বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের মতোই, একগুচ্ছ ধূলিকণা এবং গ্যাসের সংঘর্ষের ফলে। প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, সৌরজগৎের কেন্দ্রে একটি বিশাল মেঘের মতো বস্তু ছিল। এই মেঘটিতে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, এবং অন্যান্য বিভিন্ন গ্যাস এবং ধূলিকণা ছিল। এই মেঘের কেন্দ্রে মহাকর্ষের প্রভাবে তাপমাত্রা এবং চাপ বাড়তে থাকে। এর ফলে মেঘটি সংকুচিত হতে শুরু করে এবং গতিবেগ বাড়তে থাকে। একসময় মেঘটি এতটাই সংকুচিত হয়ে যায় যে, তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে,হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস সংযোজিত হয়ে হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে। এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আরও বড় পরমাণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় নিউক্লিয়োসিনথেসিস।
নিউক্লিয়োসিনথেসিসের ফলে সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের গঠন শুরু হয়। সূর্য হল সৌরজগতের কেন্দ্রীয় গ্রহ। সূর্যের চারপাশে ঘোরে অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ। পৃথিবীও সূর্যের চারপাশে ঘোরে।
পৃথিবী সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ছিল একটি গলিত অবস্থায়। পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে লোহা ছিল। লোহার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এটি নিচে নেমে গিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি লোহার কেন্দ্র গঠন করে। পৃথিবীর উপরের অংশে ছিল পাথর এবং অন্যান্য উপাদান।
পৃথিবীর গলিত অবস্থা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে। ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর উপরের অংশে শক্ত পাথরের আবরণ তৈরি হতে থাকে। এই আবরণকে বলা হয় ভূত্বক।
পৃথিবীর গঠনের পর থেকে এটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। টেকটোনিক প্লেটগুলির নড়াচড়ার ফলে পৃথিবীর ভূখণ্ডের আকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলেও পৃথিবীর ভূখণ্ড পরিবর্তিত হচ্ছে।
পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রথম প্রাণীরা অক্সিজেন তৈরি করে। এই অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণে পৃথিবীতে জটিল প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটে।
পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, জল, এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণগুলি প্রাণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।