সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা প্রত্যেক স্বামীর ওপর ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, 'তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহরানা ফরজ ফিরে হিসেবে প্রদান করো।' (সুরা নিসা, আয়াত : ৪)
আর মোহরানা কোনো সম্পদ হবে- এটাই বিধান। কিন্তু নবীযুগে এর ব্যতিক্রম দু-একটি ঘটনাও দেখা যায়। নিরক্ষর আরবের লোকদের জন্য শিক্ষা অর্থের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল, যেভাবে জরুরি ছিল সদ্য মুসলমান হওয়া মানুষকে কোরআন শেখানো। তাই সেই যুগে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনাও দেখা যায় যে, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো জন্য কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষাদানকে মোহর নির্ধারণ করেছেন। সাহল ইবন সাদ রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, এক নারী রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন ওই নারী দেখল, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্পর্কে কোনো ফায়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবিদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে জবাব দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখো কিছু পাও কি না। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আবার দেখো, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। বর্ণনাকারী সাহল রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, তার কাছে কোনো চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান করো, তাহলে তার কোনো কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোনো কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কোরআন মাজিদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্ত আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে পরিমাণ কোরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে (অর্থাৎ তাকে কোরআন শেখাবে এর বিনিময়ে) তোমার কাছে এ নারীকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম। (বুখারি শরীফ, হাদিস : ৫০৮৭)। আলোচ্য হাদিস থেকে জানা যায়, দরিদ্র ব্যক্তির বিয়ে করা বৈধ।
সংগ্রহঃ- দৈনিক কালের কন্ঠ, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ইং।