প্রাকৃতিক পরিবেশ আল্লাহতায়ালার অপরূপ সৃষ্টি। মহান আল্লাহতায়ালা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছপালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বতসহ অসংখ্য জিনিস সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের শরীয়তে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলাম এমন কোনো কাজ সমর্থন করে না, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। মহান রাব্বুল আলামিন আসমান জমিনের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত বানিয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফেও এ বিষয়টি মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন। পাহাড়কে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডা. ফ্রাংক প্রেস সর্বপ্রথম বলেছিলেন, পর্বতের অত্যন্ত গভীর শিকড় আছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। সত্যিকার অর্থে পর্বত একটি ভাসমান বরফ বা খুঁটির মতো। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, পৃথিবী অস্বাভাবিক উত্তপ্ত ছিল পাহাড় সৃষ্টির আগে। ধাপে ধাপে তাপ বিকিরণের কারণে পৃথিবীর ঠান্ডা হয় সঙ্গে সংকুচিত। ভূপৃষ্ঠের ভেতরে থাকা অতিরিক্ত চাপের কারণে তার কিছু কিছু অংশ উপরের দিকে ভাঁজ হয়ে ফুলে ওঠে। এই প্রক্রিয়ার পর্বত বা পাহাড় সৃষ্টি হয়।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে বড় প্লেটগুলো যখন পৃথিবীর উপর স্তরে চলে আসে, তখন তা পৃথিবীর উপর শক্ত স্তর সৃষ্টি করে। আর এ স্তরগুলোর নড়াচড়া, সংঘর্ষের ফলে উৎপত্তি ঘটে পর্বতমালা। যখন দুটি প্লেট পরস্পর ধাক্কা খায়, তখন শক্তিশালী প্লেট অন্য প্লেটের নিচে গড়িয়ে চলে যায় এবং অন্য প্ল্রটটিকে বেঁকে গিয়ে পর্বত উঁচু উঁচু জায়গা জন্ম দেয়। যে স্তরটি জমির নিচে চলে যায় তা আরও অগ্রসর হয়ে ভেতরের দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি পাহাড় পর্বত এর দুটি অংশ রয়েছে। একটি উপরের অংশ, যা সবার কাছে দৃশ্যমান। ঠিক তেমনি নিচের দিকে গভীরে এর সমপরিমাণ বিস্তৃত রয়েছে। যা আমাদের কাছে অদৃশ্যমান।
এবার আমরা চিন্তা করতে পারি, পাহাড় যদি সৃষ্টি না হতো বা যদি পাহাড় না থাকত তাহলে কি হতো? পাহাড় সৃষ্টি না হলে একটি সম্পূর্ণ প্লেট এর একপ্রান্ত থাকত আসমানের দিকে, আর অন্য প্রান্তগুলো থাকত ভূগর্ভের ভেতরে। অর্থাৎ তীর্যকভাবে, হেলে পড়া slope হিসেবে থাকত। এর ফলে জমিনের উপরে মানুষের বসবাস করতে অসুবিধা হতো। আবার এমনও হতে পারত যে, প্লেটগুলোর মধ্যে ক্রমান্বয়ে সংঘর্ষ হতে থাকত, কোনো ধরনের ভারসাম্য থাকত না। সুতরাং আমরা দেখতে পাই, পাহাড় সৃষ্টির মাধ্যমে প্লেটগুলোর মধ্যে ভারসাম্য ও জমিনের উপরে মানুষের বসবাসের অধিকতর সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এমন কোনো পাহাড়ের নেই, যার শিকড় ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে নেই। বরং আমরা দেখতে পাই যে কোথাও কোথাও পাহাড়ের দৃশ্যমান অংশের দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে প্রায় সাড়ে চার গুণ লম্বা অংশ মাটির অভ্যন্তরে রয়েছে। সাধারণভাবে আমরা যদি চিন্তা করি, পেরেক এর কাজ কি? এর কাজ হচ্ছে দুটি সারফেস এর মধ্যে এডজাস্টমেন্ট, সমন্বয় অথবা সাম্য অবস্থা তৈরি করা। একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগ তৈরি করা। পাহাড়ের প্লেটগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় অথবা সংযোগ তৈরি করে। আল্লাহ এই জন্যই পাহাড়কে সৃষ্টি করেছেন।
পাহাড় গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে মহাদেশগুলোর যে অংশটা মোটা বা পুরু, সেখানে সারি সারি পাহাড় রয়েছে এবং ওই স্থানের ভূপৃষ্ঠের শক্ত স্তর বা ক্রাস্ট ম্যান্টলের ভেতরে গভীরে ঢুকে যায়।
আসলে আধুনিক বিজ্ঞান এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা, মতামত দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এর হাজার বছর আগেই কোরআন এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান দান করেছে। কোরআনের একটি আয়াতে পাহাড়কে সরাসরি পেরেক এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ‘আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ ও পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ?’ (সুরা নাবা : ৬-৭)।
সুতরাং, আমরা বুঝতে পারলাম প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাহাড়ের ভূমিকা অপরিসীম। অবৈধভাবে পাহাড় কাটাসহ পাহাড় ধ্বংস হয়, এমন সব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। কারণ পাহাড়ের সঙ্গে পরিবেশের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। পাহাড়কে সম্মান করা আমাদের কর্তব্য- আমিন।