231 বার দেখা হয়েছে
"ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন

হজরত আম্মার ইবন ইয়াসির (রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) এবং তাঁর পিতামাতা ইয়াসির (রাযি.) ও সুমাইয়া (রাযি.) — ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুগের সেই সাহসী পরিবার, যাদের ত্যাগ, ধৈর্য ও ঈমানের দৃঢ়তা আজও মুসলমানদের হৃদয়ে অনুপ্রেরণার দীপ জ্বালিয়ে রাখে। তাঁদের ওপর মুশরিকদের যে ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছিল, তা ইসলামের প্রারম্ভিক ইতিহাসে এক বেদনাময় কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
চলুন ঘটনাটি সুন্দরভাবে বিস্তারিতভাবে দেখি — 


♦️ পরিবারিক পরিচয়ঃ-
হজরত আম্মার (রাযি.)-এর পিতা হজরত ইয়াসির (রাযি.) ছিলেন ইয়ামান (ইয়েমেন)-এর মানুষ। তিনি ব্যবসার কাজে মক্কায় এসেছিলেন এবং বনু মাখযুম গোত্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি সুমাইয়া বিনতে খায়্যাত (রাযি.) নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির সন্তানই ছিলেন হজরত আম্মার ইবন ইয়াসার (রাযি.)। তাঁরা তিনজনই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম দিকের মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হন। 


♦️ ইসলামের সূচনা ও তাঁদের ঈমান -
যখন নবী করিম ﷺ গোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন এই পরিবার প্রথমেই আল্লাহর একত্বে ঈমান আনেন। মক্কার কাফিররা তাঁদের ইসলাম গ্রহণকে সহ্য করতে পারে নি, কারণ তাঁরা ছিলেন দাস ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ,  সমাজে যাদের কোনো গোত্রীয় সুরক্ষা ছিল না। 


♦️ ভয়াবহ নির্যাতনঃ-
মুশরিকরা তাঁদের তিনজনকে মরুভূমির তপ্ত বালিতে টেনে নিয়ে যেত, রোদে ফেলে রাখত, শরীরে গরম লোহা ও ভারী পাথর চাপিয়ে দিত, এমনকি আগুনে পুড়িয়ে, লাঠি ও চাবুক দিয়ে প্রহার করত। তবুও তাঁরা বলতেন - “আহাদ! আহাদ!” (এক, এক আল্লাহ!) এই আহ্বান ছিল ঈমানের দৃঢ় ঘোষণার প্রতীক। 


♦️ ইসলামের প্রথম শহীদা - 
যখন নির্যাতন চরমে পৌঁছেছিল, মুশরিকদের নেতা আবু জাহল নিজ হাতে সুমাইয়া (রাযি.)-কে নির্যাতন করে হত্যা করে। তাঁর লজ্জাস্থানে অভিশপ্ত আবু জাহল বর্শার আঘাত করে তাঁকে শহীদ করে দেয়। ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম শাহাদাহ্ বরণ করেন। 


♦️ শাহাদতের সম্মান ইয়াসির (রাযি.)-এরও 

কিছুদিন পর অতিরিক্ত নির্যাতন ও যন্ত্রণায় ইয়াসির (রাযি.)-ও শহীদ হন। এভাবে এই দম্পতি হয়ে যান ইসলামের প্রথম শহীদ দম্পতি। 


♦️ আম্মার (রাযি.)-এর পরীক্ষা - 
আম্মার (রাযি.)-কে কাফিররা এমন নির্যাতন করেছিল যে, তিনি প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান। অসহ্য যন্ত্রণায় এক সময় তাঁর মুখ থেকে কুফরির কিছু কথা বের হয়ে যায়, যা তাঁর অন্তরে ছিল না, শুধু নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য বলেছিলেন। 


এরপর তিনি কান্নাকাটি করতে করতে নবী করিম ﷺ-এর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মুখ দেখে বললেন -“তোমার অন্তর কেমন অবস্থায় আছে?”
আম্মার (রাযি.) বললেন - “হে আল্লাহর রাসূল! আমার অন্তর পূর্ণ ঈমানে পরিপূর্ণ।”তখন নবী করিম ﷺ বললেন - “যদি তারা আবারও নির্যাতন করে, তখনও তুমি এমনই (বাহ্যিকভাবে) বলতে পারো।” (সূত্র: সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫০৮)
এ ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে আয়াত নাজিল করেন -
“যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর কুফরি বলে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানের প্রশান্তিতে পূর্ণ থাকে — তার কোনো দোষ নেই।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ১০৬) 


♦️ নবী করিম ﷺ-এর সান্ত্বনা ও দোয়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে তাঁদের নির্যাতন দৃশ্য দেখে অত্যন্ত কষ্ট পেতেন। একদিন তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন  "صَبْرًا آلَ يَاسِرٍ، فَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْجَنَّةُ "অর্থ: “হে ইয়াসিরের পরিবার! ধৈর্য ধরো, তোমাদের প্রতিশ্রুত ঠিকানা হলো জান্নাত।” (সূত্র: ইবনে হিশাম, সীরাত; হাকিম, মুসতাদরাক)
এই বাক্যটি ইসলামের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় ঘোষণা হয়ে আছে। 


♦️ আম্মার (রাযি.)-এর পরবর্তী জীবন -
তিনি হিজরতের পর মদিনায় চলে যান। নবী করিম ﷺ তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তাঁকে “বিশুদ্ধ হৃদয়ের মানুষ” বলে অভিহিত করতেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ প্রায় সব যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। খলিফা উসমান (রাযি.)-এর সময়ে তিনি শহীদ হন। 


♦️ সংক্ষেপ ঘটনাটা এমন -

 যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একবার তাঁবুর ভেতরেই সাথীদেরকে মজাচ্ছলে বলছিলেন যে - "আজ হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদের সাথে যেয়ে মিলিত হবো। ইত্যবসরে তাঁর পানি পিপাসা পেলে সাথীদের থেকে পানি চাইলেন, পানি না পাওয়া যাওয়ায় তাঁকে দুধ পরিবেশন করা হলো। ওই দুধটুকু তিনি পান করলেন। এরপর নিজের ব্যপারে বললেন, আমি হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি "তুমি দুনিয়াতে সর্বশেষ বস্তু দুধ পান করবে"। এরপর তিনি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন, শহীদ হওয়া পর্যন্ত আর ফিরে এলেন না। (অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত শাহাদাত বরণ করলেন, ৩৭ হিজরি) 


শিক্ষণীয় বিষয়ঃ-
হজরত আম্মার ও তাঁর পিতামাতার ঘটনাটি আমাদের শেখায় —
১. সত্যের পথে চলা সহজ নয়, কিন্তু ধৈর্যশীলদের প্রতিদান জান্নাত।
২. ঈমান শুধু মুখের কথা নয়, বরং অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস।
৩. আল্লাহর পথে ত্যাগই মানুষের আসল মর্যাদা। 


সূত্র - সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫০৮, সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৮৫৭, সীরাত ইবনে হিশাম, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ইবন কাসির, তাবরী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

36,725 টি প্রশ্ন

36,003 টি উত্তর

1,779 টি মন্তব্য

3,870 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
7 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 7 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 5995
গতকাল ভিজিট : 16133
সর্বমোট ভিজিট : 56802107
এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
...