হাসলে শরীরে যা ঘটেঃ হাসলে শরীরে নানা রকম শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মুখমণ্ডল ও শরীরের পেশি প্রসারিত-সংকুচিত হয়, হৃদঘাত এবং রক্তচাপ পরিবর্তিত হয়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং আমাদের শরীরের সর্বত্র অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রবাহিত হয়। অনেকে বলেন হাসি এবং ব্যায়ামের উপকারিতা একই রকম। হাসির পাশাপাশি যদি কেউ হাল্কা শরীরচর্চা করেন, তাহলে তারা আরো উপকৃত হবেন। যারা ঘরে ব্যায়ামের যন্ত্র দিয়ে শরীরচর্চা করেন তাদের হৃদস্পন্দন ১০ মিনিটে যতটুকু বাড়ে, ১ মিনিটের প্রাণখোলা হাসিতেও সমপরিমাণ হৃদস্পন্দন বাড়ে। হাসলে প্রচুর ক্যালরিও খরচ হয়। হিসেব করে দেখা গেছে ১০-১৫ মিনিটের হাসির ফলে ৫০ ক্যালরি খরচ হয়। এই হিসেব দেখে তাই বলে কেউ যেন শরীরচর্চা ছেড়ে না দেন। একটি চকোলেট খেলেও আমরা ৫০ ক্যালরি পাই। প্রতি ঘণ্টায় ৫০ ক্যালরি খরচ করে আমরা যদি ১ পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের পুরো ১ দিন হাসতে হবে। বিগত কয়েক দশকের গবেষণায় শরীরের ওপরে হাসির প্রভাব সম্পর্কে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। রক্তপ্রবাহ মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ একটা মজার গবেষণা করেছেন। কাউকে কমেডি নাটক বা দুঃখের নাটক দেখতে দিলে তাদের রক্ত প্রবাহের ওপর কেমন প্রতিক্রিয়া হয়, তারা গবেষণার মাধ্যমে সেটাই পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফলাফল যা ভাবার তাই হয়েছে। যারা হাসির নাট দেখেছেন তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ বেড়েছে। smiles 500x354 মানুষ কেন হাসে? হাসলে শরীরে কী ঘটে? বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে সম্পূর্ণ অজানা এবং অন্য রকম একটি টিউনরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিংবা উদ্বেগ, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। কিন্তু কিছু পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, হাস্যরস শরীরে রোগ প্রতিরোধের জন্য দরকারি কোষ এবং অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ডায়াবেটিসের রোগীদের ওপর হাসি তামাশার প্রভাব নিয়ে কিছু গবেষণা হয়েছে। এর ফলাফলও বেশ মজার। বলা হচ্ছে হাসি-তামাশা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমানোর জন্য সহায়ক। শিথিলায়ন এবং ঘুম নরমান কাজিন নামে এক ভদ্রলোক একটি বই লিখেছেন। মূলত তার বইটি হাসির উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসা গবেষখদের প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কাজিনের এক ধরণের বাত হয়েছিল যার ফলে শিরদাঁড়া এবং কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। উনি অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছেন ওষুধ সেবনে তার যত না উপকার হতো, তারচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যেত কোনো হাসির সিনেমা দেখলে। উনি বলেছেন দশ মিনিট হাসতে পারলে দু ঘণ্টা আরামে ঘুমানো যেত। হাসি এক অমূল্য ওষুধ হাসির উপকারিতা নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকলেও গবেষকগণ এর প্রকৃত রহস্য উদ্ধার করতে গিয়ে পড়েছেণ এক গোলক ধাঁধায়। কারণ হাসিসংক্রান্ত গবেষণাগুলোর পরিসর ছোট এবং তেমন নির্ভরযোগ্য ও গোছানো নয়। অনেক গবেষখ আগে থেকেই হাসির ইতিবাচক দিক প্রমাণের জন্য পক্ষপাতমূলক কাজ-কর্ম করেছেন। ফলে হাসির উপকারিতা সম্পর্কে নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া কঠিন। সবচেয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যায় ব্যথা নাশক হিসেবে হাসির ভূমিকা নিয়ে। অনেক গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে হাসলে আঘাতজনিত ব্যথার অনুভূতি অনেক কমে যায়। অবশ্য এটা কি শুধু হাসির প্রভাব, না আর কোনো উপাদান এখানে কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন বলা হচ্ছে হাসলে মানুষের অসুস্থতার হার কমে যায়। নাকি যারা সুস্থ তারা বেশি হাসতে পারেন? এ জন্য হাসিই সুস্থতার নিয়ামক নাকি, সুস্থতার ফল হাসি তামাশা-এ প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ নয়। Smile keep smiling 11813858 1280 1024 মানুষ কেন হাসে? হাসলে শরীরে কী ঘটে? বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে সম্পূর্ণ অজানা এবং অন্য রকম একটি টিউন উন্নত জীবনের জন্য হাসি একথা অনস্বীকার্য হাসি সামাজিকায়নের চাবিকাঠি। হাসি স্বর্গীয়। হাস্যরসিক ব্যক্তি বন্ধুবৎসল, পরিবার-পরিজনবেষ্টিত সুখী মানুষ। এটা হাসির কারণে নাকি সুখী পরিবারের ফসল হাসি, তা নিয়ে অযথা বিতর্ক না করে, আমরা সকলের মুখে হাসি চাই। নিঃসঙ্গ ব্যক্তির চেয়ে বন্ধু-বান্ধব পরিবৃত্ত ব্যক্তি ৩০ গুণ বেশি হাসেন। যারা হাসেন তাদের সঙ্গে আশপাশের মানুষের সংযোগ অধিকতর ঘনিষ্ঠ। স্বাস্থ্যের ওপর এ সবের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। হাসি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু আমরা শুধু বাঁচার জন্য হাসি না। পরিবার প্রিয়জনের সঙ্গে হাস্যময় আন্তরিকতা আমাদের আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করে; কেন করে তা অনুসন্ধান হাসি গবেষকগণ করতে পারেন। হাসি যদি আমরা উপভোগ করি তো সেটাই কি হাসির জন্য যথেষ্ট কারণ নয়? এর জন্য কি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের দরকার আছে? লেখকঃ অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী