♦️ ইমামে আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(সম্পূর্ণ নাম: নু’মান ইবন সাবিত ইবন জুতাহ)
ইসলামি fiqh বা ইসলামী আইনশাস্ত্রের ইতিহাসে তিনি এক অনন্য নাম। তিনি হচ্ছেন হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, যা আজ পৃথিবীর বৃহৎ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অনুসৃত মাযহাব।
♦️জন্ম ও পরিবার
-
জন্ম: ৮০ হিজরি / ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ
-
স্থান: কুফা, ইরাক
-
তাঁর পূর্বপুরুষরা পারসিয়ান (ফারসি) ছিলেন।
-
পিতা সাবিত ছিলেন একজন সৎ, আল্লাহভীরু ও সম্মানিত বণিক।
শৈশবে জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল খুব গভীর। কুফা ছিল তৎকালীন ইসলামী জ্ঞানচর্চার অন্যতম কেন্দ্র, যার কারণে তিনি সহজেই বড় বড় আলিমদের সাহচর্য পেয়েছিলেন।
♦️শিক্ষা ও গুরু
ইমামে আজম বহু মহান আলিমের শিষ্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণ -
|
শিক্ষক
|
পরিচিতি
|
|
হাম্মাদ ইবন আবু সুলাইমান
|
কুফার প্রধান ফিকাহ আলিম
|
|
আতা ইবন রবাহ
|
মক্কার বিখ্যাত তাবেঈ আলিম
|
|
ইমাম জাফর সাদিক (রঃ)
|
আহলে বায়তের মহান আলিম
|
|
আনাস ইবন মালিক (রঃ)
|
একাধিক সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ ও হাদিস শ্রবণ
|
তিনি ৪,০০০-এরও বেশি আলিম থেকে জ্ঞান অর্জন করেন।
♦️ ফিকহী চিন্তাধারা ও পদ্ধতি
ইমামে আজম ছিলেন অত্যন্ত গভীর চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী ফকীহ।
তাঁর ফিকহের মূল বৈশিষ্ট্য:
-
কুরআন
-
হাদিস
-
সাহাবাদের ফতওয়া
-
ইজমা (মতৈক্য)
-
কিয়াস (যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত)
তিনি যুক্তি, বাস্তবতা ও মানবিকতার সমন্বয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
♦️ শিক্ষাদান ও ছাত্রসংখ্যা
তিনি ৩০ বছর দারস (শিক্ষা) প্রদান করেন। তার ছাত্রদের মধ্যে অনেকে বিশ্ববিখ্যাত, যেমন -
|
ছাত্র
|
পরিচিতি
|
|
ইমাম আবু ইউসুফ
|
প্রথম "কাযি-উল-কুয্যাত" (মহা প্রধান বিচারপতি)
|
|
ইমাম মুহাম্মদ শায়বানী
|
ফিকহী গ্রন্থসমূহের লেখক
|
|
ইমাম জুফর
|
হানাফি মাযহাবের একটি বিশেষ ধারার ব্যাখ্যাতা
|
♦️ নৈতিকতা ও চরিত্র
-
তিনি ছিলেন অতুলনীয় দানশীল।
-
প্রতি বছর তিনি তাঁর ব্যবসার সমস্ত মুনাফা গরীব, ছাত্র, মসজিদ ও আলিমদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
-
সত্য কথা বলার সাহস ছিল অসাধারণ।
♦️খলিফাদের অত্যাচার ও কারাবাস
খলিফা আবু জাফর মানসুর তাঁকে জোর করে বাগদাদের প্রধান বিচারপতি (কাজি) হতে বলেছিলেন।
কিন্তু তিনি ন্যায়বিচারে আপস করবেন না বলে পদ গ্রহণ করেননি।
এ কারণে তাঁকে কারাবন্দী করা হয় এবং অত্যাচার করা হয়।
♦️ইন্তেকাল -
-
সাল: ১৫০ হিজরি / ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ
-
স্থান: বাগদাদ
-
তাঁকে জেলখানাতেই বিষপ্রয়োগ করে শহীদ করা হয় (আলিমদের অধিকাংশের মত অনুযায়ী)।
-
তাঁর জানাজায় জনতা এত বেশি ছিল যে ৬ বার জানাজা পড়তে হয়।