325 বার দেখা হয়েছে
"কুরআন ও হাদিস" বিভাগে করেছেন

পবিত্র মাহে রমজানে "খতমে তারাবীহ" পড়ায়ে বিনিময়/হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া জায়েজ আছে কি না? 

কুরআন হাদিসের আলোকে দলিল প্রমাণসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। 

বিঃদ্রঃ- কোন একজন হক্কানী আলেম বা মুফতি সাহেব সঠিক উত্তর প্রদান করিবেন।

2 উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
খতম তারাবির বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দু’টোই নাজায়েজ। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েজ হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসেবে দিলেও জায়েজ নয়, কয়েক ওয়াক্ত নামাজের দায়িত্ব দিয়ে দিলেও জায়েজ নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা হলো, খতম তারাবির বিনিময় গ্রহণের জন্য হিলা অবলম্বন করলেও তা জায়েজ হবে না। কারণ খতম তারাবি খালেস একটি ইবাদত, যা নামাজ ও রোজার মতো ইবাদতে মাকসুদার অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েজ। এতে না কোনো মাজহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইসলামি স্কলারদের মাঝে কোনো মতভেদ আছে। ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ইসলামি স্কলারদের দৃষ্টিতে জায়েজ। কিন্তু খতম তারাবির বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সব ইসলামি স্কলারের নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ইসলামি স্কলাররা যে ইমামতির বেতন জায়েজ বলেছেন, সেটা হলো ফরজের ইমামতি। সুন্নত জামাতের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আর হাফেজদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েজ করার জন্য এমন হিলা (বাহানা, উসিলা) অবলম্বন করা যে শুধু রমজান মাসের জন্য তার ওপর দু’এক ওয়াক্ত নামাজের দায়িত্ব দিয়ে বাহানা বানানো ঠিক না। এগুলো পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার যে বিনিময়টা তাকে ফরজের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে আর তারাবির খতম সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন্তু আপনার মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেজ সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরজ নামাজের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেন আর খতম তারাবিতে অংশগ্রহণ না করেন তবে কি তাকে ওই বিনিময় দেওয়া হবে, যা খতম তারাবি পড়ালে দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনও তা দেওয়া হবে না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবির, ফরজের ইমামতির নয়। এ জন্যই আকাবিরের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলিলের ভিত্তিতেও তাদের ফতওয়াই সহি-শুদ্ধ। -ইমদাদুল ফাতাওয়া: এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ১. হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। - মুসনাদে আহমদ: ৩/৪২৮ ২. হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন পড় এবং আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। -মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৩৭ ৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাকিল থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রহ.) তার কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৫/২৩৭
0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন

সূরা তারাবি পড়িয়ে টাকা নেয়া জায়েয আছে। কেননা, সূরা তারাবি তে মূল লক্ষ্য থাকে নামায পড়ানো। আর নামাযের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ। তাই সূরাতারাবি পড়িয়ে টাকা নেয়া যাবে। 

পক্ষান্তরে খতম তারাবিতে যেহেতু কোরআন খতমই মূল লক্ষ্য থাকে, তাই খতম তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া ও দেয়া জায়েয নেই। কেননা, তা কোরআন খতমেরই বিনিময় বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে বর্তমানে আমাদের সমাজে রমযানের শেষে যে পদ্ধতিতে হাফেজগণের জন্য চাঁদা উঠানো হয় এবং হাফেজ সাহেবদের তা প্রদান করা হয়, তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কেননা, উক্ত পদ্ধতিতে শরিয়তে নিষিদ্ধ একাধিক কারণ বিদ্যমান। (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭, আল-বাহরুর রায়েক ৮/২৩, মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩) এর দলিল হল, 

১. আল্লাহ তাআ’লা বলেন, ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺸْﺘَﺮُﻭﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻲ ﺛَﻤَﻨًﺎ ﻗَﻠِﻴﻠًﺎ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻱَ ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﻥِ আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। (সুরা বাকারা ৪১) 

২. সুলাইমান ইবন বুরাইদা তাঁর পিতা থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻳَﺘَﺄَﻛَّﻞُ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﺎﺀَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻭَﺟْﻬُﻪُ ﻋَﻈْﻢٌ ، ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻟَﺤْﻢٌ যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে বিনিময়ে মানুষ থেকে ভক্ষণ করল, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় হাড্ডি থাকবে, কোনো প্রকার গোশত থাকবে না। (বাইহাকি, শু’আবুল ঈমান ৪/১৯৬) 

৩. ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺑِﻪِ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﺠِﻲﺀُ ﺃَﻗْﻮَﺍﻡٌ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ ১৯৯১৭ তিরমিযি ২৯১৭) 

৪. আবদুর রহমান ইবনে শিবল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻐْﻠُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻔُﻮﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﺄْﺛِﺮُﻭﺍ ﺑِﻪِ তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। (মুসনাদে আহমদ ১৫৫২৯ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০) 

৫. আবদুল্লাহ ইবনে মা’কাল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজানে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ রাযি. তাঁর কাছে একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন, ﺇِﻧَّﺎﻟَﺎ ﻧَﺄْﺧُﺬُﻋَﻠَﻰﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﺃَﺟْﺮًﺍ আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭৮২১) 

এরূপ আরো বহু হাদিস ও দলিল প্রমাণের আলোকে উম্মতের ফকিহগণ তারাবীতে পবিত্র কোরআন খতমের বিনিময়ে বা হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন। 

তারপরও একটি বিষয় থেকে যায়, তাহলো মুসলমানগণের আবেগ, হাফেজদের মূল্যায়ন করা তাদের খেদমত করা, তা কিভাবে সম্ভব? মুসলমানদের এরূপ আবেগ, ভক্তি- ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। কারণ পবিত্র কোরআনের হাফিজের অগণিত ফজিলত হাদিস শরিফে এসেছে। তাই হাফেজদের মূল্যায়ন করা, মুহাব্বত করা, তাদের যথাসম্ভব খেদমত করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি বিষয়। শরিয়তে এরও পদ্ধতি ভিন্নভাবে আছে। রমজানসহ সারা বছর তাদের খেদমত করার সুযোগ আছে। যেমন- এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের সর্বপ্রথম দ্বীনি দায়িত্ব হলো পবিত্র কোরআনের হাফিজকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা ও ভক্তি করা। এই ভালোবাসা ও ভক্তি সব সময়ের জন্য, সারা বছরের জন্য। শুধু রমজানের জন্য সীমাবদ্ধ নয়।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
1 টি উত্তর
1 টি উত্তর
19 নভেম্বর, 2022 "ফতোয়া" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Rubel.Islam

33,909 টি প্রশ্ন

32,842 টি উত্তর

1,567 টি মন্তব্য

3,186 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
25 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 25 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 36773
গতকাল ভিজিট : 35871
সর্বমোট ভিজিট : 41615313
  1. MuntasirMahmud

    778 পয়েন্ট

    153 টি উত্তর

    8 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    396 পয়েন্ট

    67 টি উত্তর

    61 টি গ্রশ্ন

  3. Rahmat

    275 পয়েন্ট

    35 টি উত্তর

    50 টি গ্রশ্ন

  4. Kuddus

    81 পয়েন্ট

    16 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. Mdmasud999

    56 পয়েন্ট

    1 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...