65 বার দেখা হয়েছে
"খ্রীষ্টান ধর্ম" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর
ইয়াহুদীদের ধর্মশাস্ত্র 'তওরাত' এ হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আছে । কবি গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী থেকে কতিপয় উদ্ধৃতি পেশ করছিঃ- 

“তোমাদের প্রভু ঈশ্বর তোমাদের ভ্রাতৃদিগের মধ্য হতে আমার (মূসার) মতই একজন পয়গম্বর উত্থিত করবেন, তাঁর কথা তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।” অন্যত্র আছে - 

" (ঈশ্বর বলছেন) আমি তাদের ভ্রাতৃদিগের মধ্য হতে তোমার (মূসার) মতই একজন পয়গম্বর উত্থিত করব এবং তাঁর মুখে আমার বাণী প্রকাশ করব। তিনি তোমাদেরকে আমি যা আদেশ করব তা-ই শুনাবেন। এবং এটা অবশ্য ঘটবে যে, তাঁর মুখ-নিঃসৃত আমার সেই বাণী যারা শুনবে না, তাদেরকে আমি শুনতে বাধ্য করব।”

আরও একটি দৃষ্টান্ত দেখুনঃ- 

এবং ঈশ্বরের মনোনীত পুরুষ মুসা আলাইহিস সালাম মৃত্যুর পূর্বে এই বলে বনী-ইসরাঈলদেরকে আশীর্বাদ করলেন এবং তিনি বললেন প্রভু (মুসা) সিনাই পর্বত হতে আসলেন এবং সিয়ের (Seir) পর্বত হতে উঠলেন, কিন্তু তাঁর (অর্থাৎ, যিনি আসবেন) জ্যোতি ফারাণ পর্বত হতে বিকীর্ণ হল; তিনি দশ হাজার ভক্ত সঙ্গে আনলেন এবং তাঁর দক্ষিণ হস্ত হতে এক জীবন্ত আইনগ্রন্থ বের হল।

এই সমস্ত উক্তি যে একমাত্র হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্বন্ধেই প্রযোজ্য, অভিজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রেই তা স্বীকার করবেন।

উল্লেখ্য, এখন যে তাওরাত-ইঞ্জীল অর্থাৎ, এখন যে বাইবেল পাওয়া যায়, তাতে সে সব বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ বর্তমান তাওরাত-ইঞ্জিল বিকৃত তাওরাত-ইঞ্জিল। প্রকৃত তাওরাত এবং ইঞ্জীলের বহু স্থানে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইয়াহুদী-খৃষ্টান পণ্ডিতরা সে সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত ছিল। এর বহু প্রমাণও আছে। যথাঃ- 

১. তখন মদীনায় বনু কুরাইজা এবং বনু নাজীর নামক দুটো ইয়াহুদী গোত্র বাস করত। এই এলাকার অন্যান্য অধিবাসীদের সংগে তাদের সব সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকত। সেসব যুদ্ধে ইয়াহুদীরা পরাজিত হলে তারা বলতঃ শেষ যামানার নারী এই এলাকায় হিজরত করতে আসবেন, আমরা তাকে চিনতে পারব, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না। কারণ তাঁর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিতাবে বর্ণনা আছে। যার ফলে তাঁকে আমরা চিনতে পারব এবং তাঁকে চিনে আমরা তাঁর অনুসারী হয়ে যাব এবং তাঁর সংগে মিলে তোমাদের সংগে যুদ্ধ করে তোমাদেরকে পরাজিত করব। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কুরআন শরীফে এটা বর্ণনা করে বলেছেনঃ

فلما جاء هم ما عرفوا كفروا به 

অর্থাৎ, তারপর যখন সেই নবী ঠিকই এসে গেল (এবং সেই কিতাব কুরআন ঠিকই এসে গেল) যা তারা চিনত, তখন তারা অস্বীকার করে বসল। (সূরাঃ ২-বাকারাঃ ৮৯) নিজেদের হীনস্বার্থ রক্ষার জন্যই তাদের মধ্যে অস্বীকার করার মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয়েছিল। তারা ভেবেছিল এখন আমরা এ নবীর অনুসারী হলে আমাদের নেতৃত্ব আর থাকবে না এবং আমাদের অনুসারীদের থেকে যেসব অর্থ-কড়ি পাই, তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব ভেবে তারা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু তারা চিনতে পেরেছিল যে, ইনি-ই সেই নবী। চিনতে তাদের মোটেই ভুল হয়নি। আল্লাহ পাক বলেছেনঃ- 

الذين اتينهم الكتب يعرفونه كما يعرفون ابناء هم 

 অর্থাৎ, এই কিতাবীরা অর্থাৎ, ইয়াহুদী-নাসারারা নবীকে চেনে, যেমন নিজেদের পুত্রকে তারা চেনে। (সুরাঃ ৬-আনআমঃ ২০) নিজের পুত্রকে যেমন তারা চেনে, এই নবীকেও তারা ওভাবেই চেনে। তারা জেনে শুনেই স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে সত্যকে অস্বীকার করত এবং সত্যকে গোপন করত।

২. তখনকার যুগে ইয়াহুদীদের মধ্যে একজন বড় পন্ডিত ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম। তিনি পরে মুসলমান হয়েছিলেন। মুসলমান হওয়ার পর হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন - আপনারা নবীকে নিজেদের পুত্রের মতই চিনতে পেরেছেন? তিনি জওয়াব দিয়েছিলেন নিজের পুত্রকে নিয়েও অনেক সময় সন্দেহ হয়, কিন্তু এই নবীকে চেনার ব্যাপারে তাঁর এতটুকুও সন্দেহ ছিল না। নবীকে এরূপ চিনতে পারার কারণ হল তাদের কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জীলে এই নবীর গুণাগুণ ইত্যাদি পরিষ্কার ভাবে বর্ণিত ছিল।

রাসূলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ১২ বছর, তাঁর চাচা আবু তালিব তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম দেশে যাচ্ছিলেন। বর্তমান সিরিয়ার অন্তর্গত বুছরা নামক শহরের কাছে যখন তারা পৌঁছেন, তখন আবু তালিবের বাণিজ্যিক কাফেলা সেখানে বিরতি নিচ্ছিল। পাশে ছিল একজন খৃষ্টান পন্ডিতের আস্তানা। তার নাম ছিল জরজীস। বুহায়রা রাহেব' নামে সে প্রসিদ্ধ ছিল। যখন কাফেলা ওখানে অবস্থান নিল, তখন বুহায়রা রাহেব তার আস্তানা থেকে বের হয়ে আসল। খুঁজতে খুঁজতে মুহাম্মাদের কাছে এসে বলল, আমি একেই খুঁজছি। কারণ, যখনই কাফেলা এখানে আসে, আমি লক্ষ্য করেছি সমস্ত গাছপালা, সমস্ত পাহাড়-পর্বত কার উদ্দেশ্যে যেন সাজদা করছে। আমি জানি, আমাদের কিতাবে আছে নবী ছাড়া আর কারও জন্য এরকম সব কিছুতে সাজদা করে না। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর পরে আখেরী যামানার নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া আর কোন নবী আসবেন না। তাই আমি বুঝলাম অবশ্যই শেষ যামানার নবী এই কাফেলায় আছেন এবং এই হল সেই নবী। প্রমাণ হল তাঁর পিঠে মহরে নবুওয়াত আছে। পন্ডিতজী সকলকে দেখালেন যে, এই দেখ তাঁর পিঠে মহরে নবুওয়াত রয়েছে। 

তারপর সেই খৃষ্টান পণ্ডিত লোকটি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচা আবূ তালিবকে ডেকে বলল- একে দেশে পাঠিয়ে দিন। এটা ইয়াহুদীদের এলাকা, এখানে তাঁর অনেক শত্রু রয়েছে এবং এই সময়ে অত্র অঞ্চলে তাঁর আগমন ঘটবে কিতাবের মাধ্যমে সে সম্বন্ধে তারা সবাই অবগত রয়েছে। অতএব এখানে অবস্থান তাঁর জীবন নাশের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতিসত্বর তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দিন। ইতিমধ্যেই সাতজন লোক সেখানে আসল। তারা এসেছিল রোম দেশ থেকে। তারা ঐ পন্ডিতের কাছে জিজ্ঞাসা করল যে, এদিকে আরবদের কোন কাফেলা এসেছে কি ? তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তোমরা কেন আরবদের কাফেলা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে ? তারা বললঃ- আমাদের এলাকার পণ্ডিতগণ আমাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছেন যে, এই সময়ে অত্র এলাকায় শেষ নবীর আগমন ঘটবে, এই সময় তিনি এই এলাকায় সফরে আসবেন। আমরা তার সন্ধানে এসেছি। আমরা তাকে হত্যা করার জন্য এসেছি। বুহায়রা রাহেব তাদেরকে বললেনঃ যদি তিনি আল্লাহর নবীই হয়ে থাকবেন, তাহলেতো আল্লাহই তাঁকে রক্ষা করবেন, তোমরা তাঁকে হত্যা করতে পারবে না। অতএব তোমরা ফিরে যাও। তারা বললঃ হ্যাঁ কথা ঠিক। এই বলে তারা ফিরে গেল। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় সে যুগের খৃষ্টান পন্ডিতরা ভালভাবে জানত যে আখেরী নবীর অবস্থা কি হবে।

নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ২৫ বছর, তখন তিনি খাদীজা রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহার ব্যবসায়িক মাল নিয়ে ব্যবসা করার জন্য আরেকবার শাম দেশে সফরে গিয়েছিলেন। তখন ঐ আস্তানার খৃষ্টান পন্ডিত ছিল নাসতূরা। তাকে নাসতূরা রাহেব বলা হত। সেও নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে চিনে ফেলেছিল যে, ইনি-ই শেষ যামানার নবী এবং সে স্বীকার করেছিল যে, আমাদের কিতাবে আছে যে, এই সময় তিনি এই এলাকায় সফরে আসবেন। এ থেকে বোঝা যায় তখন এইসব বর্ণনা তাদের কিতাবে ছিল। 

 তবে এখন ইঞ্জীলে এই সব বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ ইঞ্জীলকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। আল্লাহর প্রেরিত আসল ইঞ্জীল দুনিয়ার কোথাও নেই। যা এখন আছে, তা মানুষের রচিত বিকৃত ইঞ্জীল আছে।

আর একটা ঘটনা - রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোমের সম্রাট হেরাকল কে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে পত্র দিয়েছিলেন। ইংরেজীতে হেরাকলকে বলা হয় হেরাক্লিয়াস। হেরাক্লিয়াস সেই পত্র পাঠ করে নবীর সত্যতা যাচাই করার জন্য তখনকার যুগের সবচেয়ে বড় খৃষ্টান পন্ডিত লাটপাদ্রী জগাতিরের কাছে সেই চিঠি পাঠিয়ে দেয়। জগাতির সংবাদ পাঠায় যে, আমাদের জানামতে শেষ নবীর আগমনের সময় হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে, এই হলেন সেই নবী। তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয়বার দেহইয়ায়ে কালবী রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে দূত বানিয়ে হেরাক্লিয়াসের নিকট পত্র দিয়েছিলেন। হেরাক্লিয়াস বলেছিলঃ আমি কি করব ? আমার লোকজন তো মানবে না। সে দেহইয়ায়ে কালবীকে তখনকার লাটপাদ্রীর কাছে সত্যতা যাচাই করার জন্য পাঠাল। লাটপাদ্রী বিস্তারিত জেনে লোকদেরকে ডেকে সকলের সামনে বললঃ শেষ নবীর আগমন ঘটেছে, তোমরা সকলে তার উপর ঈমান আন। আমিও ঈমান আনলাম। সকলের সামনে কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করে সে মুসলমান হয়ে গেল। কিন্তু লোকেরা তাকে সেই মজলিসেই শহীদ করে দিল। দেহইয়ায়ে কালবীর মুখে ঘটনা শুনে হেরাক্লিয়াস বলল, বড় লাটপাদ্রীর যখন এই অবস্থা, তখন আমি যদি মুসলমান হয়ে যাই, তাহলে আমার লোকজন এবং আমার প্রজারাও আমাকে হত্যা করে দিবে।

অনেক ইয়াহুদী-খৃষ্টান পণ্ডিতদের সম্পর্কে জানা যায় যে, তারা বোঝা সত্ত্বেও মানত না। একবার নাজরান থেকে খৃষ্টানদের একটা প্রতিনিধি দল রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসেছিল। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন ভাবেই তাদেরকে ইসলামের কথা মানাতে পারলেন না, তখন আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে “মুবাহালা” করার জন্য আহবান জানালেন। “মুবাহালা" অর্থ প্রত্যেক পক্ষ আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করবে যে, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে পক্ষ মিথ্যা, তাদেরকে ধ্বংস করে দাও। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দুআ করার জন্য প্রস্তুত হলেন, কিন্তু তারা প্রস্তুত হল না, বরং তারা একে অপরের সাথে পরামর্শ করে জিযয়া কর দিতে রাজী হয়ে ফিরে গেল। তারা মুবাহালা করতে সাহস পেল না।

এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায় ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্য নবী তা ভাল করেই জানত। কারণ তাদের কিতাব তাওরাত-ইঞ্জীলে এ জাতীয় সুস্পষ্ট বর্ণনা ছিল।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

34,051 টি প্রশ্ন

33,007 টি উত্তর

1,576 টি মন্তব্য

3,212 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
26 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 26 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 6917
গতকাল ভিজিট : 46623
সর্বমোট ভিজিট : 42744000
  1. MuntasirMahmud

    302 পয়েন্ট

    60 টি উত্তর

    2 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    105 পয়েন্ট

    20 টি উত্তর

    5 টি গ্রশ্ন

  3. Kuddus

    85 পয়েন্ট

    17 টি উত্তর

    0 টি গ্রশ্ন

  4. TeddyAhsan

    71 পয়েন্ট

    4 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. TAKRIMISLAM

    68 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    18 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...