“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লহ জানেন, তোমরা জান না।” –সূরা নুর, আয়াতঃ ১৯।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্যে আল্লহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন- নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, এবং দাইয়ুস।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৮৩৯, সহীউল জামে, হাদিস নং ৩০৪৭)
দাইয়ুস সম্পর্কে রসুলুল্লহ স. বলেছেন,“ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কু-কর্মকে মেনে নেয়।” (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-কন্যা সহ পরিবারের অধীনস্ত অন্য সদস্যদের বেপর্দা চলাফেরা ও অশ্লীল কাজকর্ম বা ব্যভিচারকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে অথবা কোনরূপ বাধা না দিয়ে মৌনতা অবলম্বন করে।
ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন, ‘দাইয়ূস’ সে ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে এ ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’। (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের- ১/৫০)
হাদিসটির ব্যাখ্যা বিস্তারিত। তবে এখানে মুল বিষয় হলঃ- ফাহেশা বা অশ্লীলতা। যে তার নিজ পরিবারে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে শিথিলতা প্রদর্শন করে, স্ত্রী-কন্যাদেরকে পর্দার আদেশ করে না, পর্দা পালনে উৎসাহিতও করে না, ঘরে নিষিদ্ধ গান-বাদ্য দিব্যি চলে, এর কোন প্রতিবাদ করে না; এ রকম সকল শরীয়াহ বিরোধী অশ্লীলতাকে মেনে নেয় – সে ব্যক্তিই হচ্ছে 'দাইয়ুস'।
দাইয়ুস ব্যক্তি সম্পর্কে রসুলুল্লহ স. বলেছেন, “দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (নাসায়ী শরীফঃ ২৫৬২, মিশকাতঃ ৩৬৫৫)
রসুলুল্লহ স. আরও বলেছেন, “জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্থের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। অতঃপর দেশের শাসক জনগণের উপর দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী-গৃহের উপর দায়িত্বশীলা। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল। সেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯)
আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, “হে বিশ্বাসী বান্দাগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুণ থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা তা-ই করে যা করতে তাদের আদেশ করা হয়।” (সূরা তাহরিম-৬)
উল্লেখ্য যে একটি পরিবারের কর্তা/ প্রধান অভিভাবক হতে পারে পিতা, বড় ভাই, স্বামী, পুত্র। এরা প্রত্যেকেই তার অধনস্থ কেউ যদি কোন অশ্লীলতা করে অথচ সে তাতে বাধা প্রধান না করে তাহলে উক্ত পাপের দায়ভার তাদের উপরও বর্তাবে। এরাই হচ্ছে দাইউস।
দাইউস ও এর পরিণতি সম্পর্কে রসুলুল্লহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের ভাষ্য তো স্পষ্ট এবং আল্লহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেও দিলেন আমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং অধীনস্থদের সম্পর্কে আমরা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবো। উপরন্তু আল্লহ তা’আলা আদেশও করেছেন বান্দা যেন নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচায়। তাই সাধারণভাবে সমস্ত অধীনস্থদেরকে এবং বিশেষভাবে পরিবার-পরিজনদেরকে যাবতীয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, অন্যায়, পাপাচার এবং বে-পর্দা চলাফেরা করা থেকে বিরত রাখা এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো আমাদের উপর ফরয।