম্ভাবনা রয়েছে বাধার অন্য পাশে উপস্থিত থাকার।
-
এই প্রক্রিয়াকেই কোয়ান্টাম টানেলিং বলা হয়। এটি শুধুমাত্র সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ঘটে এবং কণার শক্তি বাধা যত বেশি হয়, টানেলিংয়ের সম্ভাবনা তত কমে যায়।
কোন প্রযুক্তিতে কোয়ান্টাম টানেলিং ব্যবহৃত হয়?
কোয়ান্টাম টানেলিং বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে প্রধান কিছু উদাহরণ হলো:
-
টানেল ডায়োড (Tunnel Diode):
-
একটি বিশেষ ধরনের সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস যেখানে কোয়ান্টাম টানেলিং ব্যবহৃত হয় দ্রুত গতির ইলেকট্রনিক সুইচিংয়ের জন্য।
-
এটি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাপ্লিকেশন এবং মাইক্রোওয়েভ সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।
-
ফিল্ড এমিশন মাইক্রোস্কোপ (Field Emission Microscopy):
-
এই ডিভাইস ইলেকট্রন টানেলিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ রেজোলিউশনে ছবির বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
-
এসটিএম (Scanning Tunneling Microscope):
-
এটি একটি শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ যা কণার টানেলিং প্রভাব ব্যবহার করে পরমাণু এবং অণুর পৃষ্ঠ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।
-
ফ্ল্যাশ মেমরি:
-
ন্যানোস্কেল ডিভাইসে ইলেকট্রনের টানেলিং ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়।
-
পারমাণবিক সংযোজন (Nuclear Fusion):
-
সূর্যের মতো তারা গঠনে পারমাণবিক সংযোজনে কোয়ান্টাম টানেলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে প্রোটন এবং নিউট্রন বাধা অতিক্রম করে একত্রিত হয়।
-
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং:
-
কোয়ান্টাম টানেলিং কোয়ান্টাম বিট (qubit)-এর দ্রুত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাস্তব জীবনের উদাহরণ:
-
সূর্য বা তারার অভ্যন্তরে উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের কারণে প্রোটনরা টানেলিংয়ের মাধ্যমে ফিউশন প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এটি আমাদের সৌরজগতের শক্তির মূল উৎস।
কোয়ান্টাম টানেলিং মূলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখা যায় না, তবে এটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।