ধূমকেতু হলো ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। এই বস্তু মূলত সৌরজগতের একটি ছোট্ট অংশ, যেটি সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘোরে। সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়লে তার একপাশে লম্বা আলোর রেখার মতো দেখা যায়, এই আলোটিকে লেজ বা ঝাড়ু বলা হয়ে থাকে। একটি ধূমকেতু সূর্যের যত কাছাকাছি থাকবে, ততই এর লেজ তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। পানি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আরও কিছু যৌগ বাষ্পীভূত হয়ে তৈরি করে।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, মহাকাশে ধূমকেতুর সংখ্যা ৩ হাজার ৭৪৩টি। ক্ষণস্থায়ী ধূমকেতুর প্রতি ঘূর্ণনকাল ২০০ বছরের নিচে হয়, আর দীর্ঘস্থায়ী ধূমকেতুর ক্ষেত্রে সেটা ২০০ বছরেরও অধিক। হ্যালির ধূমকেতু হলো বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ধূমকেতু। এটাকে মহাকাশে বলা হয়, কারণ এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ২০০ বছরের কম সময় নেয়। আজ থেকে হাজার বছর পূর্বেও মানুষ এই ধূমকেতু দেখত বলে জানা যায়। ব্যাবিলন, চীন এবং ইউরোপের পর্যবেক্ষকরা তখন হ্যালির ধূমকেতু দেখেছেন বলে, নথিপত্রে তা লিখে রেখেছেন। কখনো একে পরাজিত পক্ষের জন্য অশুভ আর কখনো বিজয়ী পক্ষের জন্য শুভ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যেমন ১০৬৬ সালে হেস্টিংসের যুদ্ধে ইংল্যান্ডের রাজা হ্যারল্ড দ্বিতীয় পরাজিত হন, উইলিয়াম দ্য কংকারের কাছে। ফলে কংকারের কাছে ধূমকেতুটি প্রতীয়মান হয় বিজয় চিহ্ন হিসেবে।
ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী 'এডমন্ড হ্যালি' সর্বপ্রথম এই ধূমকেতু সূর্যকে কেন্দ্র করে একবার ঘোরার সময়কাল বের করেন। তার নামানুসারেই এই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়। হ্যালির ধূমকেতুর লেজ লম্বায় এক লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, অথচ এর নিউক্লিয়াস আকারে অনেক ছোট, যেটি লম্বায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার, প্রস্থে ও পুরুতে ৮ কিলোমিটার।
১৯৮৬ সালে যখন শেষবার এটি দৃশ্যমান হয় তখন বিজ্ঞানীরা আকাশযান ব্যবহার করে এটি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান। এ সুযোগে পুরনো অনেক তথ্য ও ধারণা যাচাই করে নেওয়ার পাশাপাশি কিছু ভুল ধারণাও শুধরে নেওয়া সম্ভব হয়। যেমন আগে ধারণা ছিল এতে গলন্ত বরফের পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু এ পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয় আসলে এর পরিমাণ অনেক কম।প্রতি ৭৫ বছর পরপর খালি চোখে ধূমকেতু দেখা যায় পৃথিবী থেকে। এরপর ২০৬১ সালের ২৮ জুলাই আবার হ্যালির ধূমকেতুটি দেখা যাবে।