119 বার দেখা হয়েছে
"ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
হযরত আবূ যর গিফারী (রাযিঃ) একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি একজন উঁচু পর্যায়ের বুযুর্গ ও বড় আলেম হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন। হযরত আলী (রাযিঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেন যে, তিনি এমন ইলেম হাসিল করেছিলেন, যা অন্য কেউ হাসিল করতে অক্ষম, কিন্তু তিনি সেই ইলম হেফাযত করে রেখেছেন।

হযরত আবু যর গিফারী (রাযিঃ) এর নিকট যখন সর্বপ্রথম হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের সংবাদ পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর ভাইকে অবস্থা জানার জন্য এই বলে মক্কা শরীফ পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি এই দাবী করে যে, আমার নিকট ওহী ও আসমানের সংবাদ আসে, তাঁর ব্যাপারে সকল তথ্য অবগত হবে এবং তাঁর কথাগুলো গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তাঁর ভাই মক্কা আগমন করে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সকল তথ্য সম্পর্কে অবগত হলেন এবং ভাইয়ের নিকট গিয়ে বললেন যে, আমি তাঁকে সদাচার ও সচ্চরিত্রের আদেশ করতে দেখেছি। আর আমি তাঁর নিকট এমন কালাম শুনেছি যা কোন কবিতাও নয় কোন জ্যোতিষীর কথাও নয়।

হযরত আবূ যর গিফারী (রাযিঃ) ভাইয়ের এই সংক্ষিপ্ত কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কাজেই তিনি নিজেই সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং মক্কায় পৌঁছে সোজা মসজিদে হারামে উপস্থিত হলেন। একে তো তিনি নিজেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতেন না। তদুপরি কারও নিকট জিজ্ঞাসা করাটাও সঙ্গত মনে করলেন না। সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই কেটে গেল। সন্ধ্যার সময় হযরত আলী (রাযিঃ) দেখলেন, মসজিদুল হারামে একজন বিদেশী মুসাফির রয়েছেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে করে বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। কেননা, মুসাফির, গরীব ও বিদেশী লোকদের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাঁদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়া এই সকল বুযুর্গের স্বভাবগত অভ্যাস ছিল। হযরত আলী (রাযিঃ) তাঁকে ঘরে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর মেহমানদারী করলেন। কিন্তু তাঁকে জিজ্ঞাসা করার কোন প্রয়োজন মনে করলেন না যে, তুমি কে? আর কেন এসেছো? মুসাফিরও নিজে থেকে কোন কিছু প্রকাশ করলেন না। পরদিন সকালে তিনি আবার হারাম শরীফে আসলেন। সারাদিন একই অবস্থায় কাটল, নিজেও কোন খোঁজ পেলেন না এবং কাউকে জিজ্ঞাসাও করলেন না। এটা সম্ভবতঃ এই কারণে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কাফেরদের শত্রুতার বিষয় খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতপ্রার্থীদেরকে বিভিন্ন প্রকারে কষ্ট দেয়া হতো। তিনি ভাবিলেন, কাউকেও জিজ্ঞাসা করলে সঠিক তথ্য তো পাওয়া যাবেই না, বরং উল্টাে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অযথা নির্যাতন ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায়ও হযরত আলী (রাযিঃ) ভাবিলেন যে, বিদেশী মুসাফির যে প্রয়োজনে এসেছিলেন, সম্ভবতঃ সেটা পূরণ হয় নি। সুতরাং আজও তিনি তাঁকে বাড়ীতে নিয়ে গেলেন এবং রাত্রে তাঁর খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানোর ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু এই রাত্রেও তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগ হলো না। তৃতীয় রাত্রেও আবার সেই একই অবস্থা হলো। এবার হযরত আলী (রাযিঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি কাজে এসেছো ? তোমার আগমনের উদ্দেশ্য কি? হযরত আবূ যর (রাযিঃ) প্রথমে হযরত আলী (রাযিঃ) কে সত্য বলার শপথ ও অঙ্গীকার করালেন, তারপর নিজের আগমনের উদ্দেশ্য খুলে বললেন। হযরত আলী (রাযিঃ) বললেন, তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। সকালে আমি যখন যাবো, তখন তুমিও আমার সাথে যেও। আমি তোমাকে তাঁর নিকট পৌঁছে দেবো। তবে চরম বিরোধিতা চলছে। তাই যাবার সময় যদি এমন কোন লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়ে যায়, আমার সঙ্গে চলার কারণে যে তোমাকে সন্দেহ করে এবং তোমার কোন ক্ষতির আশংকা দেখা দেয়, তবে আমি পেশাব করার অথবা জুতা ঠিক করার ভান করে বসে পড়বো। তুমি সোজা হাঁটতে থাকবে। আমার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়াবে না। যেন তুমি আমার সঙ্গে যাচ্ছো কেউ এটা বুঝতে না পারে। যাই হোক, সকালবেলা তিনি হযরত আলী (রাযিঃ) এর সাথে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেন এবং তৎক্ষণাৎ মুসলমান হয়ে গেলেন। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কষ্টের কথা চিন্তা করে বললেন, তুমি এখনই তোমার ইসলাম গ্রহণের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করিও না। চুপচাপ নিজ এলাকায় চলে যাও। যখন আমরা জয়লাভ করবো তখন চলে আসবে। হযরত আবূ যর (রাযিঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেই পাক যাতের কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ঐ সকল বেঈমানের মাঝে আমি চিৎকার করে তাওহীদের এই কালেমা পাঠ করবো। সুতরাং তখনই তিনি মসজিদে হারামে গিয়ে উচ্চকণ্ঠে পাঠ করলেন— আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।

এই কালেমা পাঠ করার সাথে সাথে চতুর্দিক হতে কাফেররা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং এত বেশী মারধর করলো যে, ক্ষতবিক্ষত করে দিলো এবং তিনি মরণাপন্ন হয়ে গেলেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা হযরত আব্বাস (রাযিঃ), যিনি তখনও মুসলমান হন নি, হযরত আবু যর (রাযিঃ) কে রক্ষা করার জন্য তাঁর উপর শুয়ে পড়লেন এবং লোকদেরকে বললেন যে, তোমরা কেমন জুলুম করছো! এই ব্যক্তি গিফার গোত্রের লোক। এই গোত্রটি সিরিয়া যাওয়ার পথে পড়ে। সিরিয়ার সাথে তোমাদের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক রয়েছে। এই ব্যক্তি মারা গেলে সিরিয়ায় তোমাদের যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তাদেরও খেয়াল হলো যে, সিরিয়া হতে আমাদের যাবতীয় প্রয়োজন পুরা হয়ে থাকে, সেখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া মুসীবতের কারণ হবে, এটা ভেবে তারা তাঁকে ছেড়ে দিল। পরদিন আবার তিনি হারাম শরীফে যেয়ে উচ্চকণ্ঠে কালেমা শাহাদত পাঠ করলেন। কাফির লোকেরা এই কালেমা শুনা বরদাশত করতে পারত না। ফলে এবারও তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়লো। দ্বিতীয় দিনও হযরত আব্বাস (রাযিঃ) তাদেরকে সিরায়ার সাথে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দিলেন। 

শিক্ষাঃ- স্বীয় ইসলামকে গোপন রাখো, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হুকুম সত্ত্বেও হযরত আবূ যর (রাযিঃ) যা করেছেন, সেটা ছিল সত্যকে প্রকাশ করার প্রতি তাঁর প্রবল আবেগ ও আগ্রহ। কারণ, এটা তো একটা সত্য ধর্ম, কারও বাপের ইজারাদারী নয় যে, তার ভয়ে গোপন রাখতে হবে। তবে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দয়া-পরবশ হয়ে তাঁকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন যে, নতুন মুসলমান হওয়া হেতু হয়তো নির্যাতন বরদাশত করতে পারবেন না। নতুবা সাহাবায়ে কেরাম (রাযিঃ) সম্পর্কে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম অমান্য করার কথা কল্পনাও করা যায় না। যেহেতু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দ্বীন প্রচারের কাজে সব রকম কষ্ট সহ্য করতেছিলেন, সেহেতু হযরত আবু যর (রাযিঃ) সহজ পন্থা অবলম্বন করার পরিবর্তে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করাকেই প্রাধান্য দিলেন। আর এই অনুসরণটাই এমন এক বস্তু ছিল, যে কারণে তৎকালে দ্বীনী ও দুনিয়াবী সর্বপ্রকার উন্নতি সাহাবায়ে কেরামের পদচুম্বন করতেছিল এবং সকল ময়দান তাঁদের আয়ত্তে ছিল। যে কেউই একবার এই কালেমা শাহাদত পড়ে ইসলামী ঝাণ্ডার ছায়াতলে এসে যেতেন, কোন বড় শক্তিই তাঁকে আর বাঁধা দিয়ে রাখতে পারতো না। চরম কোনো নির্যাতন-নিপীড়ন তাঁদেরকে দ্বীনের প্রচার-প্রসার থেকে বিরত রাখতে পারতো না। মহান আল্লাহ্ পাক আমাদেরকেও তাঁদের মতো দ্বীনি বুঝ এবং জযবা দান করুন, আমীন ইয়া আরহামার রাহিমীন।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

34,035 টি প্রশ্ন

32,985 টি উত্তর

1,573 টি মন্তব্য

3,207 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
14 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 14 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 26023
গতকাল ভিজিট : 31045
সর্বমোট ভিজিট : 42368418
  1. MuntasirMahmud

    257 পয়েন্ট

    51 টি উত্তর

    2 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    90 পয়েন্ট

    17 টি উত্তর

    5 টি গ্রশ্ন

  3. TeddyAhsan

    71 পয়েন্ট

    4 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  4. TAKRIMISLAM

    68 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    18 টি গ্রশ্ন

  5. Jara

    53 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    3 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...