তিতুমিরের বাঁশের অনুপ্রেরনায় বহু বাঙালি হাতে বাঁশ তুলে নেয় ও ইংরেজদের বাঁশ দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। তখন তিনি বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। সেই প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধকে মহাপ্রলয়ঙ্করী রূপ দেয়ার জন্য এবং তাঁর বাহিনীর নিরাপত্তা, অস্ত্রশস্ত্র (মানে বাঁশ) মজুদ ও বাহিনীকে রণকৌশল প্রশিক্ষণের জন্য ১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বারসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই অপূর্ব কেল্লা নির্মাণ করেন তিনি।
তিতুমির যখন বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন তখন সেই বাঁশের কেল্লা দেখে ইংরেজরা কেল্লাফতে যান এবং ইংরেজ বাহিনীতে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে যায়। অনেক কিলাকিলি-মারামারি হওয়ার পরও যখন ইংরেজরা তিতুমিরের হাতে বারবার বাঁশ খাচ্ছিল তখন বাঁশের কেল্লার দিকে মুখ তুলে তাকালেই তাদের আত্মা অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠত ও গত যুদ্ধে খাওয়া কাঁচাপাকা বাঁশের কথা মনে হত।
অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও কামানগোলা নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের অক্রমন করে। তিতুমির তাঁর অনুসারীদের নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, কিন্তু কামানগোলার আঘাতে তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। যেই যুদ্ধে বাঁশের বিরুদ্ধে ইংরেজদের কামানগোলা ব্যবহার করতে হয়, সেই যুদ্ধে বাঁশ কত বড় একটা অস্ত্র ছিল তা বলা বাহুল্য। অবশেষে ১৯শে নভেম্বর তিতুমীর নিহত হন। তাঁর বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয়া হয়।
এই বাঁশ যদি না থাকতো তাহলে বাঙালি অনুপ্রেরণার অভাবে তিতুমির এতদূর আসতে পারত না, পারত না ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে। তিতুমিরের এই বিদ্রোহ পরবর্তীতে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। অপর কথায় বলা যায় বাঁশই আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা, আমাদের একমাত্র অস্ত্র যার প্রতিটি গিঁটে গিঁটে রয়েছে পরাধীনতার শিকল ভাঙার উচ্ছ্বাস।