118 বার দেখা হয়েছে
"ফতোয়া" বিভাগে করেছেন
মহিলাদের নামাযে বুক হাত বাঁধার দলীল কী?

2 উত্তর

1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
প্রথমে একটি কথা ভাল করে বুঝে নিতে হবে, আমরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী। আমাদের কাছে দলীল হল চারটি। আর দ্বীন পূর্ণতা লাভ করেছে চার দলীল দিয়ে। যথা-

১- কুরআন। ২- সুন্নাহ। ৩- ইজমা। ৪- কিয়াস।

প্রথমে আমরা মাসআলার দলীল কুরআন থেকে নেই।

কুরআনে না পেলে সুন্নাহ থেকে।

সুন্নাহে না পেলে ইজমায়ে উম্মাহ থেকে।

ইজমায়ে না পেলে কিয়াসে শরয়ী থেকে মাসআলার সমাধান করা হয়।

আমরা (মাযহাব মতাবলম্বীগণ) তো এ দাবিই করি না যে, সকল মাসআলার পরিস্কার সমাধান কুরআন ও হাদীস থেকে নিয়ে থাকি। সুতরাং আমাদের কাছে মাসআলার সমাধান শুধু কুরআন ও হাদীস থেকে চাওয়ার কোন মানে হয় না। একথা যারা বলে থাকেন, তাদের কাছে কেবল কুরআন ও হাদীস থেকে তালাশ করা হবে যৌক্তিক।

আমাদের কাছে বলতে হবে যে, দলীল দ্বারা আমাদের মাসআলার প্রমাণ পেশ করতে। আমাদের সেই দলীল কুরআন ও হতে পারে, আবার সুন্নাহ ও হতে পারে, আবার ইজমা বা কিয়াসও হতে পারে।

যে মাসআলা কুরআনে নেই সেই মাসআলার প্রমাণ কুরআন থেকে চাওয়া বোকামী হবে। যেমন কোন ব্যক্তি যদি এসে বলে, কুরআন থেকে নামাযের রাকাত সংখ্যার প্রমাণ দিতে।

তাহলে এ দলীল চাওয়াটি হবে মুর্খতা। কারণ কুরআনে সকল মাসআলার প্রমাণ বাহ্যিকভাবে বিদ্যমান রয়েছে একথার দাবিইতো আমরা করি না, তাহলে শুধু কুরআন থেকে এর প্রমাণ আমাদের কাছে জানতে চাওয়াটি বোকামী ছাড়া কিছু নয়। আর এ মাসআলা কুরআনে বর্ণিতই হয়নি।

তেমনি আমাদের কাছে নামাযের কোন রুকনের কি বিধান, কোনটি সুন্নত? কোনটি নফল? কোনটি ফরজ? কোনটি ওয়াজিব? এসব শব্দসহ হাদীস থেকে জানতে চাওয়াটাও বোকামী।

কারণ আমাদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও হাদীস নয়। বরং ইজমা ও কিয়াসও আমাদের কাছে দলীল। যদিও হাদীসে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব শব্দসহ বিধান বর্ণিত হয় নি, কিন্তু এসব বিষয় শব্দসহ ইজমা ও কিয়াসে বর্ণিত। তাই আমাদের কাছে বলতে হবে আমাদের কাছে দলীলযোগ্য বিষয় দিয়ে মাসআলার প্রমাণ পেশ করতে। কোন নির্দিষ্ট দলীলের মাধ্যমে মাসআলার প্রমাণ পেশ করার দাবি করার বোকামী ছাড়া আর কিছু হবে না।

যে মাসআলার প্রমাণ যেখানে নেই, সেটি দ্বারা উক্ত মাসআলার সমাধান কিভাবে করা হবে? 

উপরোক্ত আলোচনাটি আপনার উদেশ্যে নয়, বরং এটি প্রাসঙ্গিক একটি আলোচনা। বুঝে থাকলে আশা করি  পরিস্কার হয়ে গেছে যে, দ্বীনের সমস্ত মাসআলার দলীল কুরআন ও হাদীস থেকেই পাওয়া যাবে - এমনটি নয়। বরং এমনভাবে জানতে চাওয়াটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। কারণ কুরআন ও হাদীসে বাহ্যিকভাবে সমস্ত মাসআলার প্রমাণ বিদ্যমান নেই। ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে অনেক মাসআলার সমাধান করা হয়েছে।

যেহেতু আমরা ইজমা ও কিয়াসকেও শরয়ী দলীল মানি। তাই আমরা অনেক মাসআলা যা কুরআন ও হাদীসে পরিস্কার বর্ণিত হয়নি তা ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি।

আলোচিত মাসআলাটির সমাধানও কুরআন ও হাদীসে পরিস্কার বর্ণিত হয় নি। তাই আমরা এখন তৃতীয় দলীলের মাঝে উক্ত বিষয়টির প্রমাণ আছে কি না? তা দেখি।

হযরত আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌবীর রহঃ লিখেছেনঃ

 اما فى حق النساء فاتفقوا على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر، (السعاية-2/156

আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সকলেই ঐক্যমত্ব যে, তাদের ক্ষেত্রে সুন্নত হল তাদের উভয় হাতকে বুকের উপর রাখবে। {আসসিয়ায়াহ-২/১৫৬}

হযরত আতা রহঃ বলেন,

تجمع المرأة يديها فى قيامها ما ستطعت (مصنف عبد الرزاق-3/137

মহিলারা নামাযে দাড়ানো অবস্থায় তাদের হাতকে যতদূর সম্ভব গুটিয়ে রাখবে। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭}

সুতরাং মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধাটি ইজমা দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং এর প্রমাণ সরাসরি কুরআন ও হাদীসের বাহ্যিক শব্দে থেকে যাঁরা তালাশ করেন তাঁরা মূলত বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। আমাদের কাছে দলীল যেহেতু চারটি। সুতরাং আমাদের মাসআলা কুরআনে না থাকলে হাদীস দ্বারা, আর হাদীসে না থাকলে ইজমা বা কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে থাকে। এ মাসআলাটিও যেহেতু কুরআন ও হাদীসের বাহ্যিক শব্দের দ্বারা পাওয়া যায় না, তাই আমরা ইজমার আলোকে এ মাসআলার উপর আমল করে থাকি।

নামাজে মহিলাদের বুকের হাত বাঁধার ইজমা কবে কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছে?

কোন বিষয়ে ইজমা বা ঐক্যমত্ব হবার জন্য সবাই এক সাথে বসে কোন বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে বক্তব্য প্রদান করা আবশ্যক নয়। বরং একই সাথে কোন আমলে ধর্মপ্রাণ বিজ্ঞ উলামা ফুক্বাহাগণ কোন আমল শুরু করে দিলেও তা ইজমা বলেই গৃহিত হয়। যেমন-

জামাতে নামাযে ইমাম জোরে তাকবীর দেয়, আর মুসল্লিরা আস্তে আস্তে তাকবীর বলে থাকেন। কিন্তু মুসল্লিদের আস্তে আস্তে তাকবীর বলার স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসে কোন দলীল নেই। বরং এটি ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। যা কবে কোথায় হয়েছে? তা কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু সবাই ঐক্যমত্বের ভিত্তিতেই আমল করে যাচ্ছে।

ঠিক একই হালাত মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধার।

সহজ ভাষায় বুঝতে উদাহরণ দিচ্ছি- 

বর্তমানে মুসলমানগণ কয়েকটি প্রসিদ্ধ দলে বিভক্ত। এর মাঝে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক অনুসারী রয়েছেন চার মাযহাবের অনুসারীগণ। যথা-

১-হানাফী। ২-শাফেয়ী। ৩-মালেকী। ৪-হাম্বলী।

এছাড়া রয়েছে লা-মাযহাবী ও শিয়ারা।

লক্ষ্য করে দেখুন- হানাফী মহিলারাও নামাযে বুকের উপর হাত বাধে। শাফেয়ী মহিলারাও। হাম্বলী এবং মালেকী মহিলারাও। ঠিক একই আমল করে লা-মাযহাবী ও শিয়া মহিলারাও।

তাহলে মহিলাদের নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধা সবার “ইজমা” তথা ঐক্যমত্বের আমল, এতে সন্দেহ করার কোন সুযোগ আছে কি?

 অর্থাৎ মহিলাদের বুকে হাত বাঁধার আমল ইজমার দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। 

এটাতো প্রতিদিনকার উদিত হওয়া সূর্যের মতই পরিস্কার ইজমায়ী আমল। তো এখানে কবে কোথায় ইজমা হল এমন বোকামীসূলভ প্রশ্ন করার কী মানে থাকে? এতো দীবালোকের ন্যায় পরিস্কার ইজমা।

والله اعلم بالصواب 
0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
হযরত আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌবীর রহঃ লিখেছেনঃ
ﻰﻠﻋ ﺍﻮﻘﻔﺗﺎﻓ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ﻖﺣ ﻰﻓ ﺎﻣﺍ ﻰﻠﻋ ﻦﻳﺪﻴﻟﺍ ﻊﺿﻭ ﻦﻬﻟ ﺔﻨﺴﻟﺍ ﻥﺍ ،ﺭﺪﺼﻟﺍ)-ﺔﻳﺎﻌﺴﻟﺍ2/156
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সকলেই ঐক্যমত্ব যে, তাদের ক্ষেত্রে সুন্নত হল তাদের উভয় হাতকে বুকের উপর রাখবে। (আসসিয়ায়াহ-২/১৫৬)
হযরত আতা রহঃ বলেন,
:َﻝﺎَﻗ ٍﺀﺎَﻄَﻋ ْﻦَﻋ»ُﺓَﺃْﺮَﻤْﻟﺍ ُﻊَﻤْﺠَﺗ ْﺖَﻋﺎَﻄَﺘْﺳﺍ ﺎَﻣ ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﻗ ﻲِﻓ ﺎَﻬْﻳَﺪَﻳ»
মহিলারা নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের হাতকে যতদূর সম্ভব গুটিয়ে রাখবে। {হাদীস নং-৫০৬৭} সুতরাং মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধাটি ইজমা দ্বারা প্রমানিত।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
8 ডিসেম্বর, 2022 "কুরআন ও হাদিস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Hasanask
1 টি উত্তর
22 ডিসেম্বর, 2020 "ফতোয়া" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Md Noor Alom
0 টি উত্তর
1 টি উত্তর
24 অক্টোবর, 2023 "ফতোয়া" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন AyeshaSiddika
0 টি উত্তর
1 টি উত্তর
1 টি উত্তর
9 জানুয়ারি, 2022 "ফতোয়া" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Ikramul Tamim
1 টি উত্তর

34,053 টি প্রশ্ন

33,007 টি উত্তর

1,576 টি মন্তব্য

3,213 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
26 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 26 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 1729
গতকাল ভিজিট : 36222
সর্বমোট ভিজিট : 42774997
  1. MuntasirMahmud

    302 পয়েন্ট

    60 টি উত্তর

    2 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    105 পয়েন্ট

    20 টি উত্তর

    5 টি গ্রশ্ন

  3. Kuddus

    85 পয়েন্ট

    17 টি উত্তর

    0 টি গ্রশ্ন

  4. TeddyAhsan

    71 পয়েন্ট

    4 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. Sijan855

    68 পয়েন্ট

    1 টি উত্তর

    13 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...