157 বার দেখা হয়েছে
"ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন

মদিনার মাটিতে এক সাহাবী ছিলেন, যিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর প্রতি এমন প্রেমে মগ্ন ছিলেন যে তাঁর প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন নবীর প্রতি আনুগত্যে নিবেদিত। তাঁর নাম হজরত আনাস ইবনে নজর (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ)। তিনি ছিলেন হজরত আনাস ইবন মালিক (রাযি.)-এর চাচা।
তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী, সাহসী, ঈমানদার এবং আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গে প্রস্তুত এক সত্যিকারের যোদ্ধা। কিন্তু তাঁর হৃদয়ে একটি গভীর দুঃখ ছিল, কেননা তিনি বদরের যুদ্ধে উপস্থিত থাকতে পারেন নি।
♦️ বদরের অনুশোচনা ও প্রতিজ্ঞা
একদিন বদরের বিজয়ের পর তিনি সাহাবাদের মুখে শুনলেন - কেমনভাবে নবী করিম ﷺ নিজ হাতে যুদ্ধ করেছেন, কেমনভাবে ফেরেশতারা নেমে এসেছিল,
আর কেমনভাবে শহীদদের দেহে জান্নাতের সৌরভ পাওয়া গিয়েছিল। তখন আনাস (রাযি.) গভীরভাবে নিশ্বাস ফেলে বললেন— “হায়! আমি বদরের ময়দানে ছিলাম না... যদি আল্লাহ আবার আমাকে নবীর সঙ্গে কোনো যুদ্ধে উপস্থিত করেন, আমি দেখিয়ে দেব, আমি কেমন লড়ি!”
এই ছিল তাঁর অন্তরের একান্ত অঙ্গীকার, আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গের প্রতিজ্ঞা।
♦️ উহুদের সকাল
৩ হিজরি, উহুদের প্রভাত। নবী করিম ﷺ ও ৭০০ সাহাবী মদিনা থেকে উহুদের দিকে রওনা হয়েছেন। হজরত আনাস ইবনে নজর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি। তিনি বললেন - “আজ আমি প্রমাণ করব, বদরের অনুশোচনা বৃথা যাবে না।”
উহুদের পাহাড়ের ছায়ায় মুসলমানরা সারিবদ্ধ হলো,
তলোয়ারের ঝলক, বাতাসে ধুলো, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল!
প্রথমে মুসলমানরা জয়ী হচ্ছিল, কিন্তু পাহাড়ের প্রহরীরা নবী করিম ﷺ-এর আদেশ ভুলে যখন স্থান ত্যাগ করল, তখন হঠাৎ পেছন দিক থেকে হামলা করল খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (তখনো ইসলাম গ্রহণ করেন নি)।
যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। মুসলমানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল,
রাসূলুল্লাহ ﷺ আহত হলেন, তাঁর দন্ত মোবারক শহীদ হলো, রক্ত ঝরতে লাগল।
♦️ শহীদের পথে দৌড়
এই বিশৃঙ্খলার মাঝে হজরত আনাস ইবনে নজর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সামনে এগিয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন, অনেক সাহাবা আহত, কেউ কেউ হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছেন। তিনি তখন তলোয়ার হাতে বললেন, “হে আমার ভাইয়েরা! তোমরা কিসের জন্য বসে আছো? রাসূলুল্লাহ ﷺ তো সামনেই আছেন!
আল্লাহর কসম, তিনি জীবিত থাকতে আমি কীভাবে বেঁচে থাকবো!”
তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন— “হে আল্লাহ! আমি বদরের প্রতিজ্ঞা আজ পূর্ণ করব। তোমার রাসূলের পক্ষ থেকে কুফরিদের বিরুদ্ধে লড়াই করব!”
তারপর তিনি শত্রুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন একাই! তাঁর চোখে ভয় নেই, মুখে হাসি, হাতে তলোয়ার।
♦️ এক বীরের বর্ণিল লড়াই
তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে এমনভাবে ঢুকে পড়লেন যেন মৃত্যুর দিকেই ছুটে চলেছেন। তাঁর প্রতিটি আঘাতে শত্রুর সারি কেঁপে উঠল। তিনি এক হাতে তলোয়ার চালাচ্ছেন, আরেক হাতে ঢাল; তলোয়ারের কোপে কোপে শত্রুরা পিছু হটছে।
কিন্তু শত্রুর সংখ্যা ছিল অসংখ্য। তীর, বর্শা, তলোয়ার সব দিক থেকে আঘাত আসতে লাগল। তবুও হজরত আনাস (রাযি.) দাঁড়িয়ে আছেন, যতক্ষণ না তাঁর শরীর রক্তে ভেসে যায়। শেষ মুহূর্তে তাঁর জবান থেকে এই কথা বের হলো, “আল্লাহর কসম, আমি জান্নাতের সুবাস অনুভব করছি, উহুদের পর্বতের নিচেই সে সুবাস বইছে!”
এ কথা বলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন—
জীবন শেষ, কিন্তু ইতিহাস শুরু হলো।
♦️ যুদ্ধ শেষে
যুদ্ধ শেষে মুসলমানরা শহীদদের দেহ খুঁজে পেল।
একটি দেহ পড়ে আছে, চেনার মতো নয়। তলোয়ারের আঘাত, বর্শার ক্ষত, তীরের দাগ - ৮০টিরও বেশি আঘাত! মুখমণ্ডল ছিন্নভিন্ন। কে এই বীর? কেউ চিনতে পারছে না।
তখন তাঁর বোন রুবাইয়্যি বিনতে নজর (রাযি.) এসে বললেন, “আমি তাঁকে চিনতে পারছি, তাঁর আঙুলের ডগার দাগ আমি চিনি। এ তো আমার ভাই, হজরত আনাস ইবনে নজর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু।”
♦️ নবী করিম ﷺ-এর অশ্রু
রাসূলুল্লাহ ﷺ সেই দেহের দিকে তাকালেন, চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, “এরূপ ঈমান রাখলে, আল্লাহর কসম! আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাত দান করবেন।” (সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৮০৫)
♦️ তাঁর জন্য নাজিল হওয়া আয়াত
আল্লাহ তায়ালা তাঁর বীরত্ব ও প্রতিজ্ঞার প্রশংসায় কুরআনে ঘোষণা করলেন —
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ
“মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার সত্য করে দেখিয়েছে; তাদের কেউ শহীদ হয়েছে, কেউ অপেক্ষায় আছে।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২৩)
♦️ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন,  “এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে হজরত আনাস ইবনে নজর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সম্পর্কে।”
♦️ শিক্ষা
১. আল্লাহ ও রাসূল ﷺ–এর ভালোবাসা প্রাণের চেয়েও প্রিয় হওয়া উচিত।
২. সত্যিকারের ঈমান শুধু কথায় নয়— কর্মে ও ত্যাগে প্রকাশ পায়।
৩. বদরের মতো সুযোগ না পেলেও, উহুদের মতো দৃঢ়তা নিয়ে বাঁচা চাই।
৪. আল্লাহর পথে প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া এক অনন্ত সম্মান।
হে হজরত আনাস ইবনে নজর রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু -
তোমার রক্তে লেখা হলো ভালোবাসা, ত্যাগ ও ঈমানের এমন ইতিহাস,
যা যুগে যুগে মুসলমানের হৃদয়ে জ্বালাবে অনুপ্রেরণার আলো।
রাযিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু। 

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

36,983 টি প্রশ্ন

36,310 টি উত্তর

1,788 টি মন্তব্য

3,876 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
10 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 10 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 15329
গতকাল ভিজিট : 25463
সর্বমোট ভিজিট : 57352733
এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
...