132 বার দেখা হয়েছে
"নারী স্বাস্থ্য" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন

"নরমাল" ডেলিভারি হলো এমন একটি ডেলিভারি পদ্ধতি যেখানে কোন প্রকার অস্ত্রোপচার বা সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া জড়িত নয়। এটি একটি ভেজাইনাল ডেলিভারি যা স্বতঃস্ফূর্ত, এমনকি  সহায়ক বা ইন্ডিউসডও হতে পারে। একটি "নরমাল"প্রসব স্তন্যপানকে উদ্দীপিত করে এবং মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ভালো। যাইহোক, কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি  চলে আসে যেখানে সন্তান প্রসবের জন্য সিজারিয়ান অপারেশন জরুরি  হয়ে পড়ে।   সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রসবের মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়েরই যাতে নিরাপদ ও সুস্থ  থাকে।


আমাদের দেশে প্রায় ৩১% মহিলা  "নরমাল" ডেলিভারির  পরিবর্তে সি-সেকশনের মাধ্যমে বেবি জন্ম দিয়ে থাকেন।

আপনি যদি মন থেকে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি করাতে আগ্রহী হয়ে থাকেন,  তাহলে আপনি এই টিপসগুলির ফলো করতে পারেন যার মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারির চান্স বৃদ্ধি পেতে পারে।


১. মানুষিক  চাপ কমানঃ

বিভিন্ন স্টাডি থেকে এটি প্রমানিত যে, মায়ের অতিরিক্ত মানুষিক চাপ অকাল জন্ম (Premature delivery)  এবং কম ওজনের (Low birthweight) সাথে জড়িত। আপনি যদি পুরো গর্ভাবস্থায় আপনার চাপকে ম্যানেজ করতে পারেন এবং পজিটিভ থাকতে পারেন তাহলে তা  আপনাকে সুস্থ থাকতে  এবং  প্রসবের সময় একটি ভাল ফলাফল পেতে সাহায্য করতে পারে।  নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়াতে চেষ্টা করুন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ  ও সহানুভূতিশীল মানুষের সাথে সঙ্গ বজায় রাখুন। আপনি শান্ত এবং ইতিবাচক থাকার জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।


২. স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ

সন্তান জন্মদানের জন্য আপনাকে আপনার সেরাটা দিতে হবে, তাই গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খাওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

ফল মূল, শাকসবজি, শস্য, চর্বিহীন মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে আপনার পছন্দের স্বাস্থ্যকর খাদ্যটি  বেছে নিন।

যেসব খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও  ভিটামিন সমৃদ্ধ সেগুলো খান। বিশেষ করে গাঢ় সবুজ শাক, বাধাঁকপি, লেটুস পাতা, পালং শাক,  ব্রকলি; ব্লুবেরি, পেঁপে এবং সাইট্রাস ফ্রুটস।

অতিরিক্ত  চিনি পরিহার করুন।

আপনার ডাক্তার যেসব খাবার নিষেধ করবেন তা মেনে চলুন। অর্গান মিট (কলিজা, হার্ট, গিলা, ভূরি ইত্যাদি), কিছু সামুদ্রিক খাবার এবং রাস্তার খাবার (street foods) প্রায়ই গর্ভাবস্থায় এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভাল খাওয়ার পাশাপাশি, আপনার শরীর এবং বিকাশমান শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিটামিন ও আয়রন নিশ্চিত করতে প্রসবপূর্ব ভিটামিন গ্রহণ করুন।


৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ

ব্যায়াম আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু গর্ভাবস্থা জুড়ে, ব্যায়াম আরও বেশি সুবিধা দেয়। প্রথমত, এটি আপনার সহনশীলতা বাড়ায়, আপনাকে প্রসব এবং প্রসবের সময় শক্তিশালী থাকতে সাহায্য করে। ব্যায়াম আপনার পেশীকে নমনীয় রাখে যাতে আপনি প্রসব বেদনা সহ্য করতে পারেন। শক্তিশালী উরু এবং পেলভিক পেশী প্রসব এবং প্রসবের সময়ও সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় চলাফেরা শিশুকে সঠিক অবস্থানে আনতেও সাহায্য করে। আপনাকে ম্যারাথন দৌড়াতে হবে না। আপনি যে জিনিসগুলি উপভোগ করেন তা করুন। নাচুন, লেকের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করুন, এ ব্যাপারে  আপনি আপনার গাইনকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন ও আপনার  কোনো সীমাবদ্ধতা  থাকলে তা জেনে নিন।


৪. সন্তান জন্ম সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করুনঃ

জ্ঞানই শক্তি, তাই গর্ভকালীন সময়ে এ সংক্রান্ত  গবেষণা চালিয়ে যান। এমন বই পড়ুন যা থেকে জানতে পারবেন প্রসব এবং প্রসবের সময় কি আশা করা যায়। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করুন, সেখান থেকে শুধু পজিটিভ মন্তব্য  ফলো করুন। সন্তানের জন্ম সম্পর্কে ভয়ঙ্কর গল্প এড়াতে চেষ্টা করুন। কোন বিষয়ে  অস্পষ্টতা থাকলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে তা সমাধান করুন।


৫. পর্যাপ্ত ঘুমানঃ

লক্ষ লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারে না। তাদের ঘুম আসতে চায় না বা ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসে না। আপনি যখন গর্ভবতী হন, তখন আপনার শরীরকে ক্লান্ত বোধ করা থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার কিন্তু এ সময়ে ঘুম আসা আরও কঠিন হতে পারে। Sleep Foundation.org এর মতে, মহিলাদের প্রায়ই ঘুমের ব্যাধি থাকে যা তাদের গর্ভাবস্থার কারণে আরও খারাপ হয়। আপনার শরীর যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় তা নিশ্চিত করতে ঘুমের সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার উপায় খুঁজুন।


আপনি বাম পাশে কাত হয়ে  আপনার হাঁটুর মধ্যে একটি এবং আপনার পেটের নীচে অন্য একটি নরম বালিশ  রেখে শুলে আপনার নীচের পিঠ থেকে চাপ অনেক টা কমে যাবে, আপনার ও বেবির শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে।

বাথরুম ব্যবহার করার জন্য যদি আপনাকে রাতে উঠতে হয় তবে যতদূর সম্ভব তন্দ্রাভাবটা রাখার চেষ্টা করুন, এতে পুনরায় ঘুম আসতে সাহায্য হবে। আলো জ্বালানোর পরিবর্তে ড্রিম লাইট ব্যবহার করুন। 

ঘুম থেকে জেগে ফোন চেক করবেন না।

সারাদিনে ৩ ঘন্টা পর পর অল্প করে  খাবার খান এবং এসিডিটি ও বুকজ্বলা থেকে বাঁচতে সন্ধ্যায় মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।

আপনি যদি ঘুমাতে না পারেন তবে জোর করার চেষ্টা না করে উঠুন এবং মেডিটেশন (শিথিলায়ন) করুন। কঠিন বই পড়তে পারেন,  উষ্ণ স্নান করতে পারেন যা আপনাকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

ঘুমানোর প্রায় এক ঘন্টা আগে আপনার ফোন বন্ধ করুন। ইলেকট্রনিক্স উত্তেজক হতে পারে, যা ঘুমাতে যাওয়া কঠিন করে তোলে।


6. একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করুনঃ

আপনার স্বামী, পরিবার পরিজন  সবাই একমত হোন   "নরমাল" ডেলিভারির  বিষয়ে।প্রসবকালীন সময়ে সবার সহযোগিতা দরকার। ডেলিভারির ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্তকে সবাই মেনে নিবে।


৭. চিকিৎসকের সাথে কথা বলুনঃ

প্রথম থেকেই আপনার গাইনকোলজিস্ট ও তার টিমকে বলুন আপনি নরমাল ডেলিভারি করাতে আগ্রহী।  আপনার গাইনকোলজিস্ট আপনার মেডিকেল ও অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে যদি বলেন আপনার নরমাল ডেলিভারিতে কোন ঝুঁকি নাই তাহলে তা আপনাদের মানুষিক প্রস্ততিকে শক্তিশালী করবে। এতে আপনার প্রয়োজনের সাথে মানানসই সমাধানগুলি খুঁজতে আপনি আপনার চিকিৎসকের সাথে যৌথভাবে  কাজ করতে পারবেন। আপনি যে হাসপাতাল বা গাইনকোলজিস্ট এর আন্ডারে থাকবেন তার নরমাল ডেলিভারির হার কত তা জেনে নিন।


৮. পর্যাপ্ত পানিপান করুনঃ

শিশুর বিকাশের জন্য পানি অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ, তাই আপনার গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পানিশূন্যতা পরিহার করুন।  আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী একজন গর্ভবতী মহিলার দৈনিক ৮ থেকে ১২  গ্লাস পানি প্রান করা উচিত।  আপনি আপনার ক্যাফিন (চা-কফি) গ্রহণ সীমিত করতে পারেন, কারণ ক্যাফিন একটি মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, যার ফলে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। কঠোর ব্যায়াম এবং অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়াতে চেষ্টা করুন, কারণ এই জিনিসগুলি ঘামের মাধ্যমে আপনার শরীরের পানি হারাতে পারে যা আপনাকে পানিশূন্য করতে পারে। প্রচুর ঘাম হলে বেশি করে পানি পান করুন।


ডেলিভারি জন্য প্রস্তুতিঃ

আপনি যখন ডেলিভারি টেবিলে শোয়ে ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করবেন সে সময়টা হওয়া উচিত  সবচেয়ে আনন্দের ও বিস্ময়ের কারণ অল্পক্ষণের মধ্যে আপনার কোল আলোকিত করতে নতুন সদস্য আসছে। গর্ভাবস্থা বিস্ময় এবং বিস্ময়ের সময় হওয়া উচিত যখন আপনি আপনার আনন্দের বান্ডিলের (বেবির) জন্মের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনার গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন নেওয়া আপনাকে প্রসবের সময় আপনাকে  সাহায্য করবে, আপনি নরমাল বা সি-সেকশন যা-ই করেন না কেন।  এটি আপনাকে ডেলিভারির পরেও সাহায্য করবে কারণ আপনার শরীর অতিরিক্ত শরীর (বেবি) বহন করার চাপ থেকে পুনরুদ্ধার করে। আপনার ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং আপনার স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আপনি যা করতে পারেন তা করুন।


লেখক

ডাঃ সারওয়াত আফরিনা রুমা

কনসালটেন্ট সনোলজিস্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
1 টি উত্তর
30 নভেম্বর, 2022 "নারী স্বাস্থ্য" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন অজ্ঞাতকুলশীল
1 টি উত্তর
8 অক্টোবর, 2022 "নারী স্বাস্থ্য" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Sanuara Begum
1 টি উত্তর
23 জানুয়ারি, 2023 "যৌন সমস্যা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন অজ্ঞাতকুলশীল
0 টি উত্তর
1 টি উত্তর
22 অক্টোবর, 2023 "রোগ ও চিকিৎসা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন M.S.C_Safwana
1 টি উত্তর
27 জুন, 2021 "যৌন সমস্যা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন অজ্ঞাতকুলশীল
0 টি উত্তর

33,909 টি প্রশ্ন

32,837 টি উত্তর

1,567 টি মন্তব্য

3,186 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
21 জন অনলাইনে আছেন
1 জন সদস্য, 20 জন অতিথি
এখন অনলাইনে আছেন
আজকে ভিজিট : 24235
গতকাল ভিজিট : 35871
সর্বমোট ভিজিট : 41602861
  1. MuntasirMahmud

    763 পয়েন্ট

    150 টি উত্তর

    8 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    386 পয়েন্ট

    65 টি উত্তর

    61 টি গ্রশ্ন

  3. Rahmat

    275 পয়েন্ট

    35 টি উত্তর

    50 টি গ্রশ্ন

  4. Kuddus

    81 পয়েন্ট

    16 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. Mdmasud999

    56 পয়েন্ট

    1 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...