204 বার দেখা হয়েছে
"ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন

এই দুটি ঘটনা, অর্থাৎ -
১️. মুসলমানদের হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত, এবং
২️. আবু তালিবের ঘাঁটিতে (শিয়াবে আবি তালিব) অবরোধ -
ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। নিচে আমি বিস্তারিতভাবে ও ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করছ -
১. মুসলমানদের হাবশায় হিজরত (الإهجرة إلى الحبشة)
♦️ সময়কালঃ-
নবুয়তের ৫ম বছর, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ নবুয়তপ্রাপ্ত হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর।
♦️ হিজরতের পটভূমিঃ-
মক্কায় মুসলমানদের উপর ক্রমশ নির্যাতন বাড়তে থাকে। দরিদ্র, অসহায় ও দাস মুসলমানদের ওপর কুরাইশরা ভয়াবহ অত্যাচার চালাতে থাকে। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ ﷺ মুসলমানদের বললেন -
“তোমরা হাবশায় চলে যাও; সেখানে এমন এক ন্যায়পরায়ণ রাজা আছেন (নাজাশী), তাঁর দেশে কারও প্রতি অন্যায় করা হয় না।” (ইবন হিশাম, আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ)
♦️ প্রথম হিজরতঃ-
প্রথমবারের হিজরতে মোট ১১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা গোপনে হাবশার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন -
★ হযরত উসমান ইবন আফফান (রা.) এবং
★ তাঁর স্ত্রী ও নবী ﷺ-এর কন্যা হজরত রুকাইয়্যা (রা.)
★ আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা.)
★ জুবাইর ইবন আওয়াম (রা.)
★ আবু হুযাইফা (রা.) ইত্যাদি।
তাঁরা সমুদ্রপথে হাবশায় পৌঁছে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে থাকেন।
♦️ দ্বিতীয় হিজরতঃ-
কিছুদিন পর ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, কুরাইশরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। এই খবরে কিছু মুসলমান হাবশা থেকে ফিরে আসেন, কিন্তু মক্কার কাছাকাছি এসে জানতে পারেন যে, এটা ভূয়া সংবাদ। ফলে কওছু সাহাবী আবার হাবশায় ফিরে যান আর কিছু সাহাবী মক্কার কিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে মক্কায় প্রবেশ করেন।
কিছুদিন পর আবার প্রায় ৮৩ জন পুরুষ ও ১৮ জন মহিলা হাবশায় হিজরত করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি “হাবশার দ্বিতীয় হিজরত” নামে পরিচিত।
কিছু কিছু সাহাবী হাবশায় একবারই হিজরত করেন, আবার কিছু কিছু সাহাবী দুইবার হিজরত করেন।
♦️ নাজাশীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কুরাইশরা মুসলমানদের ফেরত আনতে
★ আমর ইবন আস এবং
★ আবদুল্লাহ ইবন রাবিয়া এর প্রতিনিধিত্বে দুটি প্রতিনিধি পাঠায়, তারা নাজাশী রাজাকে উপহার দিয়ে মুসলমানদের প্রত্যর্পণ চাইলো।
তখন মুসলমানদের পক্ষে কথা বলার দায়িত্ব নিলেন হযরত জাফর ইবন আবি তালিব (রা.)।
তিনি নাজাশীর সামনে ইসলামের শিক্ষা ব্যাখ্যা করে কুরআনের সূরা মরিয়মের অংশ তিলাওয়াত করলেন।
যেখানে হজরত মরিয়ম (আঃ) ও হজরত ঈসা (আঃ) এর পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।
কুরআনের আয়াত শুনে নাজাশী কাঁদতে কাঁদতে বললেন - “এই বাণী ও ঈসার বাণী একই উৎস থেকে এসেছে।”
তারপর তিনি ঘোষণা দিলেন - “আমি তোমাদের কাউকে ফিরিয়ে দেব না; তোমরা আমার দেশে নিরাপদ।”
এভাবেই মুসলমানরা হাবশায় আশ্রয় পেয়ে নিরাপদে জীবনযাপন করলেন।
♦️ ফলাফল
★ মুসলমানরা প্রথমবার নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার সুযোগ পেলেন।
★ ইসলামের বার্তা আরবের বাইরে প্রথম ছড়িয়ে পড়লো।
২. আবু তালিবের ঘাঁটিতে (শিয়াবে আবি তালিব) অবরোধ
♦️ সময়কাল -
★ নবুয়তের ৭ম থেকে ১০ম বছর পর্যন্ত, প্রায় তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল এই অবরোধ।
⚔️ ঘটনার সূচনা -
কুরাইশরা যখন দেখলো যে,
★ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চাচা আবু তালিব রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছেন, আর
★ ইসলাম ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে,
তখন তারা নবী ﷺ ও তাঁর অনুসারীদের সমাজচ্যুত করার পরিকল্পনা নেয়।
♦️ সামাজিক বয়কটের চুক্তি
কুরাইশরা একটি লিখিত চুক্তি তৈরি করল যাতে বলা হয় -
★ “আমরা মুহাম্মাদ ﷺ, তাঁর অনুসারী ও বনী হাশিম গোত্রের লোকদের সঙ্গে
— বাণিজ্য করব না,
— বিবাহ করব না,
— মেলামেশা করব না, -
★ যতক্ষণ না তারা মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে তুলে দেয়।”
এই দলিলটি লিখিত আকারে লিখে কাবাঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
♦️ শিয়াবে আবি তালিবে অবরুদ্ধ জীবন
রাসূলুল্লাহ ﷺ, তাঁর পরিবার (বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব গোত্রের লোকজন) সবাই (অনেকে মুসলমান না হওয়া সত্ত্বেও) মক্কার বাইরে এক সংকীর্ণ উপত্যকায় আশ্রয় নেন, ইসলামের ইতিহাসে এটিই “শিয়াবে আবি তালিব” নামে পরিচিত।
★ তাঁরা সেখানে তিন বছর কঠিন অবস্থায় কাটান,
★ খাদ্য ও পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে,
★ শিশুদের কান্না মক্কার বাইরে থেকেও শোনা যেত,
★ কেবল হজের মৌসুমে সামান্য বাণিজ্য করা সম্ভব হতো।
♦️ অবরোধের সমাপ্তি
শেষে আল্লাহর কুদরতে সেই চুক্তিপত্রে ঘুণ (পোকা) ঢুকে সব লেখা খেয়ে ফেলে শুধু “বিসমিকা আল্লাহুম্মা” বাক্যটি অক্ষত থাকে।
এ কথা যখন আবু তালিব কুরাইশদের বললেন, তারা কাবাঘরে গিয়ে দেখল, বস্তুত চুক্তিপত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে।
তখন কুরাইশদের কিছু ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি যেমন -
★ হিশাম ইবন আমর,
★ মুতইম ইবন আদী,
★ যুহাইর ইবন উমাইয়া
এরা মিলে বয়কট ভেঙে দেয়।
♦️ আর এভাবেই তিন বছরের অবরোধের অবসান ঘটে।
♦️ পরিণতিঃ-
অবরোধ শেষে শীঘ্রই দুইজন মহান ব্যক্তি মারা যান —
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর চাচা আবু তালিব,
২. প্রিয় স্ত্রী খাদিজা (রা.)।
তাই এই বছরকে বলা হয় “আমুল হুযন” (দুঃখের বছর)।
♦️ নির্ভরযোগ্য সূত্রসমূহ
★ ইবন ইশাম, আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ
★ ইবন সাদ, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা
★ তাবারী, তারীখুল উমাম ওয়াল মুলুক
★ সহীহ বুখারী (হাবশায় হিজরতের হাদীস)

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

36,983 টি প্রশ্ন

36,310 টি উত্তর

1,788 টি মন্তব্য

3,876 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
10 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 10 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 15324
গতকাল ভিজিট : 25463
সর্বমোট ভিজিট : 57352729
এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
...