রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তন (heat change) মূলত বিক্রিয়ার সময় রাসায়নিক বন্ধনের গঠন ও ভাঙনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পরিবর্তনকে এনথালপি পরিবর্তন (enthalpy change, ΔH) বলা হয়। এটি একটি বিক্রিয়া এক্সোথারমিক (তাপ নির্গমন) বা এন্ডোথারমিক (তাপ শোষণ) কিনা তা নির্ধারণ করে। এর পেছনের কারণগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
---
১. রাসায়নিক বন্ধন ভাঙা এবং গঠন:
বন্ধন ভাঙা:
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় প্রতিক্রিয়াশীল পদার্থের মধ্যে থাকা বন্ধনগুলো ভাঙতে শক্তি প্রয়োজন। এটি একটি এন্ডোথারমিক প্রক্রিয়া, অর্থাৎ এই পর্যায়ে তাপশক্তি শোষিত হয়।
বন্ধন গঠন:
নতুন পণ্য উৎপন্ন হওয়ার সময় নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়। এই বন্ধন গঠনের সময় শক্তি নির্গত হয়, যা একটি এক্সোথারমিক প্রক্রিয়া।
তাপশক্তির নেট পরিবর্তন:
বন্ধন ভাঙার জন্য শোষিত শক্তি এবং বন্ধন গঠনের সময় নির্গত শক্তির মধ্যে পার্থক্য তাপশক্তির পরিবর্তন নির্ধারণ করে।
---
২. বিক্রিয়ার ধরণ:
এক্সোথারমিক বিক্রিয়া:
যদি বন্ধন গঠনের সময় বেশি তাপশক্তি নির্গত হয় এবং বন্ধন ভাঙতে কম তাপশক্তি লাগে, তাহলে এটি এক্সোথারমিক বিক্রিয়া। উদাহরণ: জ্বালানি দহনের সময় তাপ নির্গত হয়।
এন্ডোথারমিক বিক্রিয়া:
যদি বন্ধন ভাঙতে বেশি তাপশক্তি লাগে এবং বন্ধন গঠনে কম শক্তি নির্গত হয়, তাহলে এটি এন্ডোথারমিক বিক্রিয়া। উদাহরণ: পানি থেকে বাষ্প উৎপন্ন।
---
৩. রাসায়নিক পদার্থের প্রকৃতি:
প্রতিক্রিয়াশীল পদার্থের রাসায়নিক গঠন এবং তাদের বন্ধনের শক্তি (bond energy) তাপশক্তির পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে। মজবুত বন্ধন ভাঙতে বেশি শক্তি প্রয়োজন, আর দুর্বল বন্ধন সহজে ভাঙে।
---
৪. পরিবেশের প্রভাব:
বিক্রিয়ার সময় তাপ পরিবেশে স্থানান্তরিত হতে পারে। উদাহরণ:
চাপ ও তাপমাত্রা: বিভিন্ন চাপ ও তাপমাত্রায় বিক্রিয়ার তাপশক্তির পরিবর্তন আলাদা হতে পারে।
দ্রাবক ও মাধ্যম: বিক্রিয়া কোন মাধ্যম বা দ্রাবকে ঘটছে, সেটিও শক্তি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
---
৫. শক্তির সংরক্ষণ নীতি:
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না, এটি এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তিত হয়। বিক্রিয়ার তাপশক্তির পরিবর্তন এই শক্তি স্থানান্তরের ফল।
---
সারসংক্ষেপে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় বন্ধন ভাঙা ও গঠনের প্রক্রিয়ায় শক্তির লেনদেন হয়, যা তাপশক্তির পরিবর্তনের মূল কারণ।