বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী (বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং সংশোধিত আইনসমূহ), কর্মচারীদের মজুরি এবং শর্তাবলীর ব্যাপারে নিয়োগকর্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো কর্মক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নিচে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বগুলো দেওয়া হলো:
১. মজুরি প্রদান সম্পর্কিত দায়িত্ব
(ক) ন্যূনতম মজুরি প্রদান:
-
ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি কর্মচারীদের প্রদান করতে হবে।
-
কোনো কর্মচারীর মজুরি ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম হতে পারবে না।
(খ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি প্রদান:
-
মজুরি পরিশোধ করতে হবে যথাসময়ে, যা শ্রমিকদের জন্য নিম্নরূপ:
-
মাসিক ভিত্তিতে বেতন: পরবর্তী মাসের সাত দিনের মধ্যে।
-
দৈনিক বা সাপ্তাহিক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে: কাজের দিন শেষে বা সপ্তাহ শেষে।
(গ) অতিরিক্ত কাজের মজুরি (ওভারটাইম):
-
কর্মীরা অতিরিক্ত কাজ করলে তাদের দ্বিগুণ হারে ওভারটাইম মজুরি দিতে হবে।
(ঘ) মজুরি কাটার শর্তাবলী:
-
নিয়োগকর্তা আইন অনুযায়ী কেবল নির্দিষ্ট কারণেই মজুরি কাটতে পারবেন, যেমন:
-
অনুপস্থিতি।
-
অগ্রিম প্রদানকৃত অর্থ।
-
শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত জরিমানা।
২. কাজের শর্তাবলী সম্পর্কিত দায়িত্ব
(ক) নিয়োগপত্র ও চাকরির চুক্তি:
-
কর্মচারীদের নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে, যাতে কাজের শর্তাবলী, বেতন, কর্মঘণ্টা, ছুটি ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে।
-
যদি কোনো চুক্তি থাকে, তবে তা লিখিত হতে হবে।
(খ) কর্মঘণ্টা নির্ধারণ:
-
প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে হবে।
-
প্রতি ৬ ঘণ্টা কাজের পর ১ ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে।
-
সাপ্তাহিক ছুটি অন্তত ১ দিন নিশ্চিত করতে হবে।
(গ) ছুটি ও ছুটির মজুরি:
-
কর্মচারীরা বার্ষিক, উৎসব, এবং অসুস্থতার জন্য ছুটি পাবেন।
-
ছুটির সময়ে কর্মচারীদের মজুরি প্রদান করতে হবে।
-
বার্ষিক ছুটির ক্ষেত্রে প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন ছুটি প্রাপ্য।
(ঘ) মাতৃত্বকালীন সুবিধা:
-
নারী কর্মীদের জন্য ১৬ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং এই সময়ের জন্য সম্পূর্ণ মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. কাজের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা
(ক) নিরাপদ কর্মপরিবেশ:
-
কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
-
নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে যেখানে প্রয়োজন।
(খ) কল্যাণ তহবিল:
-
শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য তহবিল গঠন এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে, যেমন চিকিৎসা ও দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ।
৪. কর্মচারীদের অধিকার রক্ষা করা
(ক) বৈষম্যবিহীন আচরণ:
-
ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না।
(খ) শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ব্যবস্থাপনা:
-
শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আগে কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে।
(গ) বঞ্চনা ও শোষণ রোধ:
-
কর্মচারীদের শোষণ বা জোরপূর্বক শ্রম নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৫. মজুরি বই ও রেকর্ড সংরক্ষণ:
-
কর্মচারীদের মজুরি, বোনাস, ও অন্যান্য সুবিধার হিসাব মজুরি বই ও রেকর্ডে সংরক্ষণ করতে হবে।
-
পরিদর্শকের চাহিদায় তা প্রদর্শন করতে হবে।
আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তি:
-
শ্রম আইনের শর্ত ভঙ্গ করলে নিয়োগকর্তাকে জরিমানা বা আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
উল্লেখ্য: কর্মচারী ও নিয়োগকর্তার মধ্যে চুক্তি, প্রাসঙ্গিক নিয়ম-কানুন, এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের ন্যূনতম মজুরি আদেশ অনুযায়ী এই দায়িত্বগুলো প্রয়োগ করা হয়।