সূরা তারাবি পড়িয়ে টাকা নেয়া জায়েয আছে। কেননা, সূরা তারাবি তে মূল লক্ষ্য থাকে নামায পড়ানো। আর নামাযের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ। তাই সূরাতারাবি পড়িয়ে টাকা নেয়া যাবে।
পক্ষান্তরে খতম তারাবিতে যেহেতু কোরআন খতমই মূল লক্ষ্য থাকে, তাই খতম তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া ও দেয়া জায়েয নেই। কেননা, তা কোরআন খতমেরই বিনিময় বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে বর্তমানে আমাদের সমাজে রমযানের শেষে যে পদ্ধতিতে হাফেজগণের জন্য চাঁদা উঠানো হয় এবং হাফেজ সাহেবদের তা প্রদান করা হয়, তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কেননা, উক্ত পদ্ধতিতে শরিয়তে নিষিদ্ধ একাধিক কারণ বিদ্যমান। (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭, আল-বাহরুর রায়েক ৮/২৩, মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩) এর দলিল হল,
১. আল্লাহ তাআ’লা বলেন, ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺸْﺘَﺮُﻭﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻲ ﺛَﻤَﻨًﺎ ﻗَﻠِﻴﻠًﺎ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻱَ ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﻥِ আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। (সুরা বাকারা ৪১)
২. সুলাইমান ইবন বুরাইদা তাঁর পিতা থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻳَﺘَﺄَﻛَّﻞُ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﺎﺀَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻭَﺟْﻬُﻪُ ﻋَﻈْﻢٌ ، ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻟَﺤْﻢٌ যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে বিনিময়ে মানুষ থেকে ভক্ষণ করল, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় হাড্ডি থাকবে, কোনো প্রকার গোশত থাকবে না। (বাইহাকি, শু’আবুল ঈমান ৪/১৯৬)
৩. ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺑِﻪِ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﺠِﻲﺀُ ﺃَﻗْﻮَﺍﻡٌ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ ১৯৯১৭ তিরমিযি ২৯১৭)
৪. আবদুর রহমান ইবনে শিবল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻐْﻠُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻔُﻮﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﺄْﺛِﺮُﻭﺍ ﺑِﻪِ তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। (মুসনাদে আহমদ ১৫৫২৯ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০)
৫. আবদুল্লাহ ইবনে মা’কাল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজানে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ রাযি. তাঁর কাছে একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন, ﺇِﻧَّﺎﻟَﺎ ﻧَﺄْﺧُﺬُﻋَﻠَﻰﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﺃَﺟْﺮًﺍ আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭৮২১)
এরূপ আরো বহু হাদিস ও দলিল প্রমাণের আলোকে উম্মতের ফকিহগণ তারাবীতে পবিত্র কোরআন খতমের বিনিময়ে বা হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন।
তারপরও একটি বিষয় থেকে যায়, তাহলো মুসলমানগণের আবেগ, হাফেজদের মূল্যায়ন করা তাদের খেদমত করা, তা কিভাবে সম্ভব? মুসলমানদের এরূপ আবেগ, ভক্তি- ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। কারণ পবিত্র কোরআনের হাফিজের অগণিত ফজিলত হাদিস শরিফে এসেছে। তাই হাফেজদের মূল্যায়ন করা, মুহাব্বত করা, তাদের যথাসম্ভব খেদমত করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি বিষয়। শরিয়তে এরও পদ্ধতি ভিন্নভাবে আছে। রমজানসহ সারা বছর তাদের খেদমত করার সুযোগ আছে। যেমন- এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের সর্বপ্রথম দ্বীনি দায়িত্ব হলো পবিত্র কোরআনের হাফিজকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা ও ভক্তি করা। এই ভালোবাসা ও ভক্তি সব সময়ের জন্য, সারা বছরের জন্য। শুধু রমজানের জন্য সীমাবদ্ধ নয়।