আয়াতসংখ্যা গণনার জন্য একটি বিশেষ শাস্ত্র আছে যার মাধ্যমে কুরআন কারীমের প্রত্যেক সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ও পুরো কুরআন মাজীদের মোট আয়াত সংখ্যা জানা যায় যাকে ইলমুল কিরা’আত(ﻢﻠﻋ ﺕﺀﺍﺮﻘﻟﺍ) ও ইলমুল তাজওয়ীদের( ﻢﻠﻋﺪﻳﻮﺠﺘﻟﺍ ) ইমামগণ ইলমু আদাদি আয়াতিল কুরআন ) ( ﻢﻠﻋﺪﻋﺩ ﺕﺎﻳﻵﺍﻥﺁﺮﻘﻟﺍ বলে জানে। যার অন্যতম বিষয় হলো ফাওয়াসিলুল আয়াত (ﻞﺻﺍﻮﻓ ﺕﺎﻳﻵﺍ) বা আয়াতের সূচনা- পরিসমাপ্তি জানা। বলে রাখা ভালো যে, এই শাস্ত্র উলুমূল কুরআনের অন্যতম একটি পৃথক শাখা শাস্ত্র। ইলমে আদাদ এটি রাসুলুল্লাহর(ﷺ) শিক্ষার ফসল। তিনি(ﷺ) সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আযমাঈন) যে শিক্ষা দিয়েছেন তারই ফসল হলো এই ইলমে আদাদ। কুরআনুল কারীম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহর(ﷺ) উপর দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন্ন ঘটনার ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিলো। বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন অংশ এভাবে বিভিন্ন সময় নাযিল হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ও তার সাহাবীরা সেই আয়াত হিফজ (মুখস্ত) করে নিতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহুম আজমাঈন) আয়াত মূখস্থ করার পাশাপাশি তা কোন সূরার অংশ, কোন আয়াতের শুরু কোথা থেকে শুরু হয়েছে বা কোন আয়াত কোথায় শেষ হয়েছে তা ও হিফজ করে নিতেন। পরবর্তীতে প্রজন্ম পরম্পরায় তাদের কাছ থেকে তাবিঈ ও তাবিঈদের থেকে তাবি- তাবিঈনরা কুরআন এভাবেই শিখে নিয়েছেন, এবং পরবর্তীতে তাঁদের থেকে ইলমুল কিরাআতের ইমামগণ এভাবেই শিখেছেন আর সেভাবেই এই সংক্রান্ত কিতাবসমূহে ব্যাপকভাবে ও অসংখ্য হাদীছ ও আছার দ্বারা বর্ণিত হয়ে এসেছে।
সাধারনত কয়েক ধরনের বা এলাকার গণনা পদ্ধতি প্রসিদ্ধ।
১) মাদানী গণনাঃ মাদানী গণনা দুই ধরনের
(ক) প্রথম মাদানী গণনা ( ﻲﻧﺪﻤﻟﺍﻝﻭﻷﺍ ): এই গণনা পদ্ধতি ইমাম নাফি ইবনে আবি নুয়াইম মাদানী(মৃ ১৬৯হি) আবু ইয়াযীদ ইবনে কা’কা(মৃ ১৩২হি) এবং শাইবা ইবনে নিসাহ(মৃ ১৩০হি) থেকে বর্ণনা করেন। এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২১৭।
(খ) দ্বিতীয় মাদানী গণনা ( ﻲﻧﺪﻤﻟﺍﻲﻧﺎﺜﻟﺍ ): এই গণনা পদ্ধতি ইমাম ইসমাঈল ইবনে জাফর মাদানী (মৃ ১৮০হি) সুলায়মান ইবনে মুসলিম ইবনে জামমায থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি (সুলাইমান) আবু জাফর (মৃ ১৩২হি) ও শাইবা ইবনে নিসাহ (মৃ ১৩০হি) থেকে বর্ণনা করেন। এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী আয়াত সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২১৪ বা ৬২১০টি।
২) মক্কী গণনাঃ এই গণনা পদ্ধতির ভিত্তি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে কাছীর (মৃ ১২০হি)।
৩) শামী গণনাঃ এই গণনা পদ্ধতির ভিত্তি হলেন ইয়াহইয়াহ ইবনে হারিছ আযযিমারী (মৃ ১৪৫হি) এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী মোট আয়াত সংখ্যা ৬২২৬টি।
৪) বসরী গণনাঃ এই গণনার ভিত্তি হলেন আইয়ুব ইবনে মুতাওয়াক্কিল ও আসেম আলজাহদারী, তারা দুজনেই ইলমের কিরায়াতের ইমাম ছিলেন। এই গণনায় আয়াত সংখ্যা ৬২০৪টি।
৫) কুফী গণনাঃ এই গণনার মূল বর্ণণাকারী হলেন তাবিঈ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী (মৃ ৭৪হি)। এই গণনা পূর্বে এবং বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ছিলো এবং এখনও আছে। এর গণনা পদ্ধতিতে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬টি, এই গণনা অনুযায়ীই সাধারণত বর্তমানে মুসহাফগুলোতে [পূর্ণ কুরআনের কপি] চিহ্ন দেওয়া হয়ে থাকে। ইলমুল আদাদ বা কুরআনের আয়াতসংখ্যার শাস্ত্রের উপর ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই প্রচুর বই-পত্র রচিত হয়ে আসছে। প্রায় শতাধিক বিখ্যাত বই এই শাস্ত্র নিয়ে রচিত হয়েছে।