♦️ খাব্বাব (রা.)-এর পরিচয় সংক্ষেপে
হজরত খাব্বাব ইবনুল আরাত (রাযি.) কুফা গোত্রের একজন ছিলেন। মক্কায় তিনি দাসত্বের জীবন যাপন করতেন এবং তলোয়ার-ছুরি তৈরির কারিগর (লোহার মিস্ত্রি) ছিলেন। তাঁর মালিক ছিলেন এক নারী — উম্মে আনমার, যিনি বনী খুযা’আ গোত্রের মহিলা ছিলেন।
হজরত খাব্বাব ইবনুল আরাত রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের এক সাহসী সাহাবী, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর প্রচণ্ড নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। নিচে তাঁর নির্যাতনভোগের ঘটনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো —
♦️ ইসলাম গ্রহণ ও নির্যাতনের সূচনা -
খাব্বাব (রা.) ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম দিককার সাহাবিদের একজন ছিলেন। তিনি যখন ইসলামের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করলেন, তখন তাঁর উপর শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন।
★ উম্মে আনমার ও তার গোত্রের লোকেরা তাঁকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কষ্ট দিত।
★ একবার তাঁর মালিক উম্মে আনমার তাঁকে মারধর করে এতটাই ক্ষতবিক্ষত করে দেয় যে, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে তাঁর মাথায় স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়।
♦️ আগুনের কয়লায় শুইয়ে নির্যাতন
★ হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত খাব্বাব রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু আমাদেরকে নিজের পিঠ দেখিয়ে বলেছিলেন,
“এই দাগগুলো দেখো। একসময় আমাকে আগুন জ্বালিয়ে তার ওপর উল্টে ফেলে রাখা হয়েছিল। আমার পিঠের চর্বি গলে পড়ে যাওয়ার কারণে আগুনের কয়লা পর্যন্ত নিভে যেত।”
(সূত্র: ইবনু সাদ, ত্বাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৩; হাকিম, আল-মুস্তাদরাক)
এই ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্যেও তিনি ঈমান থেকে বিচ্যুত হননি।
♦️ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অভিযোগ ও সান্ত্বনা।
★ একদিন খাব্বাব (রা.) নির্যাতনে ক্লান্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বললেন —
“হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! আপনি কি আমাদের জন্য দোআ করবেন না? আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না?”
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন -
“তোমার আগে এমন লোকও ছিল যাকে মাটিতে গর্ত করে বসানো হতো, তারপর তার মাথায় করাত বসিয়ে দুই ভাগ করা হতো, কিন্তু তবুও সে তার ঈমান থেকে ফিরে আসতো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবেন, এমনকি এমন সময় আসবে, যখন একজন আরোহী সানআ’ থেকে হাদরমাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো।” (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৬১২)
♦️ ইসলাম প্রচারে তাঁর ভূমিকা
নির্যাতনের মাঝেও খাব্বাব (রা.) ইসলামের দাওয়াত চালিয়ে যান। বিশেষত তিনি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উমর (রা.) তাঁর বোন ফাতিমা (রা.)-এর বাড়িতে গেলে খাব্বাব (রা.) সেখানেই কুরআন শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
♦️ ইন্তিকাল
খাব্বাব (রা.) দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি কুফায় চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করেন। তাঁর জানাযা পড়ান হযরত আলী (রা.)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স প্রায় ৭৩ বছর হয় (কিছু বর্ণনায় ৭৭ বছরও বলা হয়)।